|
|
|
|
|
|
জিটি রোড |
ছবি বদলায় না |
শান্তনু ঘোষ |
বদল হয়েছে প্রশাসনিক পরিকাঠামোর। কিন্তু বদলায়নি চেনা ছবিটা।
কয়েক মাস আগেই জেলা পুলিশ থেকে পরিবর্তন হয়ে হাওড়া শহরে চালু হয়েছে পুলিশ কমিশনারেট। অথচ, এখনও বদলায়নি শহরের ‘লাইফলাইন’ জিটি রোডের বিশৃঙ্খলার ছবিটা। রাস্তার ধারে বেআইনি পার্কিং থেকে শুরু করে দখলদারি, যানবাহনের রেষারেষি, ইচ্ছামতো স্টপ দেওয়া, ‘ওয়ান ওয়ে’ না মানার মতো বিভিন্ন বেনিয়ম চলছে বহাল তবিয়তেই।
যদিও পুলিশকর্তাদের দাবি, আগের থেকে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে জিটি রোড। তবে তাঁরা এটাও স্বীকার করছেন যে, পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যার জন্যই পাকাপাকি ভাবে জিটি রোডে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কিছুটা সময় লাগবে। হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “সরু রাস্তার দু’ধারই দখল হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি, রাস্তার অবস্থাও অত্যন্ত বেহাল। খানাখন্দে ভর্তি। সে জন্যই জিটি রোডে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রয়োজনের তুলনায় ট্রাফিক পুলিশ অনেক কম রয়েছে।”
হাওড়া শহরের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মধ্যে একটি জিটি রোড, অন্যটি কোনা এক্সপ্রেসওয়ে। দক্ষিণে ব্যাতাইতলা মোড় থেকে শুরু করে হাওড়া ময়দান, সালকিয়া, বেলুড় হয়ে বালিখাল পার করে হুগলিতে ঢুকেছে জিটি রোড। হাওড়া সিটি পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ছোট-বড় মিলিয়ে প্রতি দিন গড়ে কয়েক হাজার গাড়ি এই রাস্তা ব্যবহার করে। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পথচারী, প্রত্যেকেরই অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে প্রশাসনের উদাসীনতার জন্য বেহাল অবস্থা জিটি রোডের।
কী কী সমস্যায় জর্জরিত শহরের ‘লাইফলাইন’?
|
|
শহরের দক্ষিণ থেকে শুরু করে উত্তরে বালিখাল পর্যন্ত জিটি রোডে প্রায় ২৫টিবাসস্টপ রয়েছে। কিন্তু এই স্টপগুলিতে আজ পর্যন্ত কেউই কোনও ‘স্টপ লাইন’ মার্কিং দেখেননি। রাস্তা পার হওয়ার জন্যও কোনও জেব্রা ক্রসিংয়ের বালাই নেই। রাস্তার যেখানে খুশি দাঁড়িয়ে হাত দেখালেই থেমে যায় বাস, অটো, ট্যাক্সি। তার উপর রয়েছে যানবাহনের রেষারেষি। রিকশা, ভ্যান, ঠেলা, মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহনের জটে নাভিশ্বাস ওঠে নাগরিকদের। বাসিন্দাদের অভিযোগ, একমুখী ব্যবস্থা থাকলেও অনেক সময়েই ছোট গাড়িগুলি সেই নিয়ম ভেঙে মর্জিমতো চলাচল করে। আবার সালকিয়া, পিলখানা, হাওড়া ময়দান, ফাঁসিতলা, মল্লিক ফটক-সহ বেশ কিছু জায়গায় জিটি রোডের উপরেই যত ক্ষণ খুশি দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী তোলে বিভিন্ন রুটের বাস
ও অটো।
