|
|
|
|
উড়িয়ে দিলেন অসীমের দাবি |
বকেয়া মহার্ঘভাতা এখনই নয়, জানালেন অর্থমন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজ্যের কোষাগারের হাল ফিরলেই মিলবে বকেয়া মহার্ঘভাতা। যদিও তা কবে, দীপাবলির আগে সেই সুখবর জানাতে পারলেন না রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তবে তিনি ফের দাবি করেছেন, বাড়তি অর্থের সংস্থান করতে পারলেই সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘভাতা মিটিয়ে দেওয়া হবে।
রাজ্যের প্রায় ১০ লক্ষ সরকারি কর্মচারীর ২৩ শতাংশ মহার্ঘভাতা বাকি রয়েছে। পাওনা মহার্ঘভাতার দাবিতে সরকারি দফতরগুলিতে পোস্টারও পড়েছে। কিন্তু রাজ্যের এখন যে রকম ‘নুন আনতে পান্তা ফুরানো’ অবস্থা, তাতে মহার্ঘভাতা মিটিয়ে দেওয়ার আশা দিতে পারছেন না অর্থমন্ত্রী।
এর মধ্যে আবার রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত অভিযোগ করেছেন, আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য কেন্দ্রকে অসত্য তথ্য দিচ্ছে রাজ্য সরকার। সেই অভিযোগের জবাব দিতে মঙ্গলবার মহাকরণে সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন অমিতবাবু। রাজ্যের বেহাল কোষাগারের জন্য পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, “বামফ্রন্ট সরকারের আমলেও সরকারি কর্মীদের ১৬ শতাংশ মহার্ঘভাতা বকেয়া ছিল। কিন্তু তারা তা মিটিয়ে যায়নি। নতুন সরকারের ঘাড়েই সেই বোঝা চাপিয়ে দিয়ে গিয়েছে।” তিনি জানান, এ বছর জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় সরকার ফের ৭ শতাংশ মহার্ঘভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করায় বকেয়া মহার্ঘভাতার অঙ্ক গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬,৯০০ কোটি টাকায়। তার মধ্যে আগের সরকারের দিয়ে না-যাওয়া প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকাও রয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, প্রতি মাসে এক শতাংশ মহার্ঘভাতা দিতে গেলে রাজ্য সরকারকে বাড়তি ২৫ কোটি টাকার সংস্থান করতে হবে। এই মুহূর্তে যা অসম্ভব। তবে নতুন সরকার দায়িত্বে এসেই সরকারি কর্মীদের অন্যান্য পাওনা বাবদ ৮০০ কোটি টাকা মিটিয়ে দিয়েছে। কঠিন আর্থিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কর্মীদের মাস পয়লায় বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। আগের সরকারের আমলে যা মাসের ১৫ তারিখেও মিলত না। অমিতবাবু বলেন, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কর্মীদের মহার্ঘভাতা মিটিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের সম্পূর্ণ সদিচ্ছা আছে। অর্থের সংস্থান হলেই তা মিটিয়ে দেওয়া হবে।”
তবে রাজ্যের রাজস্ব আদায়ের বৃদ্ধির হার নিয়ে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন অমিতবাবু। তাঁর দাবি, ‘ভোট অন অ্যাকাউন্ট’-এ গত আর্থিক বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল, সে দিকেই এগিয়ে চলেছে রাজ্য সরকার। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীকে ‘আশ্বস্ত’ করে তিনি বলেছেন, অগস্ট মাসেই রাজ্যের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির হার প্রায় ২০ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছে। অর্থ বিলে রাজস্ব আদায়ের যে প্রস্তাবগুলি রাখা হয়েছিল, তা বাজারে সক্রিয় ভাবে কাজ করতে শুরু করেছে। ফলে এই বৃদ্ধির হার আগামী দিনে লক্ষ্যের কাছে পৌঁছে যাবে বলে তিনি দাবি করেন। অমিতবাবু বলেন, কর আদায় ব্যবস্থায় নতুন সরকার যে আমূল সংস্কার নিয়ে এসেছে, তাতে দারুণ সাড়া পাওয়া গিয়েছে। রাজস্ব আদায় বাড়ছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি বোঝাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, রাজ্যের এক টাকা আয়ের ৯৪ পয়সাই চলে যায় যোজনা বহির্ভূত খরচ মেটাতে। যেমন, বেতন, পেনশন, সুদ ইত্যাদি। তাঁর প্রশ্ন ছিল, ৬ পয়সায় কি উন্নয়ন সম্ভব? মমতার সেই বক্তব্য খারিজ করে অসীমবাবু বলেছেন, রাজ্যের আয়ের ৭৪ শতাংশের কিছু বেশি এই খাতে খরচ হয়। অমিতবাবু এ দিন পাল্টা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী যে তথ্য পেশ করেছেন তা সম্পূর্ণ ঠিক। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য ঠিক নয়। পরিসংখ্যান দিয়ে অমিতবাবু জানান, চলতি আর্থিক বছরে (২০১১-১২) রাজ্যের মোট আয় ধরা আছে ৫৯,৪৬২ কোটি টাকা। আর বেতন, অবসরকালীন ভাতা ও অন্যান্য দায় মেটাতে ব্যয় ধরা আছে ৫৬,০৩১ কোটি। অর্থাৎ মোট আয়ের ৯৪.২৩%।
রাজ্যের ঘাড়ে ঋণের বোঝা বাড়ছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে এবং অসীমবাবুও এ প্রসঙ্গে যে মন্তব্য করেছেন এ দিন তারও বিরোধিতা করেছেন অমিতবাবু। তিনি বলেন, রাজ্যের ঘাড়ে ২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে গিয়েছে বামফ্রন্ট সরকার। শুধু বিভিন্ন খাতে সুদ ও আসল মিলিয়েই এ বছরে সরকারকে শোধ করতে হবে ২১ হাজার কোটি টাকা। তাঁর যুক্তি, চলতি আর্থিক বছরে রাজ্য সরকার বাজার থেকে ১৭,৮২৮ কোটি টাকা ঋণ নিতে পারবে। এর মধ্যে আগের সরকার মাত্র দু’মাসেই ৫,২১৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে নিয়েছিল। তা ছাড়া ৩,০০০ কোটি টাকার বকেয়া বিলও তারা মেটায়নি। যা বর্তমান সরকারকেই ঋণ নিয়ে মেটাতে হচ্ছে। এই অবস্থায় গত পাঁচ মাসে নতুন সরকার বাজার থেকে ৭,০০০ কোটি টাকার মতো ধার নিয়েছে। যা গড়ে প্রতি মাসে ১,৪০০ কোটি টাকার মতো। অমিতবাবুর দাবি, আগের সরকার প্রতি মাসে গড়ে বাজার থেকে ধার নিয়েছে ২,৬০০ কোটি টাকা।
কিন্তু গোটা বছরে যত ঋণ নেওয়া সম্ভব, তার বেশির ভাগই যদি নেওয়া হয়ে গিয়ে থাকে তা হলে বাকি পাঁচ মাস চলবে কী করে? অমিতবাবুর জবাব, “আয়ের উৎস মুখ ঠিকই খুঁজে পাওয়া যাবে। এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।” |
|
|
|
|
|