|
|
|
|
বদলার জমকালো চিত্রনাট্যেও ইডেন জুড়ে শুধুই শূন্যতার ছবি |
সব্যসাচী সরকার • কলকাতা |
দেওয়ালি-৫
ইডেন-০ |
ফুটবল ম্যাচ হলে স্বচ্ছন্দে এই স্কোরলাইন মঙ্গলবারের ইডেন নিয়ে বসিয়ে দেওয়া যেত। ইংরেজদের চুনকাম করার সম্ভাবনা, ভারতের আগে ব্যাটিং, ধোনি-ধামাকা, ঘরের ছেলে মনোজ তিওয়ারির চার নম্বরে নেমে পড়া, কোনও কিছুই দেওয়ালির আগের রাতে ইডেন ভরার উপযুক্ত অনুঘটক হিসেবে আবির্ভূত হয়ে সিএবি কর্তাদের মুখে চওড়া হাসি এঁকে দিতে ব্যর্থ। স্রেফ পরিসংখ্যান বলছে, ইডেনের ওয়ান ডে ইতিহাসে মঙ্গলবারই দর্শকসংখ্যা ছিল সর্বনিম্ন। মেরেকেটে কুড়ি-বাইশ হাজার। তা-ও এর মধ্যে গাঁটের কড়ি খরচ করে মাঠে আসার লোক হাতে গোনা। ইডেন যেটুকু ভরেছিল, সৌজন্য---কমপ্লিমেন্টারি টিকিট। সিএবি-র কম্পিউটার প্রিন্টআউট বলছে, ৬৭ হাজার দর্শকাসনের স্টেডিয়ামে টিকিট কিনেছেন মাত্র ৬৩৭০ জন! |
|
ইডেনে জয়ধ্বনি। ৫-০ করার হাসি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
ক্রিকেটপ্রেমী কলকাতার হলটা কী? হঠাৎ ‘ধোনিবাজি’-র থেকে কেন মুখ ঘুরিয়ে নিল শহর? যত রাত বাড়ছিল, ইংরেজ দুর্গে ফাটল ধরাচ্ছিলেন জাডেজা-অশ্বিনরা। ৫-০-র বদলার চিত্রনাট্য খাপে খাপে মিলে যাচ্ছিল। তাতেও নেই কোনও হেলদোল, হাজার ওয়াটের বাল্বের তলায় খাঁ খাঁ করছিল এক একটা গ্যালারি। জয়ের জমকালো চিত্রনাট্যেও ইডেন জুড়ে শুধুই শূন্যতা। এমনকী সিরিজ জিতে ধোনি যখন ট্রফি নিচ্ছেন, তখনও মাঠে গোনাগুন্তি হাজার দু’য়েক। বিরাট কোহলি ট্রফি হাতে নিয়ে গ্যালারির দিকে তুলে ধরলেন। মুষ্টিবদ্ধ হাত ঝাঁকালেন। প্রত্যুত্তরে উড়ল গোটা দশেক তেরঙ্গা আর মৃদু গুঞ্জন, যাকে ঠিক জয়ধ্বনি বলা যায় না! ইডেনের জায়ান্ট স্ক্রিনে তখন জ্বলজ্বল করছে ‘কনগ্র্যাটস ইন্ডিয়া, উইশ ইউ অল হ্যাপি দিওয়ালি’। এমনকী ম্যাচ শেষে ধোনির বাইকে করে ড্রেসিংরুমে ঢুকে পড়ার মাস্তানিতেও বক্স অফিসে ঢেউ উঠল না ইডেনে। কে বলবে, মাস কয়েক আগের ইংল্যান্ড সফরের অভিশপ্ত ফল মুছে দিয়ে ধোনির তরুণ-ব্রিগেড নতুন করে লিখছে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিকথা? কারণ খুঁজতে গিয়ে ইডেনের আনাচে-কানাচে নানা মুনির নানা মত। কিন্তু প্রায় সকলেই একমত, সচিন-সহবাগের মতো মহাতারাদের অনুপস্থিতি কোথাও না কোথাও একটা বড় ফ্যাক্টর। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ওপেনার নিক নাইটের কথাই ধরা যাক। |
