প্রায় দশ বছর পর ওয়াংখেড়েতে ভারত আর ইংল্যান্ড এক দিনের ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে। ভাবতে বেশ অবাক লাগছে যে, এখনকার ঠাসা ক্রিকেট সূচিতে এই দু’দলের নতুন তৈরি ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আবার দেখা হতে এত বছর লেগে গেল! দশ বছর আগের ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের সঙ্গে চলতি সিরিজের পার্থক্য, সে বার ওয়াংখেড়েতে নামার সময় সিরিজ ৩-২ ফলে ঝুলে ছিল। আর এ বার ধোনিরা এখনই ৩-০ কুকদের উড়িয়ে দিয়ে বসে আছে। বিভিন্ন সময়ের ক্রিকেট আর বিভিন্ন টিমের মধ্যে তুলনা করাটা আমার কোনও দিনই পছন্দের বিষয় নয়। তবু বলব, কুকের বর্তমান দলের তুলনায় দশ বছর আগের ইংল্যান্ড টিম বেশ খানিকটা অভিজ্ঞ ছিল। সে বার সিরিজটা ছিল ২০০৩ বিশ্বকাপের ঠিক আগেই। ফলে ইংল্যান্ড ওদের বিশ্বকাপের দলটাকেই ভারতে পাঠিয়েছিল। সে জায়গায় এ বার ভারতের মাটিতে সাদামাটা বিশ্বকাপ অভিযানের পর ইংল্যান্ড দলটাকে নতুন করে সাজিয়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ভারতে এসেছে। একই কথা তখনকার আর এখনকার ভারতীয় দল সম্পর্কে বলা যায়। ২০০৩-এর পর থেকে ভারতীয় ক্রিকেট অনেক এগিয়েছে। আর গত গ্রীষ্মে ইংল্যান্ডের মাঠে বিপর্যয় বাদে গত দশ বছরে ঘরের মাঠের পাশাপাশি বিদেশেও ভারতের পারফরম্যান্স যথেষ্ট ভাল।
২০০২-র ওয়াংখেড়ের ম্যাচটা আমাদের জেতা উচিত ছিল। কোনও রান না করেই আমাদের শেষ চারটে উইকেট পড়ে গিয়েছিল। তার পরই ঘটল ফ্রেডি ফ্লিনটফের সেই বিখ্যাত ঘটনা। খেলাধুলোর জন্য ওই দৃশ্যটা খুব ভাল ছিল। কারণ ওটা থেকে বোঝা গিয়েছিল ইংল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতি ফ্লিনটফের আবেগ কত গভীর, সিরিজ জেতা ওদের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ওই সিরিজটা না জিতলেও তার পর থেকে বেশ অনেক দিন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের সাফল্যের হার খুব ভাল ছিল। টেস্ট আর ওয়ান ডে, দু’ধরনের ক্রিকেটেই।
রবিবার ওয়াংখেড়েতে যে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ধোনিরা নামবে, তাদের আত্মবিশ্বাস খুব কম। যদিও মোহালিতে পিটারসেনরা ভালই খেলেছিল। কিন্তু এই দলটায়, বিশেষ করে ওয়ান ডে দলে তীব্রতার খুব অভাব। মরণবাঁচন অবস্থায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ‘নকআউট পাঞ্চ’ দেওয়ার ক্ষমতা নেই কুকদের। মোহালিতে জাডেজাকে নিশ্চিত রানআউট করতে গিয়ে কেইসওয়েটার যে পা দিয়ে স্টাম্প ভেঙে দিল, সেটা থেকেই এটা খুব পরিষ্কার। তার ওপর শেষ তিন ওভারে ইংরেজ বোলারদের অতগুলো ফুলটস বল করা থেকে বোঝা যায়, চাপের মুখে ওরা ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
সন্ধেয় বল করার সময় শিশিরও একটা ফ্যাক্টর। মুম্বই আর কলকাতাতেও এক জিনিসের মোকাবিলা করতে হবে ইংরেজ বোলারদের। কিন্তু কুক-পিটারসেনদের কি ফ্লাডলাইটের আলোয় তিনশো রান তাড়া করার আত্মবিশ্বাস আছে? কারণ ভারতকে আগে ব্যাট করতে পাঠালে এই পরিবেশে গম্ভীরদের থামানোর ক্ষমতা নেই কুকের বোলারদের।
মোহালিতে ইংরেজদের ব্যাটিং দেখে অবশ্য ভাল লাগল। শেষের দিকে ট্রট আর একটু মেরে খেললে ২৯৮-এর চেয়েও বেশি রান উঠত। আমার মনে হয় ইয়ান বেল-কে ভীষণ ভাবে দরকার ইংল্যান্ডের। বেয়ারস্টো-কে কিপিং গ্লাভস দিয়ে বেল-কে খেলানোই যায়। শেষ তিনটে ম্যাচের উইকেটের চেয়ে ওয়াংখেড়ে-র পিচে বাউন্স বেশি থাকবে। ইংরেজ বোলারদের সেই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। উইকেট না ফেলতে পারলে এই ভারতীয় ব্যাটিংয়ের বিরুদ্ধে ওদের কোনও সুযোগই নেই।
আগের ম্যাচে চোট পাওয়া উমেশ যাদব ওয়াংখেড়েতে খেলবে না। প্রথম তিনটে ম্যাচে যাদব ভাল বল করেছে। ভারতীয় ক্রিকেটের পক্ষে এটা খুব ভাল খবর। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে। মোটামুটি ভাল গতিতে বল করে সুইং পাচ্ছিল যাদব। আশা করি ভবিষ্যতেও সেটা করে যেতে পারবে। যাই হোক, যাদব চোট পাওয়ায় আর এক তরুণ পেসার বরুণ অ্যারন সুযোগ পাচ্ছে। ভারতীয় ক্রিকেটে ভবিষ্যতে বরুণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। যার জন্য ওর খেলা দেখতে আমি আগ্রহী।
ভারত এখন খুব শক্তিশালী জায়গায় আছে। পরের দুটো ওয়ান ডে আর একটা টি-টোয়েন্টি জিততে হলে ইংল্যান্ডকে দুর্ধর্ষ কিছু করতে হবে। সিনিয়রদের কাছ থেকে মানসিক শক্তি না পেলে পরের তিনটে ম্যাচেও আরও বড় সমস্যায় পড়বে ইংল্যান্ড।
|