নবসাজে
জলপাইগুড়ি রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে মন্দিরের গর্ভগৃহে কাঠের বেদিতে বসানো ফ্রেমে বাঁধানো মা সারদা-র ছবি। দুর্গাপুজো আসলেই প্রতি বছর তা সাজিয়ে তোলার আয়োজন করা হয়। কাঞ্জিভরম, বেনারসি বা সাউথ ইন্ডিয়ান সিল্কের অঙ্গাবরণে এমন জমক না হলেই নয়। প্রিয় ভক্তদের চাহিদাও তেমনই। যেমন, এ বার পুজোর কথাই ধরা যাক। কলকাতার নামী-দামি বস্ত্রবিপণি থেকে নিয়ে আসা হয়েছে বেনারসি, কাঞ্জিভরম, সাউথ ইন্ডিয়ান সিল্ক। পঞ্চমীর দিন পরানো হয় যে-শাড়ি, তার লাল রঙের জমি জুড়ে সোনালি বুটি, পাড় ও আঁচলে সোনালি জরির কাজ। ষষ্ঠীর দিন সাজের পরিবর্তন হয় বেনারসিতে, আকাশি জমির শাড়ির পাড়ে রুপোলি রঙের পাড়। সপ্তমীতে শোভা পাচ্ছিল নীল রঙের বেনারসি। অষ্টমীতেও মায়ের পরনে ছিল বেনারসি। গোলাপি রঙের কাঞ্জিভরম পরানো হয়েছিল নবমীর দিন, যার আঁচল ও জমি জুড়ে সোনালি জরির কাজ। দশমীর সাজ সম্পূর্ণ হয় বেনারসিতেই। সাধারণত রাতে গর্ভগৃহের দরজা বন্ধ হওয়ার পর মা’কে এই নববস্ত্র পরানোর আয়োজন করা হয়। আশ্রমের সম্পাদক স্বামী অক্ষয়ানন্দজি মহারাজ জানালেন, বিশেষ বিশেষ দিনে মা সারদা’কে শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে তোলার এই রীতি আগেই ছিল। আগে একটি বা দু’টি শাড়ি ভক্তদের কাছ থেকে পাওয়া যেত। এ বছরই অনেকগুলি শাড়ি পাওয়া গিয়েছে। তাই শুধু পুজোর দিন নয়, লক্ষ্মী পুজোতে ও মা’কে নববস্ত্র পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কালীপুজোতেও মাকে এ ভাবেই সাজানো হবে।

বাতাসা গলি
বাতাসা তৈরির ছবি: অনিতা দত্ত
দশমীর মেলা, হুজুর সাহেবের মেলায় গেলেই তার দেখা মেলে। হরেক কৌটোয় নানা রকমের বাতাসা, কদমা, মট, নকুলদানার সম্ভার। না, শুধু সুশান্ত পাল-ই নন, তাঁর বাবা-ঠাকুরদা-জ্যাঠা-কাকারাও কদমা বাতাসা বানিয়ে বিক্রি করতেন। জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়ার যেখানে তাঁরা এই কাজ করতেন, সেই সুবাদে সেখানকার নাম হয় বাতাসা-গলি। এই ডাকেই শহরের বাসিন্দারা চেনেন। দুর্গা, লক্ষ্মী, বিশ্বকর্মা থেকে কালীপুজো কিংবা পৌষ পার্বণের সময় চাহিদা বেশি। তাই, তখন দিনে দুই থেকে আড়াই কুইন্টাল বানান। বছরের অন্য দিনগুলিতে এক থেকে দেড় কেজি। বাজারের বিভিন্ন দোকানে তা সরবরাহ করা হয়। কী ভাবে তৈরি হয় এই বাতাসা? বাতাসা-ব্যবসায়ী সুশান্তবাবু জানান, গরম চিনির রস ডাব্বু (বড় হাতা)-র মধ্যে নিয়ে কাঠির সাহায্যে চাটাইয়ের ওপর ফোঁটা-ফোঁটা করে ফেলা হয়। পাঁচ থেকে ছয় মিনিট পরেই তৈরি হয়ে যায় বাতাসা। লাল বাতাসা তৈরি করতে চিনির সঙ্গে মেশাতে হয় আখিগুড়। বিভিন্ন পশুপাখির আদলে তৈরি কাঠের সাজে গরম চিনির রস ঢেলে বানানো হয় রকমারি মট। সামান্য এক চিনির মিষ্টি বাতাসা থেকেই শহরের একটি রাস্তার নাম হয়ে গেল বাতাসা-গলি।

