মাতা নন, এই মন্দিরে দেবী কন্যারূপে পূজিতা।
দুই শতাধিক বর্ষের সেই রীতি আজও আঁকড়ে ধরে রয়েছে বর্ধমানের ভৈরবেশ্বরী কালী মন্দির।
প্রাচীন এই মূর্তিটি নিম কাঠের তৈরি, জানান মন্দিরের প্রধান পুরোহিত সুকুমার ভট্টার্চায।
বর্ধমানের রাজাদের আগ্রহে এই মূর্তি তৈরি হয়েছিল। এমনকী এই মন্দিরের পুরোহিতও রাজাদের লক্ষ্মীনারায়ণজিউ মন্দির থেকে নিয়ে আসা হয়। রাজাদের আত্মীয় বিভূতিচন্দ কপুর, উমাপদ ভট্টাচার্যকে এই দায়িত্বে বহাল করেছিলেন।
নিম কাঠের তৈরি এই মূর্তির উচ্চতা ৪ ফুট। কালীপুজোর সময়ে এই কন্যাসমা দেবীকে ভোগ দেওয়া হয় মাংস, টক দই, রাজভোগ, পনিরের তরকরি ও পোলাও। পুজোর দিনে তাঁর অঙ্গে ওঠে নানা স্বর্ণলাঙ্কার। শোনা যায়, বর্ধমানের রাজাদের পরমাত্মীয় ভৈরবচন্দ কাপুর ছিলেন নিঃসন্তান। দেবী তাঁকে স্বপ্নে এই সন্তানহীনতার জন্য সান্ত্বনা দিয়ে আদেশ দেন, তাঁকেই ভৈরবচন্দ যেন নিজের কন্যা বলে ভাবেন। |
তাঁকে কন্যারূপে পুজো করেন। স্বপ্নাদেশ পেয়েই বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরের কাছে ওই কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ভৈরবচন্দ। সেই থেকে এই মন্দীরের অবস্থিতা দেবী সকলের কাছে কন্যাসমা। ভৈরবচন্দের নামেই এই মন্দিরে দেবী ভৈরবেশ্বরী বলে পরিচিত। তবে ২০০ বছরের পুরনো এই মন্দির ক্রমে জীর্ণ হয়ে পড়ছে। কালের কবলে পড়ে এক দিন হয়তো এমনি করেই বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাবেন দেবী। একদার জাঁকজমকের কথা রয়ে যাবে শুধু স্মৃতির পাতায়।
রাজাদের প্রতিষ্ঠিত অন্যতম কালীমন্দির রয়েছে মিঠাপুকুরে। সেখানে মূর্তির জিভ সোনার তৈরি। কালীসাধনার অপর এক পীঠ হল বর্ধমানের কমলাকান্ত কালীবাড়ি। সেখানে সাধকের পঞ্চমুণ্ডির আসন রয়েছে। কথিত রয়েছে, সাধক কমলাকান্ত রাজা তেজচন্দকে আমাবস্যার দিন যোগবলে পূর্ণচন্দ্র দেখিয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশ মাথা পেতে নিয়ে বর্ধমানের রাজা প্রতাপচন্দ নিজের সাজা হিসেবে অজ্ঞাতবাস মেনে নেন। সেই পুজোই অবশ্য এখন শহরের অন্যতম প্রধান কালীপুজো। |