|
ম্যাচের সেরা জাডেজাকে আদর রায়নার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
ক্লাবহাউসে দাঁড়িয়ে আনন্দবাজারকে বলছিলেন, “ভাবতেই পারি না ইডেনে প্রায় ফাঁকা স্টেডিয়ামে ওয়ান ডে হচ্ছে। সচিন, সহবাগ থাকলে এই দৃশ্য দেখতাম বলে মনে হয় না।” নাইটের সুরেই সুর মেলাচ্ছেন রিচার্ড হবসন। লন্ডনের ‘দ্য টাইমস’-এর ক্রিকেট প্রতিনিধি। তাঁর শাণিত যুক্তি, “ভারতে সচিন তেন্ডুলকর ক্রিকেটের ভগবান। সহবাগ একজন ম্যাচ উইনার। সচিনের সিরিজে না থাকাটা গোটা সিরিজেই একটা প্রভাব ফেলেছে। আর সহবাগ না থাকা মানে আপনি আধুনিক ক্রিকেটের বিনোদন থেকে বঞ্চিত।” ফাঁকা ইডেনে সিরিজ জয় নিয়ে অবশ্য বিচলিত দেখাচ্ছে না ‘ক্যাপ্টেন কুল’ মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে। বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের গলায় যথারীতি ধোনিসুলভ নির্লিপ্তি। সচিনের কথা অবশ্য তাঁকেও বলতে হচ্ছে। “মাঠ না ভরার পিছনে সচিন অবশ্যই একটা ফ্যাক্টর। তা ছাড়া আজ তো কাজের দিন। প্রাইভেট সেক্টরে ক’জন আর অফিস থেকে ছুটি পায়?”
মহাতারকাদের অনুপস্থিতি যদি শূন্যতার ‘এক্স ফ্যাক্টর’ হয়, দুই থেকে চারে থাকছে হরেক রকম মতামত। সিএবি কর্তাদের মুখে তারাদের কথা থাকছে, আবার একই সঙ্গে থাকছে আক্ষেপ। ক্রিকেটের বড়ি নাকি এমন ভাবে রোজ রোজ গেলানো হচ্ছে যে সেটা সুস্বাদু বিরিয়ানির বদলে তেতো পাঁচন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রাক্তন সচিব এবং সিএবি-র স্টেডিয়াম কমিটির চেয়ারম্যান চিত্রক মিত্র ধরিয়ে দিলেন, “আজ ছোটা দেওয়ালি। কাল দেওয়ালি। তার উপর কাজের দিন। লোকে ক্রিকেটের পিছনে সময় দেবে কেন? শনিবারের টি টোয়েন্টিতে মনে হয় না এতটা ফাঁকা থাকবে ইডেন।” হালফিলের যুগ্ম-সচিব বিশ্বরূপ দে-র পর্যবেক্ষণ সামান্য অন্য রকম: “শুধু ইডেন কেন, ওয়াংখেড়েতেও তো লোক হয়নি। অতিরিক্ত ক্রিকেট অবশ্যই একটা বড় কারণ।” ক্রিকেটের প্রাক্তনরা যেমন ইডেন আসেন, তেমনই এসেছিলেন। পরিচিত মুখেরা ঠিকই ছড়িয়ে ছিটিয়ে