চলচ্চিত্র বুঝতে
চলচ্চিত্র একটি শিল্পমাধ্যম। আর সেই শিল্পমাধ্যমের ভাষা বিবিধ। কখনও তা মনে জন্ম নেওয়া কিছু ইমেজের প্রতিফলন, কখনও তা সমাজেরই প্রতিচ্ছবি (তাই কোনও কোনও সময় চলচ্চিত্রকে সমাজের চলচ্ছবিও নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে)। আবার কখনও তার সঙ্গে যুক্ত হয় কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, ডিজিটাল টেকনোলজি ও সাইবারনেটিক্স। আর এই সামগ্রিক চালচিত্রের হদিশ দিতেই শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চের রামকিংকর সভাঘরে শিলিগুড়ি সিনে সোসাইটি ২-৪ সেপ্টেম্বর আয়োজন করেছিল ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স। সহযোগিতায় ছিল ফিল্ম ফেডারেশন সোসাইটি অব ইন্ডিয়া এবং ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভ অব ইন্ডিয়া। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, বালুরঘাট, জয়গাঁ এক কথায় সমস্ত উত্তরবঙ্গের চলচ্চিত্র উৎসাহীরাই এতে যোগ দিয়েছিলেন। প্রায় একশো জন শিক্ষার্থীকে চলচ্চিত্রের নানা ভাষা, যেমন ক্যামেরা, অ্যাঙ্গেল, শট ডিভিশন, পরিচালনার খুঁটিনাটি, সিনেমার সাবজেক্ট, পরিচালকের দৃষ্টিতে চলচ্চিত্রের বিষয় নির্বাচন ইত্যাদি যত্ন করে শেখান চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ মিহির ভট্টাচার্য এবং চলচ্চিত্র পরিচালক শেখর দাস। তিন দিনের স্বল্প সময়েও বিশ্ব সিনেমার ইতিহাস, চলচ্চিত্রের তত্ত্বগত দিক, সিনেমা ও তার আধুনিকোত্তর সময়, ফিল্ম আর্কাইভের ভূমিকা, সংস্কৃতির জনপ্রিয় অঙ্গ হিসেবে সিনেমার ভূমিকা ও প্রাসঙ্গিকতা শিক্ষার্থীরা এই সব প্রাথমিক ধারণায় সমৃদ্ধ হন। সিনেমার ভাষা বোঝানোর প্রয়োজনে প্রদর্শিত হয় গুরু দত্তের ‘পিয়াসা’, বিশাল ভরদ্বাজের ‘ওমকারা’, চার্লি চ্যাপলিনের ‘মডার্ন টাইমস’, ডি সিকা-র ‘বাইসাইকেল থিভস’, শেখর দাসের ‘ক্রান্তিকাল’, ‘নেকলেস’ প্রভৃতি ছবি। বালুরঘাট সিনে অ্যান্ড ফোটোগ্রাফি সোসাইটি-র পক্ষে কোর্সে যোগ দেন তুষারকান্তি দত্ত। তাঁর কথায়, ‘চলচ্চিত্রের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে সম্যক জানতে পারলাম’। আয়োজক শিলিগুড়ি সিনে সোসাইটির সভাপতি সঞ্জীবন দত্তরায়, সম্পাদক প্রদীপ নাগ বলেন ‘ভবিষ্যতে উত্তরের প্রতিভাদের উৎসাহ দিতে আমরা আরও এই ধরনের কাজে উদ্যোগী হব’। ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্সে এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ফিল্ম ফেডারেশন সোসাইটি অব ইন্ডিয়া-র আঞ্চলিক সম্পাদক শংকর পাল, ন্যাশনাল আর্কাইভস অব ইন্ডিয়া-র পক্ষে সোমনাথ সরকার ও অনেকেই।

বাঁশবাড়ির কালী
হলদিবাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে গ্রামডোবা। গ্রামডোবার বাসিন্দা নগেন্দ্রনাথ রায়ের পারিবারিক মন্দির ‘বাঁশবাড়ি কালীমন্দির’ হলদিবাড়িতে অবস্থিত। এই এলাকায় এক সময় বিরাট বাঁশঝাড় ছিল। জনশ্রুতি, রায় পরিবারের সদস্য যোগেশচন্দ্র রায়কে দেবী স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন, তিনি বাঁশঝাড়ের নীচে আছেন। সেখান থেকে উঠিয়ে তাঁকে যেন প্রতিষ্ঠা করা হয়। যোগেশচন্দ্র ওই অঞ্চলে সাতটি পাথর খুঁজে পেয়েছিলেন। ওই পাথরগুলিকে তিনি টিনের ঘরের মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। এঁরা চণ্ডী, তারা, শ্মশান, বসন্ত, দুর্গা, রক্ষা এবং ভদ্রা রূপে পূজিত হয়ে আসছেন। প্রায় দু’বিঘা জমির মাঝখানে মন্দিরটি অবস্থিত। এক সময় নৈবেদ্য দেওয়া হত দই-চিড়ে দিয়ে, এখন নিত্য পুজো হয়। আজ থেকে প্রায় বত্রিশ বছর আগে জনৈক সীতারাম ঝা পাকা মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন। প্রতি বছর কালীপুজোর সময় মন্দিরে বাৎসরিক উৎসব হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.