|
|
|
|
|
খেয়েই ওজন কমান |
পুজোর অনিয়মে শরীর যদি বশে না থাকে? সমস্যা গুরুতর। উৎসব-মরসুম কি কাটবে শুকনো মুখে?
একদমই না। তবে একটু রাশ টানা দরকার। জানালেন ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট শ্রাবণী ভট্টাচার্য |
বিরিয়ানি মাস্ট। সঙ্গে মুরগি, মাটন, কাবাব, রোল। আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিঙ্ক হরদম। নানা ছুতোয় টপাটপ মিষ্টি। পুজোর দিন ক’টাতে মেনু মোটামুটি এর আশেপাশেই ঘোরাফেরা করেছে। ফলাফল: সযত্নে লালিত ফিগার-এর দফারফা। আরে, মা তো ফি-বচ্ছরে এক বারই আসেন! মা’র সম্মানে একটুআধটু বেনিয়ম, কিঞ্চিত মদ্যপান না হলে কি চলে? তবে কিনা উৎসবের এই শুরু। প্রথম ধাক্কাতেই ক্লিন বোল্ড হয়ে গেলে তো মুশকিল। তার চেয়ে একটু শক্ত করে হাল ধরুন। দেখবেন, আগের ফর্মে ফিরে এসেছেন। তবে না খেয়ে নয়, খেয়েদেয়েই ওজন কমিয়ে ফেলুন।
দিনের শুরুতে
চোখ খুলেই এক খাবলা চিনি দিয়ে চা খাওয়া বন্ধ করুন। প্রয়োজনে দিতে পারেন শুগার-ফ্রি। দুধ চা-ও চলতে পারে। তবে দুধটা হতে হবে ডাবল টোন্ড। চা-এর বদলে অল্প গরম জলে লেবু চিপে খেতে পারেন।
বাড়তি ওজন ঝরাতে চাইলে ব্রেড-বাটার-ওমলেটের ব্রেকফাস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসুন। সকালের খাবারে রাখুন পঞ্চাশ গ্রামের মতো হুইট ফ্লেক্স। ওট্স-ও খেতে পারেন, ডাবল টোন্ড দুধে ফুটিয়ে। আসলে ওজন কমাতে সিদ্ধহস্ত ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। আর এ সবেতেই রয়েছে যথেষ্ট ফাইবার। সঙ্গে অবশ্যই দুই-একটা ফল খাবেন।
তবে রোজ একই খাবার না খেয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এটা-সেটা করে খান। সামান্য মার্জারিন মাখিয়ে ব্রাউন ব্রেড খেতে পারেন। আবার নামমাত্র তেলে রান্না কোনও সবজির সঙ্গে দু’টো হাতে গড়া আটার রুটিও খাওয়া যেতে পারে। অবশ্যই সেটা আলুর সবজি নয়। কারণ, ওজন কমাতে হলে প্রতি দিনের খাবারে কমিয়ে দিতে হবে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ।
লাঞ্চ হোক বা ডিনার
শুরু করুন এক গ্লাস জল দিয়ে। দেখবেন খাই খাই ভাবটা কেমন উবে গেছে। এর পর নজর দিন স্যালাড-এ। নুন, লেবু সহযোগে এক বাটি স্যালাড যেন প্রতি দিন খাবারে থাকে। খিদে মিটবে, ওজন কমবে। এর সঙ্গে থাকবে পছন্দ মতো এক বাটি ডাল, অনেকটা সবজি আর মাছ অথবা চিকেন। কারণ কম ক্যালরির খাবারে প্রোটিন জরুরি।
আমিষ না খেলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খান পনির বা সয়াবিন। শেষ পাতে সেঁকা পাপড় আর ঘরে পাতা টক দই। রাতে দইয়ের পরিবর্তে ডাবল টোন্ড দুধ বা শুগার-ফ্রি দিয়ে তৈরি ফ্রুট কাস্টার্ডও চলতে পারে।