ছিলেন ক্লাব হাউসের আপার কিংবা লোয়ার টিয়ারে। উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি বলতে চুনী গোস্বামী। বাংলার প্রাক্তন রঞ্জি অধিনায়ক মনে করেননি এই ম্যাচ দেখতে মাঠে যাওয়ার প্রয়োজন আছে। “দূর, এই ইংল্যান্ড তো একটা ম্যাচেও খেলতে পারল না। প্রত্যেকটা একপেশে ম্যাচ। লোকে মাঠে যাবে কেন? সচিন নেই, তার উপর সামনে কালীপুজো। ক্রিকেট এখন প্রায়োরিটি নয়।”
দিওয়ালি শেষের উইকএন্ডের কুড়ি-কুড়ির আসর যে এই ছবিকে ‘উল্টে দেখুন, পাল্টে গেছে’ করে দেবে, এই গ্যারান্টি সিএবি কর্তারা কেন, ইডেনের বিখ্যাত বটতলাও দিতে পারছে না। শনিবারের টিকিটের চাহিদা সামান্য বেশি ঠিকই, কিন্তু ভরা ইডেনের মৌতাত তাতে থাকছে না। এ দিন রাত পর্যন্ত শনিবারের ম্যাচের টিকিট কেটেছেন ৭৪৫৪ জন। কাটার কথাও নয়। আসলে এই সিরিজে সেই সৌরভও নেই, সেই ফ্লিন্টফও নেই। নেই রক্তচাপ বাড়িয়ে দেওয়া ম্যাচের রসদ, নেই চিরশত্রুকে বধ করে বুক ফুলিয়ে ঘোরার উপযুক্ত আবহ। এ এমন এক সিরিজ যেখানে তারকা তো নেই-ই, নেই মারকাটারি, ধুন্ধুমার প্রতিদ্বন্দ্বিতাও। এই ক্রীড়ামঞ্চে পরিণতি বলতে একের পর এক একপেশে ম্যাচের অ্যাকশন রিপ্লে। বাঙালি জামা খুলে ওড়াবে কেন?
|
ইডেনের স্কোর |
ভারত |
রাহানে ক কেইসওয়েটার বো ব্রেসনান ৪২
গম্ভীর বো ফিন ৩৮
কোহলি বো ফিন ০
মনোজ ক কেইসওয়েটার বো মিকার ২৪
রায়না রান আউট ৩৮
ধোনি নঃআঃ ৭৫
জাডেজা ক বেল বো সমিত ২১
অশ্বিন ক বেয়ারস্টো বো সমিত ৭
প্রবীণ ক বেয়ারস্টো বো সমিত ১৬
বিনয় নঃআঃ ০
অতিরিক্ত ১০
মোট ৫০ ওভারে ২৭১-৮
পতন: ৮০, ৮০, ৮০, ১২৩, ১৬২, ২০৬, ২১৫, ২৫৯
বোলিং: ব্রেসনান ৯-০-৩৬-১, ফিন ১০-২-৪৭-২,
মিকার ১০-০-৬৫-১, সমিত ৯-০-৫৭-৩,
সোয়ান ৮-০-৪৫-০, বোপারা ৪-১-১৯-০। |
ইংল্যান্ড |
কেইসওয়েটার এলবিডব্লিউ জাডেজা ৬৩
কুক বো বরুণ ৬০
ট্রট ক কোহলি বো জাডেজা ৫
বেল ক ধোনি বো অশ্বিন ২
বোপারা বো রায়না ৪
বেয়ারস্টো ক রাহানে বো জাডেজা ২
সমিত ক ধোনি বো জাডেজা ১৮
ব্রেসনান ক রায়না বো মনোজ ০
সোয়ান নঃআঃ ১০
মিকার এলবিডব্লিউ অশ্বিন ১
ফিন ক ধোনি বো অশ্বিন ২
অতিরিক্ত ৯
মোট ৩৭ ওভারে ১৭৬
পতন: ১২৯, ১৩৪, ১৩৭, ১৩৭, ১৪১, ১৫৫, ১৫৬, ১৬৭, ১৭৪
বোলিং: প্রবীণ ৫-০-৩৪-০, বিনয় ৩-০-২১-০, অশ্বিন ৯-০-২৮-৩,
মনোজ ৫-০-২৮-১,
জাডেজা ৮-০-৩৩-৪, বরুণ ৩-০-১৯-১, রায়না ৪-০-৯-১। |
|
|
|
|
|
|
|