সম্পাদকীয় ১...
গোড়ায় গলদ
শ্চিমবঙ্গের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা শুনিলে খুশি হইবেন যে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা, কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ আচরণ ইত্যাদি সংক্রান্ত অভিযোগগুলি লইয়া এখন আরও অনেকেই মুখর। সদ্যসমাপ্ত জাতীয় উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠকে এই অভিযোগই মূল সুর ছিল। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম জয়ললিতা বলিয়াছেন, কেন্দ্র দেশের রাজ্যগুলির সঙ্গে প্রায় পুরসভার ন্যায় আচরণ করে! বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বলিয়াছেন, কেন্দ্র এমন ভাবে রাজ্যগুলির হাত বাঁধিয়া রাখে যে তাহাতে উন্নয়নমূলক কর্মসূচির মারাত্মক ক্ষতি হয়। নরেন্দ্র মোদীও কেন্দ্রীয় সরকারকে হুঁশিয়ার করিয়া দিয়াছেন দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো লইয়া ছেলেখেলা করা চলিবে না। কেন্দ্রের প্রতি ক্ষোভ, অতএব, স্পষ্ট। ক্ষোভটি আজকের নহে, তাহার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। কিন্তু, যে কারণে ক্ষোভ জন্মিবার কথা, সেই কারণটি কখনও স্পষ্ট ভাবে উচ্চারিত হয় নাই। অতীতেও নহে, এখনও নহে। কেন্দ্র যথেষ্ট টাকা দেয় না, তাহা ক্ষোভের প্রধান কারণ হইবে কেন? প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন কেন্দ্র কেন আদৌ টাকা বরাদ্দ করিবার মালিক হইবে? প্রশ্ন করা প্রয়োজন যে দেশ সাংবিধানিক ভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয়, সেই দেশে কেন্দ্র কেন এই অসম ক্ষমতার অধিকারী হইবে? কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই এই প্রশ্নটি করেন নাই। গত শতকের আশির দশকে যখন বিভিন্ন রাজ্যের জোট বা ‘কনক্লেভ’ গড়িয়া উঠিয়াছিল, তখনও এই প্রশ্নটি অনুচ্চারিতই ছিল।
অথচ, এই প্রশ্নটিই করিবার। উন্নয়ন পর্ষদের বর্তমান বৈঠকটির উপলক্ষ ছিল, দ্বাদশ যোজনার ‘অ্যাপ্রোচ পেপার’-টি পাশ করাইয়া লওয়া। যোজনা কমিশন ঠিক করিয়া দিবে, কোন রাজ্যের ভাগে (না কি, ভাগ্যে) কত অর্থ জুটিবে। কেহ প্রশ্ন করেন নাই, এই অধিকার যোজনা কমিশনকে কে দিল? ভারতের সংবিধান দেয় নাই, কারণ এই প্রতিষ্ঠানটি সংবিধান-বহির্ভূত। নেহাতই সাময়িক প্রয়োজনে গড়িয়া ওঠা এই প্রতিষ্ঠানটি, তাহার জন্মগত কারণেই, সংবিধান অনুসারে চলিতে বাধ্য নহে। প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণতই কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন। এই প্রতিষ্ঠানটি যদি কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের নির্ধারক হয়, তাহার ফল কী হইতে পারে, অনুমান করা সম্ভব। অবশ্য, অনুমানের প্রয়োজন নাই, ভারতের অঙ্গরাজ্যগুলিতে তাহার বাস্তব প্রমাণ প্রচুর। অন্য দিকে, অর্থ কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে আর্থিক বণ্টনে যাহাতে সাযুজ্য থাকে, তাহা নিশ্চিত করিতেই প্রতিষ্ঠানটি তৈরি হইয়াছিল। কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য বেশ কয়েক বার অর্থ কমিশনের সুপারিশ অমান্য করিয়াছে। কেন্দ্রের এই অধিকার লইয়াও প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন। রাজস্ব বণ্টন লইয়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যে প্রশ্ন তুলিয়াছেন, তাহা অতি জরুরি। কেন্দ্রীয় সরকার সত্যই বিভিন্ন কারসাজি করিয়া রাজ্যগুলিকে তাহার হকের রাজস্ব হইতে বঞ্চিত করিয়াছে। আয়করের উপর সারচার্জের ক্ষেত্রে যেমন। আবার, আমদানি শুল্কের ন্যায় রাজস্বে কেন্দ্রেরই সম্পূর্ণ অধিকার। ভ্যাট বা জি এস টি-র ক্ষেত্রে এই অসাম্য যাহাতে না থাকে, রাজ্যগুলির কথা যাহাতে শোনা হয়, তাহা নিশ্চিত করিতেই হইবে।
কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের এই গোড়ায় গলদ লহিয়া কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন নাই কেন? অনুমান করা সম্ভব, ইহা ভারতীয় চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। আমরা আমূল পরিবর্তনে বিশ্বাসী নহি, কিছু ফেলিবার পক্ষপাতী নহি। যাহা আছে, সকলই রাখিয়া দেওয়াই আমাদের স্বভাব। ফলে, ভারতে এখনও সতী মন্দির আছে, গরুর গাড়ি আছে, মলবাহক পেশায় মানুষ আছেন। কেন্দ্রের সহিত রাজ্যগুলির যে সম্পর্ক দেশ স্বাধীন হওয়া ইস্তক চলিয়া আসিতেছে, তাহা যতই তিক্ত হউক না কেন, তাহাকে সমূলে উচ্ছেদ করিবার কথা আমরা ভাবিতে পারি না। সেই কারণেই যোজনা কমিশনকে বিদায় দেওয়ার কথা কেহ বলেন না, কেন্দ্রের অন্যায্য ক্ষমতার প্রতিবাদ করেন না। চলতি ব্যবস্থা হইতেই রাজ্যের জন্য যতটুকু সুবিধা আদায় করিয়া লওয়া যায়, তাহাই যেন মোক্ষ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.