সরকারি হাসপাতালগুলি ‘নেই-রাজ্য’
শিশুদের অস্ত্রোপচারে বাধা পরিকাঠামোর অভাব
খাস কলকাতায় বিকেলের পরে কোনও শিশুর জরুরি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হলে সরকারি ক্ষেত্রে পরিষেবা না-পাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। জেলা থেকে উন্নত পরিষেবার আশায় এখানে দৌড়ে আসা মানুষের হাসপাতালে-হাসপাতালে ঘোরাই হয়তো সার হবে!
যে শহরে পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ এবং রাজ্যের একমাত্র শিশু ‘রেফারাল’ হাসপাতাল আছে, সেখানে কেন এই অবস্থা?
চিকিৎসক-চিকিৎসাকর্মীর অভাব দেখিয়ে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের শিশু-শল্য বিভাগে কোনও জরুরি অস্ত্রোপচার হয় না। একই কারণে বিকেল চারটের পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিসি রায় শিশু হাসপাতাল অস্ত্রোপচারের জন্য ইমার্জেন্সি থেকে শিশুদের ভর্তি করে না। এসএসকেএমে চাহিদার তুলনার শিশু-শল্য বিভাগের শয্যা এত কম যে ভর্তি হওয়া দুঃসাধ্য। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে শিশু-শল্য বিভাগে সারা দিন ইমার্জেন্সি অস্ত্রোপচার হলেও রাতে চিকিৎসক ও অ্যানাস্থেটিস্টের অভাবে কোনও অস্ত্রোপচার হয় না। দিনেও সেখানে অন্য মেডিক্যাল কলেজ থেকে রেফার হয়ে আসা শিশুদের সংখ্যা এত বেশি যে, জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য কতক্ষণ বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকতে হবে, কেউ জানে না।
কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে রেফার করা কমাতে জেলার হাসপাতালগুলির পরিষেবা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে প্রশ্ন উঠেছে, মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামোর যদি এই শোচনীয় দশা হয়, তা হলে জেলা হাসপাতাল আর কী দোষ করল? জেলায় পরিষেবা না-পেয়ে অসুস্থ শিশুদের কলকাতায় এনেও ঘুরতে হচ্ছে এক মেডিক্যাল কলেজ থেকে অন্য কলেজে।
অথচ স্বাস্থ্যভবন জানাচ্ছে, তারা অসহায়। রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সব জানি। কী করব? ডাক্তার পাচ্ছি না। শিশু শল্যচিকিৎসকের আকাল। তাই স্নাতকোত্তরে আসন বাড়াতে চাইছি।”
কিছু দিন আগে নীলরতনের শিশু-শল্য বিভাগের চিকিৎসকেরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্যভবনে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, আরজিকর, ন্যাশনাল মেডিক্যাল, মেডিক্যাল, বিসি রায় প্রতিদিন তাঁদের কাছে শিশুদের রেফার করছে। দিনে ১৩-১৪টি জরুরি অস্ত্রোপচার করেও পরিস্থিতি সামলাতে পারছেন না তাঁরা। রাতে তাঁদের হাসপাতালেও জরুরি অস্ত্রোপচার হয় না। ফলে আরও বেড়েছে জটিলতা। চিঠিতে তাঁরা বলেছেন, শয্যা ছাপিয়ে মেঝে-বারান্দায় শিশুদের রাখতে হচ্ছে। প্রত্যেকের ইমার্জেন্সি অস্ত্রোপচার দরকার। কিন্তু কখন তা করা যাবে, কেউ জানেন না।
যে সব হাসপাতাল রেফার করছে তারাও জানিয়েছে, এ ছাড়া তাদের সামনে আর পথ নেই। যেমন, রাজ্যে শিশুদের একমাত্র রেফারাল হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও বিসি রায়ে শিশু-শল্যের মাত্র দু’জন আরএমও রয়েছেন। এক জন আচমকা ছুটি নিলে বিভাগের কাজকর্মই বন্ধ হয়ে যায়। অ্যানাস্থেটিস্টও মাত্র দু’জন। ফলে বিকেলের পরে আর ইমার্জেন্সি রোগী-ভর্তি বা অস্ত্রোপচার করা যায় না। দূরদূরান্ত থেকে আসা শিশুদের সঙ্গেসঙ্গে এনআরএসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মেডিক্যালের শিশু-শল্য বিভাগের প্রধান সুকান্ত দাসের বক্তব্য, “লোক কম বলে আমাদের ইমার্জেন্সি থেকে ২৪ ঘণ্টা ভর্তির ব্যবস্থা নেই। বিকেলের পরে একটু অসুবিধা হয়। কিন্তু সকালেও কিছু ইন্টার্ন ইমার্জেন্সি থেকে বাচ্চাদের এনআরএসে পাঠাচ্ছেন। এটা অন্যায়।”
আর জি কর ও ন্যাশনাল মেডিক্যালের অবস্থা আরও শোচনীয়। খাতায়-কলমে এখানে শিশু শল্য বিভাগ থাকলেও সেখানে অস্ত্রোপচার কার্যত হয় না। আরজিকর কর্তৃপক্ষ স্পষ্টই বলেন, “আমাদের শিশু-শল্য বিভাগে দু’জন প্রোফেসর এবং এক জন আরএমও। শয্যা মাত্র ১০টি। তাই এখানে শুধু কোল্ড কেস হয়। ইমার্জেন্সি কেস নিই না। এনআরএসে রেফার করা হয়।” একই বক্তব্য ন্যাশনাল মেডিক্যালের সুপার পার্থ প্রধানের। তাই, বিকেলের পরে শহরে কোনও শিশুর জরুরি অস্ত্রোপচার দরকার হলে সরকারি হাসপাতালের দরজা তার কাছে কার্যত রুদ্ধ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.