বাস না পাওয়ায় ভোগান্তি
ট্রাক চালকদের বায়নাক্কায় অবরুদ্ধ শহরের রাস্তা
হরের কোন রাস্তা দিয়ে কখন পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট নিয়ম রয়েছে ট্রাফিক পুলিশের। কিন্তু রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন জায়গায় পণ্যবাহী গাড়ির নিয়ম ভাঙার ‘দাপট’ বাড়তে থাকে। এ বার সেই দাপটের এক ‘অন্য চেহারা’ দেখল কলকাতা।
শনিবারের সকাল। ঘড়িতে তখন সাড়ে ৯টা। ছুটির দিন বলে নিউ আলিপুরে রাস্তায় গাড়ি ও লোকের সংখ্যা কম। তা সত্ত্বেও কাজের প্রয়োজনে যাঁরা রাস্তায় নেমেছেন, তাঁরা গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য যানবাহন পাচ্ছেন না। খোঁজ নিয়ে অনেকে জানতে পারেন, নিউ আলিপুর পেট্রোল পাম্পের সামনে টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড অবরুদ্ধ করে রেখেছেন ট্রাক-সহ চালকেরা।
ক্রমে তার রেশ পৌঁছে যায় দক্ষিণ ও সংযোজিত কলকাতার বিভিন্ন এলাকায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে প্রায় প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। অথচ বাস-অটোর দেখা নেই। অবরোধ শুরু হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান ডিসি (ট্রাফিক)। সঙ্গে পুলিশ বাহিনী। তাঁদের সঙ্গে অবরোধকারীদের দফায় দফায় কথা হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে এই অবস্থা চলার পর অবরোধ ওঠে ১১টা নাগাদ। কিন্তু রাস্তার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও ঘণ্টাখানেক সময় পেরিয়ে যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, নিয়ম না-থাকা সত্ত্বেও দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড দিয়ে ট্রাক চালাতে দিতে হবেএই দাবিতে চালকেরা অরবোধ করেন। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে নিউ আলিপুর থানা।
এ দিন সকালে কয়েক জন ট্রাকচালকের সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এর পরেই ৮০টিরও বেশি ট্রাক দিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন চালকেরা। অবরোধে সামিল হন দু’শো জনের বেশি চালক। ওই ট্রাকগুলি খিদিরপুর ডকইয়ার্ড ও নিউ আলিপুর রেলইয়ার্ডে মাল ওঠা-নামা করতে এসেছিল। অবরোধের জেরে সংলগ্ন ছোট-বড় বিভিন্ন রাস্তায় যানজট শুরু হয়। তারাতলা থেকে আসা বাসগুলি বেশিরভাগই দুর্গাপুর সেতু দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। অনেকে হেঁটে, অটো ধরে টালিগঞ্জ ফাঁড়ি পৌঁছে বাস পেয়েছেন।
পুলিশ জানায়, ১ সেপ্টেম্বরের আগে টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড ‘লরি করিডর’ হিসেবে ব্যবহৃত হত (২৪ ঘণ্টাই সেখান দিয়ে ট্রাক চলাচল করতে পারত)। কিন্তু সেপ্টেম্বর থেকে ‘সংযোজিত’ এলাকা কলকাতা পুলিশের আওতায় আসার পরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে পুলিশ জানিয়ে দেয়, রাত ১০টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ট্রাক বা ভারী পণ্যবাহী কোনও গাড়ি ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারবে। ট্রাক চলবে না সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। তবে মাঝারি মাপের পণ্যবাহী গাড়িগুলি দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। উত্তরোত্তর বাড়তে থাকা যানজটের চাপেই এই সিদ্ধান্ত বলে ট্রাফিক পুলিশের দাবি। দিনের বেলায় ওই রাস্তা দিয়ে যাতে পণ্যবাহী গাড়ি না চলে, সে জন্য গত ১৮ জুন টাউন হলে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে নাগরিক সমাজের এক বৈঠকেও দাবি জানান বিশিষ্ট জনেরা।
কিন্তু ওই বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকেই পুলিশের সঙ্গে ট্রাক চালকদের প্রায় রোজ ঝামেলা শুরু হয়। প্রথম দিকে চালকেরা পুলিশকে নিয়ম ‘শিথিল’ করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ তাতে কর্ণপাত করেনি। এর পরে চালকেরা দাবি করেন, মাঝারি মাপের পণ্যবাহী গাড়িগুলি যে সময় ওই রাস্তায় চলে, সেই সময় তাঁদেরও ট্রাক চালাতে দিতে হবে। ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটসর্র্ অ্যাসোসিয়েশন-এর সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ মজুমদার বলেন, “বিজ্ঞপ্তি জারির পর থেকে ব্যবসার ক্ষতি বেড়েছে। পুলিশের কাছে আবেদন, অন্তত ২টো থেকে ৪টে পর্যন্ত ওই রাস্তায় ট্রাক চলাচলের অনুমতি দেওয়া হোক।”
ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা ভেবেই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। এ দিন যাঁরা অবরোধ করেছেন, তাঁদের ব্যবসায়িক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে আগামী সোমবার একটি বৈঠকও ডাকা হয়েছে।” তবে আগামী কিছু দিনের জন্য মাঝারি মাপের গাড়ির সঙ্গে পণ্যবাহী বড় গাড়িকেও ওই রাস্তা দিয়ে দুপুর থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত চলাচলের অনুমতি দেওয়া হতে পারে বলে ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.