গুরুত্ব পেল জমি প্রশ্নে মমতার উদ্বেগ
জাতীয় উৎপাদন নীতিতে সায় কেন্দ্রের
উপিএ সরকারের অন্যতম শরিক তৃণমূল কংগ্রেসের মতকে ‘যথাযথ’ গুরুত্ব দিয়েই শেষ পর্যন্ত জাতীয় উৎপাদন নীতিতে অনুমোদন দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। যে নীতি প্রণয়নের মূল লক্ষ্য হল, গোটা দেশে আরও বেশি সংখ্যক পরিবেশ সহায়ক বৃহৎ শিল্প তালুক গড়ে তুলে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। স্বাভাবিক ভাবেই এ কাজের জন্য জমি অধিগ্রহণ অনিবার্য। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বেগ ছিল মূলত এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই। কারণ শিল্পের জন্য কৃষি জমি অধিগ্রহণের বিরোধী তিনি। তবে আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা জানান, মন্ত্রিসভা অনুমোদিত জাতীয় উৎপাদন নীতি অনুযায়ী শিল্পতালুক গঠনের জন্য কৃষি ও উর্বর জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। পতিত ও অনুর্বর জমিতে এই শিল্পতালুক গড়ে তোলার চেষ্টা করা হবে। তা ছাড়া, বিভিন্ন রাজ্য সরকার তাদের জমি ব্যাঙ্ক থেকে শিল্প তালুক গড়ে তোলার জন্য জমি দেবে।
জাতীয় উৎপাদন নীতি অনুমোদনের জন্য গত মাসে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে প্রস্তাব পেশ করা হয়। কিন্তু সেই বৈঠকে রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী সংশ্লিষ্ট নীতির কয়েকটি ধারা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আবার কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক এবং পরিবেশ মন্ত্রক থেকেও কিছু প্রশ্ন তোলা হয়। এই অবস্থায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শরদ পওয়ারের নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন করে দেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। ১১ জনের ওই মন্ত্রিগোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন রেলমন্ত্রীও। সূত্রের খবর, গত ১৪ অক্টোবর মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে সর্বসম্মতি গড়ে ওঠে। জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি ছাড়াও তৃণমূলনেত্রীর বক্তব্য ছিল, এমন নীতি নেওয়া হোক যা শ্রমিক স্বার্থের সহায়ক হয়। যার ভিত্তিতে ১৪ অক্টোবর বৈঠকের পরেই শরদ পওয়ার বলেন, “নীতিটি নিয়ে সর্বসম্মতি গড়ে উঠেছে। নীতিটির চূড়ান্ত স্বরূপ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে।”
এর পরেই আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা জাতীয় উৎপাদন নীতিতে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী আনন্দ শর্মা বলেন, “গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের ইস্তেহারেই জাতীয় উৎপাদন নীতি প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। পরে গত ডিসেম্বরে বুড়ারিতে কংগ্রেসের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের অর্থনৈতিক প্রস্তাবেও এ ব্যাপারে অঙ্গীকার করা হয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি পালন করল সরকার।”
কেন এই নীতি প্রণয়ন জরুরি ছিল, তা ব্যাখ্যা করে আনন্দ শর্মা বলেন, “জাতীয় গড় উৎপাদনে এ দেশের উৎপাদন ক্ষেত্রের অংশীদারিত্ব কমবেশি ১৬ শতাংশ। গত দেড় দশক ধরে তাই চলছে। এবং স্থিতাবস্থা বজায় রয়েছে। কিন্তু চিন বা কোরিয়ার মতো দেশগুলিতে উৎপাদন ক্ষেত্রের অংশীদারিত্ব অনেক বেশি।
যথাক্রমে ৩৪ ও ২৮ শতাংশ। সেই কারণেই দেশ জুড়ে ছোট, মাঝারি ও বড় শিল্পের জন্য আরও বেশি সংখ্যক বৃহৎ বিনিয়োগ ও শিল্প তালুক (ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং জোন) গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাতে গড় জাতীয় উৎপাদনে উৎপাদন ক্ষেত্রের অংশীদারিত্ব বাড়িয়ে অন্তত ২৫ শতাংশ করা সম্ভব হয়।” মন্ত্রী জানান, এর ফলে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সরকার চায়, ২০২২ সালের মধ্যে দশ কোটি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। এ জন্য শিল্প তালুকগুলির কাছাকাছি পলিটেকনিক এবং আইটিআই গড়ে তোলা হবে এবং প্লেসমেন্টের ব্যবস্থা করা হবে।
এই শিল্পতালুকগুলি গড়ে তুলতে কেন্দ্র অর্থ অনুমোদন করবে বলে জানিয়েছেন আনন্দ শর্মা। সেই সঙ্গে ছোট ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য উৎসাহ দিতে আর্থিক সুবিধাও দেওয়া হবে। তবে সরকারের তরফে এ-ও বলা হয়েছে, কোনও একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান পৃথক ভাবে সুবিধা পাবে না। সামগ্রিক ভাবে সংশ্লিষ্ট শিল্পের জন্য আর্থিক সুরাহা ঘোষণা করা হবে। সেই সঙ্গে শিল্পে আরও বেশি বিনিয়োগ টানতে পরিবেশ সহায়ক পরিকাঠামো গড়ে তোলায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। শিল্প প্রতিষ্ঠার নিয়মনীতি যথাসম্ভব সরল করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টিও এই নীতি প্রণয়নের অন্যতম লক্ষ্য। দিল্লি-মুম্বই শিল্প করিডরের সমান্তরালে এমন চারটি শিল্পতালুক গড়ে তোলার প্রস্তাব ইতিমধ্যেই এসেছে। জাপানের চারটি শিল্পগোষ্ঠী ওই শিল্প তালুকগুলি গড়ে তুলতে চায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.