|
|
|
|
গাফিলতির অভিযোগ পরিবারের |
চেস্টে জেনারেটর চালানোর কথাই নয়, দাবি ব্যাঙ্কের |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
জেনারেটর থেকে বেরোনো বিষাক্ত গ্যাস রবিবার গভীর রাতে প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল বি টি রোডে অবস্থিত বেসরকারি একটি ব্যাঙ্কের কারেন্সি চেস্টের দুই নৈশপ্রহরীর। সোমবার পেরিয়ে মঙ্গলবারও সেই বিষাক্ত গ্যাসের ঝাঁঝালো গন্ধে ঢোকা গেল না কারেন্সি চেস্টের ভিতরে।
ওই বিষাক্ত গ্যাস যে কার্বন মনোঅক্সাইড এবং তার বিষক্রিয়াতেই যে ওই দুই রক্ষীর মৃত্যু হয়েছে, তা প্রমাণিত হয়েছে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে। আর ওই কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাস যে জেনারেটরের তেল পোড়ার ফলেই তৈরি হয়েছে, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা সে ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত।
ওই বদ্ধ ঘরে কেন জেনারেটর চালানো হয়েছিল, সোমবার সেই প্রশ্ন তুলেছিল পুলিশ ও ফরেন্সিক দফতর। ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষ এ দিন দাবি করেছেন, জেনারেটর ঘরের বাইরে এনে তবে চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁরা। মৃত দুই নিরাপত্তা রক্ষী যে সংস্থার কর্মী, তার কর্তারাও ওই দাবি মেনে নিচ্ছেন। তা হলে এখন প্রশ্ন উঠছে নিরাপত্তা কর্মীদের ওই জায়গায় ডিউটি করার মতো যথাযথ প্রশিক্ষণ ছিল কিনা।
নিরাপত্তা সংস্থার মালিক অসীম চক্রবর্তী বলেন, “প্রাক্তন সেনাকর্মী হওয়ায় ওঁদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ ছিলই। আমাদের তরফেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। চেস্টের কোথায় কী রয়েছে, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কী ব্যবস্থা নিতে হবে, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তার প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। বন্ধ ঘরের মধ্যে জেনারেটর চালালে যে বিপদ হতে পারে তা তো সবারই জানা।” অসীমবাবুর দাবি, “চেস্টের ভিতরে যে জেনারেটর চালানো যাবে না, তা সব রক্ষীকেই বলা রয়েছে। রবিবার রাতে কেন তা চালানো হয়েছিল, বুঝতে পারছি না।”
এ দিন দুপুরে আর জি কর মেডিক্যাল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয় মৃত দুই রক্ষীর। জেনারেটরের জ্বালানি থেকে বেরোনো কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই ওই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে। আর জি কর হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে দেবপ্রসাদ বৈদ্যের ভাই শ্যামাপ্রসাদ বলছিলেন, “দাদা মাঝেমাঝেই বলত চেস্টের বদ্ধ জায়গায় রাতে থাকতে অসুবিধা হয়। ওই আশঙ্কাই যে এমন ভাবে সত্যি হয়ে যাবে তা বিশ্বাস করতে পারছি না।”
নিরাপত্তা সংস্থার কর্তারা বলছেন, রাতের ৮ ঘণ্টা বন্ধ কারেন্সি চেস্টের মধ্যেই নিরাপত্তারক্ষীদের ডিউটি করতে হবে বলে ব্যাঙ্কের সঙ্গে তাদের চুক্তি রয়েছে। তবে ব্যাঙ্ক-কর্তৃপক্ষের দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম মেনেই সব করা হয়েছে। কিন্তু তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের কাছে পুরো বিষয়টি এখনও পরিষ্কার হচ্ছে না। এক পুলিশ কর্তার কথায়, “রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম মেনেই চেস্টের ভিতরে বদ্ধ জায়গায় নৈশপ্রহরীদের রাখা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। এই বিষয়ে
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে।”
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে বলে কাশীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন মৃত দেবপ্রসাদবাবু ও বাসুদেব ঘোষের পরিবার। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাঙ্কটির বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত হত্যার মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে মৃত দুই রক্ষীর পরিবার। এই প্রসঙ্গে আইএনজি বৈশ্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। ঘটনাটি নজিরবিহীন। আমরা ওই দুই রক্ষীর পরিবারের পাশে দাঁড়াব।”
সোমবার সারা দিন ওই কারেন্সি চেস্টে দফায় দফায় তদন্তে এসেছেন পুলিশ, ফরেন্সিক ও দমকলের লোকেরা। মঙ্গলবার দেখা গেল কারেন্সি চেস্টের পাহারায় নিয়োগ করা
হয়েছে তিন নিরাপত্তারক্ষীকে। এঁদের মধ্যে সশস্ত্র দু’জন অশোক বসু এবং বুধিশ্বর বরাই প্রাক্তন সেনাকর্মী। তাঁরা এর আগে দেবপ্রসাদবাবু ও বাসুদেববাবুর সঙ্গে কাজ করেছেন। একসঙ্গে রাতের শিফ্টেও থেকেছেন ওঁদের সঙ্গে। তৃতীয় জন মহিলা, পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায়। কারেন্সি চেস্টের লোহার শাটারটি বন্ধ। শাটারের মাঝামাঝি ‘আইহোল’-এ চোখ রেখে দেখা গেল, শাটারের পিছনে যে কাঠের দরজা ও কোলাপসিবল গেট রয়েছে, সেগুলি খোলা। শাটার ফেলা ওই কারেন্সি চেস্টের ঠিক সামনে পাহারায় রয়েছেন তিন নিরাপত্তারক্ষী।
সহকর্মীদের আকস্মিক মৃত্যুর আঘাত সয়েই এ দিন সকাল ১০টা থেকে চেস্টের নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন অশোকবাবুরা।
পোড়া গন্ধে চেস্টের বাইরেও থাকতে কষ্ট হচ্ছিল তাঁদের। খালি বলছিলেন, চেস্টের শাটারের মাঝখানে ‘আইহোল’টুকু দিয়ে বেরোনো গন্ধেই গা গুলিয়ে উঠছে। মাথা ঝিমঝিম করছে। বুধিশ্বরবাবু বলেন, “দু’তিন দিন আগেই বাসুদেবের সঙ্গে রাতের শিফ্টে ছিলাম। এখন ভয় তো করছেই। কিন্তু পেটের দায়ে কী আর করব!” |
|
|
|
|
|