মুখে বাঁধা সবুজ রঙের মুখোশ। সম্ভবত ক্যামেরা দেখতে পেয়েই দু’আঙুলে ঝটপট ‘ভিকট্রি’ তৈরি। ওরা দাঁড়িয়ে বন্দুকধারী প্রহরীর ঠিক পেছনেই। গুনে দেখা গেল পরপর ছ’জন। গড় বয়স বড়জোর দশ।
লিবিয়ার মিসরাতা শহরের বাজারে প্রায় পরিত্যক্ত হিমঘরটার অতিকায় দরজার সামনে থেকে যে সর্পিল লাইনটা চলে গিয়েছে, তাতেই দাঁড়িয়ে ওই ছয় খুদে। ওদের পেছনে আরও লোক। প্রত্যেকের নাকে মুখোশ।
মুয়ম্মর গদ্দাফির ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখতে লাইন পড়ে গিয়েছে মিসরাতার বাজারে। |
নিহত স্বৈরশাসকের দেহ শহরে যে রয়েছে, সে খবর জানাজানি হতেই উৎসুক জনতাকে আটকে রাখা যায়নি। গদ্দাফির দেহের পাশে আরও দু’টো গদিতে পড়ে রয়েছে তাঁর ছেলে মোতাস্সিম এবং সেনাপ্রধান আবুবকর ইউনিসের দেহ। জনতার প্রবল আগ্রহ অবশ্য গদ্দাফির শবদেহ ঘিরেই। বৌ-বাচ্চা নিয়েও লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন কেউ কেউ। প্রহরীরা বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন, যাঁরা একা এসেছেন তাঁদের জন্য আলাদা বন্দোবস্ত, সপরিবার আসা লোকেদের জন্য আলাদা। ভেতরে ঢুকেই মোবাইল ক্যামেরা বার করে ফেলছে ভিড়টা। নজিরবিহীন এক উল্লাস দেখছে বিদ্রোহী সেনার ঘাঁটি মিসরাতা। অনেকে যদিও মনে করছেন, মৃত্যুর চেয়ে আদালতের কাঠগড়াই বরং গদ্দাফির প্রাপ্য ছিল। কিন্তু সেই সংখ্যাটা নেহাতই নগণ্য।
এ সবের পরেও গদ্দাফির ও তাঁর পুত্রের মৃতদেহের ভবিতব্য কিন্তু অজানা। তাঁদের শেষকৃত্যের স্থান-কাল কিছুই ঠিক হয়নি। বিশেষত রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গদ্দাফির মৃত্যু-রহস্যের তদন্ত করার দাবি তোলায় লিবিয়ার অন্তর্বর্তী প্রশাসন কিছুটা চাপে। অ্যামনেস্টি এ-ও বলেছে, গদ্দাফিকে যদি ঠান্ডা মাথায় খুনই করা হয়ে থাকে, তবে তা যুদ্ধাপরাধেরই সামিল।” পরিস্থিতি সামলাতে লিবিয়ার অন্তর্বর্তী প্রশাসন ন্যাশনাল ট্রানজিশন্যাল কাউন্সিলের প্রধানমন্ত্রী মাহমুদ জিব্রিল মিসরাতায় গিয়ে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু মিসরাতার বিদ্রোহী যোদ্ধারা তাঁকে বলে দিয়েছেন, গদ্দাফির দেহ ওই শহরে সমাহিত করার তাঁরা বিরোধী। এনটিসি-র চেয়ারম্যান মোস্তাফা আবদেল জলিলকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, গদ্দাফির মৃত্যুর তদন্ত হবে কি না। তিনি সংক্ষেপে ‘হ্যাঁ’ বলে দায় সেরেছেন। কিন্তু মিসরাতারই এক বিদ্রোহী কম্যান্ডার বলেছেন, তদন্ত হোক আর যা-ই হোক, গদ্দাফির দেহের ময়না-তদন্ত হচ্ছে না।
কাজেই গোটা ব্যাপারটা ঘিরে ধোঁয়াশা এখনও যথেষ্ট পরিমাণে বহাল। আর সেই ধোঁয়াশাই ঢেকে রয়েছে ‘নতুন লিবিয়া’র অভ্যুদয়কে। এখনও পর্যন্ত যা খবর, সম্ভবত শনিবার ‘স্বৈরতন্ত্রের মুক্তি’র কথা ঘোষণা করা হবে বেনগাজি থেকে। আপাতত লিবিয়ার পক্ষে আশাপ্রদ খবর একটাই। ন্যাটো জানিয়েছে, ৩১ অক্টোবর তারা সরকারি ভাবে লিবিয়া থেকে সরে যাবে। তবে তার আগের কয়েকটা দিন লিবিয়ার আকাশে নজরদারি চালাবে ন্যাটোর বিমান।
লিবিয়ার নয়া নেতৃত্বের আসল চ্যালেঞ্জটা তাই হয়তো নভেম্বরের গোড়া থেকেই শুরু। বাজারে মৃতদেহ দেখতে ভিড় করা বা বন্দুক হাতে যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানো বল্গাহীন জনতাকে সামলানো যার প্রথম ধাপ। |