অবাধেই ফাটল শব্দবাজি
রাত বাড়তেই অতিষ্ঠ শহর থেকে শহরতলি
রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী বলছেন, “এ রকম আওয়াজ তো লক্ষ্মীপুজোর সময়েও হয়!” নগরপাল বলছেন, “গত বছর যদি একশো শতাংশ শব্দবাজি ফাটে, তবে এ বছর দশ শতাংশ ফেটেছে।” কালীপুজোর রাতে তাঁদের এই ‘জোড়া আত্মবিশ্বাসী’ প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে কিন্তু মিলল না কলকাতা ও শহর-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা। রাত যত গড়াল, তত বাড়ল শব্দবাজির দৌরাত্ম্য। রাত সাড়ে বারোটার সময়ে সল্টলেকের এক বাসিন্দা বললেন, “মনে হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রে আছি।”
রাত দেড়টাতেও সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ এলাকায় চলছিল ইতস্তত শব্দবাজি ফাটানো। সন্ধের দিকে অনেকে বলেছিলেন, শহর এলাকায় শব্দের দাপট তুলনায় কম। কিন্তু রাত বাড়তেই শব্দবাজির উৎপাতে উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ কলকাতা সমান অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বারবার থানায়, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে অভিযোগ জানিয়েছেন। একটাই উত্তর এসেছে ‘ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ কিন্তু কাজের কাজ যে কিছুই হয়নি, তার প্রমাণ হাসপাতালের সামনে শব্দবাজির রমরমা। শরৎ বোস রোডের রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান, বাঙুর হাসপাতালের সামনেও শব্দবাজি ফেটেছে বলে অভিযোগ। দেদার বাজি ফেটেছে কসবার হালতু, বোসপুকুর অঞ্চলে। সব চেয়ে করুণ অবস্থা হয়েছে কলকাতা পুলিশের নতুন সংযোজিত এলাকা এবং কলকাতা-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের। সল্টলেক ছাড়াও লেকটাউন, দমদম পার্ক, বাঙুর, বাগুইআটি রাতের দিকে সর্বত্র কার্যত ‘যুদ্ধক্ষেত্রেরই’ আবহ। এমনকী লেকটাউনের আবাসনেও প্রচুর শব্দবাজি ফেটেছে বলে অভিযোগ এসেছে।
বেহালায় পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদার ও কলকাতার
পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা। বুধবার।-নিজস্ব চিত্র
অথচ রাত ন’টা নাগাদ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বেরোনো পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদারের উপলব্ধি ছিল, ‘এ বার কলকাতার নাগরিক অনেক বেশি সচেতন।’ বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, থিয়েটার রোড হয়ে সল্টলেক-লেকটাউনের দিকে যাওয়ার কথা ছিল পরিবেশমন্ত্রীর। সঙ্গে ছিলেন পরিবেশ দূষণ বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয়কুমার দত্ত। কিন্তু মাঝরাস্তাতেই বেহালা থেকে শব্দবাজি ফাটার অভিযোগ আসে তাঁর কাছে। মন্ত্রী তখন সে দিকেই রওনা দেন। পরপর আসে আরও বেশ কয়েকটি অভিযোগ। মন্ত্রীর অবশ্য বক্তব্য ছিল, প্রতিটি অভিযোগের ক্ষেত্রেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাসবিহারী মোড়ে এসে তিনি বলেছিলেন, “কালীপুজোর রাতে রাত ন’টার সময় এ সব জায়গায় কান পাতা দায়। কিন্তু কোথায় সে রকম বাজির আওয়াজ?” আর বেহালা থানায় পৌঁছে তাঁর ওই লক্ষ্মীপুজোর সঙ্গে তুলনা টানা। মন্ত্রীর উপলব্ধি এ রকম বাজি ক্লাব ফুটবল টুর্নামেন্ট জিতলেও ফাটে!
অথচ ওই বেহালারই সেনহাটি, রায়বাহাদুর রোডের বাসিন্দারা সন্ধে থেকেই শব্দবাজির ঠেলায় অস্থির। অভিযোগ আসছিল নিউ আলিপুরের কয়েকটি জায়গা থেকেও। বেহালা চৌরাস্তার কাছে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয় কলকাতা পুলিশের কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দার। রঞ্জিতবাবু বলেন, “কলকাতা পুলিশের সংযোজিত এলাকা থেকে শব্দবাজি ফাটার অভিযোগ বেশি পাওয়া গিয়েছে।” আর উত্তর চব্বিশ পরগনার বিধাননগরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রণেন বন্দ্যোপাধ্যায় রাতে জানান, “আমরা এখনও পর্যন্ত ২৯ জনকে গ্রেফতার করেছি। তার মধ্যে ২৫ জন লেকটাউন এলাকার, ৪ জন সল্টলেক এলাকার। নিষিদ্ধ শব্দবাজি উদ্ধার হয়েছে ৬০ কেজি।” শহর কলকাতায় রাত পর্যন্ত অন্তত ৭০ জন গ্রেফতার হয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
পরিবেশমন্ত্রী আগেই জানান, কালীপুজোর রাতে সরেজমিন পরিস্থিতি দেখতে বেরোবেন। বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে মন্ত্রী রাস্তায় রইলেন সাকুল্যে দেড় ঘণ্টা। তখনই বলেছিলেন, “গোটা শহরে শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগের সংখ্যা ৭০টির মতো। শব্দবাজির দাপট এতটাই কম যে রাজপথে দূর থেকে ভেসে আসা রবীন্দ্রসঙ্গীতও শোনা যাচ্ছে।”
গভীর রাতের পরিস্থিতি কিন্তু মন্ত্রীকে ভুল প্রমাণ করেই ছেড়েছে!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.