এ সব বিশৃঙ্খলা চলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাতে গোনা এক বা দু’জন লাঠিধারী পুলিশের সামনেই। এক ট্রাফিক পুলিশকর্মীর কথায়: “এক বা দু’জনের পক্ষে এত গাড়ি সামলানো সম্ভব হয় না। এক জনকে আটকাতে গেলে অন্য জন পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।” প্রতি দিনই লিলুয়ায় অফিসে আসেন উত্তরপাড়ার সনৎ রায়। তিনি বলেন, “দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে যাতায়াত করছি। বন্ধ ও ছুটির দিন ছাড়া অন্য কোনও সময় স্বাভাবিক ভাবে যাওয়া যায় না। হাঁটাচলারও কোনও উপায় নেই।”
কয়েক বছর আগে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে জিটি রোডের বিভিন্ন মোড়ে যে সিগন্যাল লাগানো হয়েছিল সেগুলিরও অবস্থা বেহাল। কোথাও সিগন্যালে একই আলো জ্বলে থাকে, কোথাও আবার সিগন্যাল পোস্টই ভেঙে গিয়েছে। সিগন্যাল অপারেটরের ঘরে তালা ঝুলছে। এই বিষয়ে অজেয়বাবু বলেন, “সর্বত্রই সিগন্যালের বেহাল অবস্থা। সিগন্যাল ব্যবস্থা ঢেলে সাজার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর কাছে আবেদন জানিয়েছি। রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থাগুলির সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে।”
|
|
যদিও হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তাদের দাবি, ‘ওয়ান ওয়ে’ মেনে চলা ও রাত ৮টার আগে কোনও লরি বালির দিক থেকে ঢুকতে না দেওয়ায় জিটি রোডে যানজট কিছুটা কমেছে। এমনকী রাস্তার ধারে পার্কিংও কিছুটা কমানো গিয়েছে। যেমন, সালকিয়া চৌরাস্তায় আটোগুলিকে একটি লাইনে দাঁড় করানো হচ্ছে। কিন্তু ভুক্তভোগীদের দাবি, দিনের বেলায় সমস্যা কিছুটা কমলেও রাতে সমস্যা আরও বেড়েছে। রাত ৮টার পরে ‘ওয়ান ওয়ে’ উঠে যায়। তখন বেলুড় থেকে হাওড়ার দিকে সব গাড়িই জিটি রোড ধরে যেতে পারে। সেই সময়ে রাস্তার ধারে লরি, বাস পার্কিংয়ের ফলে জিটি রোড আরও ঘিঞ্জি হয়ে যায়। এর পাশাপাশি যানবাহনের ওভারটেকিংও রয়েছে। আবার কোনও যানবাহন খারাপ হয়ে গেলে তো কথাই নেই। ব্রেকডাউন ভ্যান ভাড়া করে এনে তবেই বিকল গাড়ি সরাতে হয় পুলিশকে।
এ সম্পর্কে পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য: “রাতে পুলিশ দেওয়া সম্ভব নয়। আপাতত দিনের বেলাটা স্বাভাবিক করা হচ্ছে। তবে এটা ঠিক, বালি বা বেলুড়ে কোনও গাড়ি খারাপ হলে শিবপুর পুলিশ লাইন থেকে ব্রেকডাউন ভ্যান যেতে অনেক সময় লাগবে। তাই ভাড়া করতে হয়। এই বিষয়টিও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” |
|
‘লাইফলাইন’-এর হাল ফেরাতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে হাওড়া সিটি পুলিশ?
হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয়বাবু বলেন, “মূলত ট্রাফিক সমস্যা মেটানোর জন্য এক হাজার সিভিক পুলিশ নিয়োগ করা হচ্ছে। তবে যানবাহনের বিশৃঙ্খলা কমাতে ট্রাফিক আইন পুরোপুরি প্রয়োগ করা শুরু করছি। রেষারেষি থেকে শুরু করে স্টপলাইন না মেনে গাড়ি দাঁড় করানো, হেলমেট ছাড়া, তিন জন নিয়ে মোটরবাইক চালানো, ‘ওয়ানওয়ে’ না মানা সব কিছুতেই ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হচ্ছে।”
|
ছবি: রণজিৎ নন্দী |
|
|
|
|
|