|
|
|
|
|
|
|
নাটক সমালোচনা ২... |
|
ত্রুটিহীন নির্দেশনা |
জয়তী রাহা |
প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড় ও বস্তুতান্ত্রিক শিক্ষার ঘেরাটোপে মানুষের দমচাপা জীবন। জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে ভালবাসা, সুখদুঃখের অনুভূতি। বদলে যাচ্ছে জীবনের অর্থ। আসলে ‘জীবন’ মানে কী? জীবন মানে বাঁচার মতো বাঁচা। হাসতে হাসতে শেখা। ‘আনন্দ’, ‘প্রেম’, ‘বিবেক’ আর ‘জীবন’ নামের চরিত্ররা আসলে মানুষের চিরকালীন অনুভূতি। বস্তুতান্ত্রিক জীবনের খোঁজে দিশেহারা মানুষের ঘুমন্ত অন্তরকে জাগিয়ে তোলার কাহিনি ‘ছুটি’। পণ্ডিতের পাঠশালার বইয়ের পাঠের বাইরেও আছে এক জীবন। তারই পাঠ দিতে ওদের গেছোর পাঠশালার পাঠ শিখিয়েছিল ‘আকাশ’। অবশেষে যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্তি পায়। খুঁজে পায় নীল আকাশের রামধনু, চঞ্চল ঝর্না, পাখির গান আর পাহাড়, নদী, সবুজ ঘেরা প্রকৃতিকে। |
|
বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক ‘ছুটি’ নাটকটির রচনা ও নির্দেশনা শুভাশিস রায়চৌধুরীর। প্রযোজনায় গোবরডাঙা ‘রূপান্তর’। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভীক দাঁ, স্বরূপ দেবনাথ, অতনু পাল, গৌতম দাস, চন্দন দেবনাথ, সোমনাথ সিংহ, তপন রায়চৌধুরী ও জীবন অধিকারী।
শুভাশিসের নির্দেশনায় বেশ ভাল লাগে নাটকে ভাটিয়ালি গান ও শব্দের ব্যবহার। তবে মঞ্চসজ্জার ফাঁকটুকু ভরলে দর্শকদের মনে ‘ছুটি’র আমেজ জমবে নিঃসন্দেহে। মিনার্ভায় নাটকের পরবর্তী অনুষ্ঠানটিও ছিল নাটককেন্দ্রিক। গোবরডাঙা ‘শিল্পায়নে’র দীপা ব্রহ্ম শোনালেন লোকগান।
|
নির্দেশনার এক অনন্য নজির শিখা বসু |
রবীন্দ্রসার্ধশতবর্ষে যেন রবীন্দ্রনাটকের জোয়ার এসেছে। রবীন্দ্রনাথকে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক এবং আধুনিক করে তুলতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই হারিয়ে যাচ্ছেন স্বয়ং নাট্যকার। ‘সংলাপ কলকাতা’র সাম্প্রতিক নাটক রত্নাকর দেখতে গিয়ে মনে হল, নাট্যকার ও নির্দেশক কুন্তল মুখোপাধ্যায় তা করেননি।
রবীন্দ্রনাথের ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ অনুসরণে বা বলা যায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি নির্মাণ করেছেন রত্নাকর। একদা দস্যু রত্নাকর কী ভাবে হিংসা থেকে প্রেমে উত্তরিত হল, বেছে নিল অহিংস প্রেমের মধ্যে আত্মানুসন্ধানের পথ, শক্তির আরাধনা ছেড়ে বন্দনা করল বাগদেবীর।
আজকের এই দগ্ধ ধ্বস্ত সময়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে রত্নাকরের মূল সুর আমাদের নাড়িয়ে দেয়। রবীন্দ্রনাটকের ভিড়ের মধ্যে ‘বিশেষ’ হয়ে ওঠে। এই নাটকে কোথাও কোথাও টুকরো ভাবে ব্যবহৃত হয়েছে বাল্মীকি প্রতিভার কিছু সংলাপ, কিছু মুহূর্ত। যা অনেকটাই অভাবনীয় বলা যায়। বিশাল চরিত্রলিপি।
অনবদ্য কোরিওগ্রাফি, কিছু
নৃত্য ও শরীরী মুদ্রা, সুরের প্রয়োগ, আলো এবং পোশাকে যথাযথ রঙের ছন্দবিন্যাস, নাটকীয় ক্ষণের সুচারু উপস্থাপনা। নির্দেশক দক্ষ হাতে নাটকের রাশ ধরে রেখেছেন। কোথাও রসভঙ্গ বা ছন্দভঙ্গ হতে দেননি।
অভিনয় অংশ এত জোরালো যে আলাদা করে কারও নাম করা অসঙ্গত। তবু তিন জন রত্নাকরের মধ্যে (জীবনের তিন অবস্থাভেদে) প্রথম জন গুরুপদ মিত্রের আলাদা করে প্রশংসা না করা অন্যায় হবে। |
|
|
|
|
|