|
|
|
|
পিরাকাটায় সভা তৃণমূলের |
বন্দুক ছেড়ে উন্নয়নে সামিল হওয়ার ডাক |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
এক সময়ে সিপিএমও এ পথেই হেঁটেছিল। এ বার মাওবাদী মোকাবিলায় সে পথেই হাঁটছে নতুন শাসকদল তৃণমূলও। জঙ্গলমহল জুড়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করেছে তারা। পিংবনিতে গত শনিবার সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর সভায় যে ‘প্রতিরোধে’র ডাক দেওয়া হয়েছিলমঙ্গলবার শালবনির পিরাকাটাতেও পুনরুচ্চারিত হল সেই আহ্বান। তৃণমূল নেতৃত্বের ঘোষণা, জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরবেই। মানুষই বন্দুক-বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। সেই সঙ্গেই কর্মী-সমর্থকদের কাছে নেতৃত্বের আর্জি, সবে দল সরকারে এসেছে। আর একটু সময় প্রয়োজন। পুরো এলাকা জুড়েই শুরু হবে উন্নয়ন-যজ্ঞ। বন্দুক ছেড়ে মূলস্রোতে ফিরে মাওবাদীদের সেই উন্নয়ন-যজ্ঞে সামিল হওয়ারও আহ্বান জানানো হয়।
কালীপুজো-বাঁদনা পরব ঘিরে উৎসবের আবহেই এ দিন পিরাকাটা হাইস্কুল মাঠের সভায় লোকজনের ভিড় হয়েছিল ভালই। ব্লক তৃণমূল নেতা নেপাল সিংহের বক্তব্য, “প্রত্যাশার চেয়েও বেশি মানুষ সভায় এসেছেন। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষের সমর্থন ওদের (মাওবাদী) দিকে নেই। ওদের হুমকিতে আর সে ভাবে কেউ সন্ত্রস্তও হচ্ছেন না।” সভায় উপস্থিত ছিলেন মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি, শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো, দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ প্রমুখ। |
|
বক্তব্য রাখছেন বিধায়ক মৃগেন মাইতি। নিজস্ব চিত্র। |
দল সরকারে এলেও চাষিদের ন্যায্য দাবির প্রেক্ষিতে যে আন্দোলন চলবে, সভা থেকে তা স্পষ্ট করে দেন প্রদ্যোৎবাবু। তাঁর কথায়, “চাষিরা যাতে ধানের ন্যায্য মূল্য পান, সে জন্য দলীয় বিধায়কদেরও উদ্যোগী হতে হবে।” মাওবাদীদের ফের মূলস্রোতে ফিরে আসার বার্তা দিয়ে মৃগেনবাবু বলেন, “জঙ্গলমহলের প্রতিটি এলাকায় আমরা সভা করব। কেউ সাদা কাগজে লাল কালিতে লিখে আমাদের ইস্তফা দিতে বলবে, তা হতে পারে না। মানুষ আমাদের জিতিয়েছেন। আজকের সভাই প্রমাণ করে, মানুষ আমাদের সঙ্গেই আছেন। বন্দুকের নল কখনও শেষ কথা বলে না।”
এক সময়ে জঙ্গলমহল জুড়েই ঘাঁটি তৈরি করেছিল মাওবাদীরা। রোজই কোথাও না-কোথাও খুন-নাশকতা চলত। গুলির আওয়াজে বাতাস ভারী হয়ে থাকত। অশান্ত হয়েছিল এই পিরাকাটাও। যৌথ অভিযান শুরু হওয়ার পর অবশ্য পরিস্থিতি পাল্টেছে। ক’দিন আগে ঝাড়গ্রামে এসে মাওবাদীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করার পাশাপাশি তিনি জানান, অস্ত্র সংবরণ করেই আলোচনায় বসতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাত দিনের সময়সীমার কথাও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার সেই সময়সীমা শেষের দিনেই গোয়ালতোড়ের পিংবনিতে সভা করে যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করেন, হার্মাদ-বাহিনীর আশ্রয়ে থাকা এই শক্তিকে (মাওবাদী) তাঁরা উৎখাত করবেনই। মানুষই গ্রামে গ্রামে অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করবেন। প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।
মঙ্গলবার পিরাকাটার সভাতেও তৃণমূল নেতাদের বক্তব্যে সেই সুরই ধরা পড়েছে। বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো বলেন, “মানুষ আমাদের জিতিয়েছেন। পাঁচ বছর পর নাও জেতাতে পারেন। কিন্তু হার্মাদ বাহিনী তৈরি করে, সন্ত্রাস করে আমরা ক্ষমতায় থাকব না। এক সময়ে মানুষ যৌথ বাহিনী প্রত্যাহারের কথা বলেছেন। কিন্তু এই বাহিনী আর আগের মতো অত্যাচার করে না। তাই মানুষই চাইছেন, জঙ্গলমহলে যৌথ বাহিনী থাকুক।” দীনেন রায় বলেন, “শান্তি ও উন্নয়নের জন্যই এই সভা। জঙ্গলমহলে অনেক রক্ত ঝরেছে। কিন্তু আর নয়। এখনও যাঁরা বন্দুক হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তাঁদের বলছি, সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসুন। সরকার আপানাদের পাশে থাকবে।” |
|
|
|
|
|