হলদিয়ায় একই ভবনে দুইটি কলেজ চলিতেছিল। পূর্বতন বাম জমানায় এই বিচিত্র কাণ্ডের সূত্রপাত। কী রূপে ইহা সম্ভব হইল, অনুমোদনই বা মিলিল কী ভাবে, সেই সব প্রশ্ন উঠিয়াছে। দুইটি কলেজেরই পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা কলেজ নির্মাতা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার শীর্ষ পদে আসীন একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী সি পি আই এম নেতা লক্ষ্মণ শেঠ মহাশয়। শঙ্কা জাগে, একই ভবনে দুই কলেজের বেআইনি কর্মটি তাঁহারই প্রভাবপ্রসূত নহে তো! দামোদর শেঠ অল্পেতে খুশি হইবেন কি না, সেই প্রশ্ন রবীন্দ্রনাথ তুলিয়াছিলেন। লক্ষ্মণবাবুও হয়তো অল্পেতে খুশি নহেন। অতএব একই বাড়ি, দুইটি কলেজ। কারণ যাহাই হউক, তাঁহারই পরিচালনাধীন দুইটি কলেজ যদি বিধিভঙ্গের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহার দায় শেঠ মহাশয়কে গ্রহণ করিতে হইবে বইকি! অভিযোগের অঙ্গুলি পূর্বতন বাম সরকারের প্রতিও নিবদ্ধ হইবে। ঠিক কী পরিমাণ নির্বিচারে কলেজ খুলিবার অনুমোদন দেওয়া হইয়াছিল, যথাযথ পরিকাঠামো আছে কি না, সেই মৌলিক বিষয়ে ন্যূনতম নজরও দেওয়া হয় নাই, এই জোড়া কলেজের সংকটই তাহার প্রমাণ। একটি কলেজের কথা বেমালুম চাপিয়া গিয়া অন্য কলেজটিকে দেখানো হইয়াছিল। এই ধরনের গর্হিত অপরাধ এই কলেজের পরিচালন সমিতি করিয়াছে। কলেজ, নিশ্চিত ভাবেই, সূচ নহে যে খড়ের গাদায় লুকাইয়া ফেলিলে সন্ধান করিতে প্রাণান্ত হইবে। অথচ, তাহাই যখন খাতায় কলমে লুক্কায়িত থাকে এবং পরে মওকা বুঝিয়া আত্মপ্রকাশ করে, তখন বুঝিতে হইবে, গভীরে অন্য কিছু আছে। মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া, সংক্ষেপে এম সি আইয়ের পরিদর্শন এবং সুপ্রিম কোর্ট-এর রায়দানের পরে, আশা করা চলে, যথাযথ দোষীর সন্ধান শুরু হইবে। দোষী প্রতিষ্ঠানের শাস্তিদানের কাজও শুরু হইবার কথা। ইত্যবসরে একটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। যে সকল পড়ুয়া এই বৎসর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হইয়াছিলেন, তাঁহাদের পঠনপাঠনের যাহাতে কোনও রকম ক্ষতি না হয়, তাহা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
প্রত্যাশিত ভাবেই, পড়ুয়াদিগের স্বার্থরক্ষা বিষয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়াছে। এম সি আই এক পক্ষে, অন্য দিকে রাজ্য। এম সি আইয়ের বক্তব্য, পড়ুয়াদের অন্য মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হউক, অতিরিক্ত আসনের অনুমোদন যথাশীঘ্র দেওয়া হইবে। রাজ্য বলিতেছে, বেসরকারি কোনও কলেজের গর্হিত কাজকর্মের দায় তাঁহারা কেন গ্রহণ করিবেন? দুই তরফেই কিছু সত্য আছে, কিন্তু তৃতীয় আর একটি সত্যও বিদ্যমান। যাঁহারা সরকার-অনুমোদিত একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হইয়াছেন, তাঁহারা কোনও অপরাধ করেন নাই। সংশ্লিষ্ট কলেজ কী রূপে অনুমোদন পাইয়াছিল, সেই প্রশ্ন সঙ্গত। কিন্তু এই কথাটি সংশ্লিষ্ট পড়ুয়া এবং তাঁহাদের অভিভাবকদের জানিবার কথা নহে। খাতায়-কলমে অনুমোদনপ্রাপ্ত একটি কলেজে তাঁহারা আসিয়াছেন। কলেজটির পরিকাঠামো যথাযথ কি না, তাহা খতাইয়া দেখা উচিত ছিল। তাহা কত দূর দেখা হইয়াছে, সন্দেহ। সুতরাং, তাঁহাদের বিবেচনাবোধ লইয়া প্রশ্ন উঠিতেই পারে, কিন্তু কলেজে আসিয়া তাঁহারা অন্তত কোনও বেআইনি কাজ করেন নাই। সুতরাং, পড়ুয়াদের পঠনপাঠনের ভবিষ্যৎ যাহাতে সুরক্ষিত থাকে, তাহা নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই কর্তব্য। একটি শিক্ষা গ্রহণও জরুরি। এই জাতীয় যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছত্রাকের ন্যায় এ দিক ও দিক গজাইয়া উঠিয়াছে, তাহাদের সম্পর্কে যথাবিহিত অনুসন্ধান, এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। |