জাতীয় উন্নয়ন পরিষদে প্রথম বক্তা মমতা
প্রথা পাল্টানোয় প্রশ্নের মুখে রাজ্যের নামবদল
‘পিছিয়ে থাকা’ রাজ্যগুলির গালে হাত দিয়ে বসে থাকার দিন শেষ!
‘পিছিয়ে থাকা’ অবশ্যই শিক্ষা বা শিল্পে নয়। বর্ণমালায়! আজ জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের মঞ্চে স্বাধীনতার পর থেকে চলে আসা একটি প্রথার বদল ঘটালেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
এত দিন সবার শেষে বলার সুযোগ পাওয়া ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’ আজ ডাক পেল সবার আগে। পরিষদের সম্মেলনে প্রথম বক্তা হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে কার্যত খারিজ হয়ে গেল রাজ্যের নাম বদল নিয়ে মমতারই যুক্তি।
রাজ্যের নাম ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’ থেকে ইংরাজিতেই ‘পশ্চিমবঙ্গ’ লেখার লক্ষ্যে আইন বদল করার পিছনে মমতার যুক্তি ছিল, রাজ্যের নামের আদ্যক্ষর ইংরাজি বর্ণমালার একেবারে শেষে হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের ডাকা কোনও বৈঠকে বলার সুযোগ পাওয়া যায় সবার শেষে। ২৭ রাজ্যের বক্তৃতার পরে এ রাজ্যের প্রতিনিধি যখন বলতে ওঠেন তখন বৈঠক প্রায় শেষ লগ্নে। লোকেদের ধৈর্যও ফলে শেষ সীমায়। কেউই আর মন দিয়ে রাজ্যের কথা শোনে না। সেই বাম জমানা থেকেই বিভিন্ন স্তরের পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিদেরই এটা ছিল অভিযোগ এবং যন্ত্রণাও বটে। কিছু দিন আগেই রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, “আমরা শুধু মাদুর পাতি আর মাদুর গোটাই!” সেই কারণে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে রীতিমতো সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে রাজ্যের মান ইংরাজিতে ‘পশ্চিমবঙ্গ’ লেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যাতে বক্তার তালিকায় রাজ্য এগিয়ে আসতে পারে। নাম বদলের প্রস্তাব রাজ্য বিধানসভায় পাশ হলেও এখনও কেন্দ্রের অনুমোদন পায়নি। ফলে এ রাজ্য খাতায়কলমে এখনও ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’।
কিন্তু ‘পিছিয়ে পড়া’ নিয়ে রাজ্যের যুক্তিটাকেই আজ অসার করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। আজকের বৈঠকে প্রথম বলার জন্য ডাক পেয়েছিল বর্ণমালার নিরিখে প্রথমে থাকা অন্ধ্রপ্রদেশ। কিন্তু ঘটনাচক্রে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কিরণ রেড্ডি তখন সম্মেলন কক্ষে ছিলেন না। এর পরেই ডাকা হয় তালিকার একেবারে শেষে থাকা ওয়েস্ট বেঙ্গলকে। বর্ণমালার প্রথম এবং শেষ এ ভাবেই পর্যায়ক্রমে রাজ্যগুলিকে আজ ডাকা হয়েছে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য।
ছবি: রাজেশ কুমার
শেষে বলার সুযোগ পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ যে শুধু এ রাজ্যেরই ছিল, তা নয়। এর আগের দফায় মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা এক বার মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনে এসে কেন্দ্রকে অনুরোধ করেন, তাঁর কাজ রয়েছে। ফলে আগে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক। ‘টি’ আসতে আসতে বেলা গড়িয়ে যাবে, গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করতে ফিরতে পারবেন না চেন্নাইয়ে। কিন্তু সেই সুযোগ না-পাওয়ায় তিনি বক্তৃতা না পড়েই, জমা দিয়ে চলে যান।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, এই সমস্যাটি নিয়ে কিছু দিন ধরেই ভাবনাচিন্তা করছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। পশ্চিমবঙ্গ বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে ওঠায় তাই দীর্ঘদিনের প্রথাটি এ বার বদলে দেওয়া হল। গত সপ্তাহে এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ নির্দেশ গিয়েছিল যোজনা কমিশনে। জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের এই বার্ষিক বৈঠকটি পরিচালনা করে যোজনা কমিশনই। সেখানেই স্থির হয়, নতুন নিয়মে রাজ্যগুলিকে মঞ্চে ডাকা হবে।
এই নীতিই যদি এখন থেকে মান্য করা হয়, তা হলে নাম বদলে রাজ্যের লাভ তো দূর, বরং ক্ষতিই হবে। সে ক্ষেত্রে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’ থেকে ‘পশ্চিমবঙ্গ’ হলে বর্ণমালার সূত্র ধরে সাত ধাপ ‘এগোনোর’ বদলে আবার ‘পিছিয়ে’ যাবে রাজ্য।
নামবদল প্রসঙ্গে অবশ্য আজ কোনও মন্তব্য করেননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি শুধু বলেন, “আমাকে যে গোড়ায় বলতে হবে, সেটা আমি আগে জানতাম না। প্রথমে অন্ধ্রপ্রদেশের নাম ডাকা হল। ওদের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন না। তার পরেই আমাদের রাজ্যের নাম ডাকা হয়। গোড়ায় বলতে পেরে আমি খুশি।”
কেন্দ্রের বৈঠকে আগে বলতে পারার লক্ষ্যে রাজ্যের নাম বদলানো নিয়ে বাম সরকারও কিছু বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর করা হয়নি। কেন্দ্রের কাছে একটি চিঠিও লেখা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি ওখানেই থেমে যায়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ‘ব্র্যান্ড বেঙ্গল’ তৈরির জন্য নাম বদলে উদ্যোগী হন। কিন্তু সে বিষয়ে এগোনোর আগেই সিপিএম-কে সরকার থেকে বিদায় নিতে হয়। ক্ষমতায় আসার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নতুন করে বিষয়টি নিয়ে ভাবা শুরু করে। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্থির হয়, সব দলের মত নিতে হবে। বামেরাও জানান, এতে তাঁদের আপত্তি নেই। কমিটি তৈরি করে কেন্দ্রের কাছে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয় ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নামটির পক্ষে। রাজ্য সরকারের যুক্তি ছিল এর ফলে অন্তত ‘ডব্লিউ’ থেকে উত্তরণ হবে ‘পি’-তে! মাঝামাঝি সময়ে ডাক আসবে, আবার নামের মূল অর্থটিও অক্ষুণ্ণ থাকবে। কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রী এই অভিনব পদক্ষেপ করার পরে মমতা সরকারের আর রাজ্যের নাম বদলের জন্য সচেষ্ট হওয়া উচিত কি না, এ বার সেই প্রশ্নটিই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল। কারণ, নতুন নিয়মে ‘ডব্লিউ’ যে দ্বিতীয়! ‘পি’ পড়ে থাকবে ষোলো নম্বরে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.