ভাত না রুটি
দুই-ই সমান। ওজন কমাতে ভাত খাবেন মেপে আর রুটি খাবেন গুনে। কতটা ওজন কমাতে হবে, তার ওপর নির্ভর করবে পরিমাপ। মোটামুটি ভাবে মাঝারি মাপের কাপের ১-২ কাপ ভাত অথবা ২-৩টি আটার রুটি খাওয়া যেতে পারে। রুটিতে ফাইবার বেশি থাকে। তাই অন্তত এক বেলা রুটি খেতে পারলে ভাল হয়।
একঘেয়েমি কাটাতে
বিকেলে কিছু মুখরোচক খাবার বানাতে পারেন। অঙ্কুরিত ছোলা আর মুগ দিয়ে মুড়ি মেখে খেতে পারেন। স্যান্ডউইচও খাওয়া যেতে পারে। তবে চিজ বা মাখন বাদ দিয়ে। অনেক রকম সবজি মিশিয়ে অল্প তেলে নুডলসও চলবে। এক-আধ দিন ফুচকা খেলেও অসুবিধে নেই। অবশ্যই ঘরে বানানো। পুরে থাকবে অনেকটা ছোলা বা মটর আর নামমাত্র আলু। তেঁতুল জলের সঙ্গে পুদিনার চাটনিও বেশ উপাদেয়।
স্যুপ-এর সঙ্গে শুকনো টোস্টও খাওয়া যেতে পারে। তবে স্যুপ-এ ভুলেও মাখন মেশাবেন না। গোলমরিচেই থেমে যেতে হবে। বিকেলে ভারী জলখাবার হয়ে গেলে স্যুপ আর টোস্ট দিয়েই রাতের খাবারটা সেরে নিতে পারেন।
খাবার খান মেপে
এক বারে অনেকটা না খেয়ে বারে বারে একটু একটু করে খান। চারটে মিল ভেঙে ছ’টা করে নিন। যেমন দুপুরে হালকা কিছু খেয়ে বিকেল চারটের আগে খেতে পারেন ফ্রুট স্যালাড বা খোসা সমেত দু-একটা ফল। ফলের রস খাবেন না। গোটা ফলই বেশি উপকারী।
ওজন কমানো মানে না খেয়ে থাকা নয়। এতে উল্টো বিপত্তি ঘটে। তাই হাতের কাছেই রাখবেন শশা, টমেটো, গাজর। প্রয়োজন মতো খেয়ে নেবেন ক্রিম ক্র্যাকার বা মারি বিস্কুট। আর অবশ্যই প্রচুর জল। জল ওজন কমাতে সাহায্য করে।
মুখ বদলাতে ঘরে আইসক্রিমও তৈরি করে নিতে পারেন স্কিমড মিল্ক আর শুগার- ফ্রি দিয়ে। স্বাদের হয়তো একটু হেরফের হবে। তবুও তো আইসক্রিম। মন ঠান্ডা হবে।
কম ক্যালরির খাবার খেলেই গল্প শেষ নয়। ক্যালরি খরচের কথাটাও মাথায় রাখতে হবে। বলা বাহুল্য, এক্সারসাইজ জরুরি।
নিদেন পক্ষে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে ঘরের কাজকর্মে হাত লাগান। নিজের কাজ নিজেই করার চেষ্টা করুন। অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকলে নিয়ম বেঁধে খাওয়া আর ব্যায়ামেই ঝরবে ওজন।
|
চটজলদি ওজন কমাতে |
• রান্না করুন কম তেলে
• মদ্যপান বাদ। একেবারে না ছাড়তে পারলে পারলে পরিমাণে কমিয়ে আনুন।
• ভাজাভুজির দিকে ফিরেও তাকাবেন না।
• চকলেট, কোল্ডড্রিঙ্ক আর বাইরের আইসক্রিম বাদ
• দুধ আর দুগ্ধজাত খাবার যেন হয় ডাবল টোন্ড দুধের তৈরি।
• কাঁচা নুন খাবেন না।
• কলা খাবেন না। ফাইবার থাকলেও কলায় রয়েছে অনেকটা কার্বোহাইড্রেট। |
|
সাক্ষাৎকার: রুমি গঙ্গোপাধ্যায় |
|
|
|
|
|