রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত মিটল বাজি বাজারের সমস্যা। গত ১৫ বছর ধরে ময়দান চত্বরে বাজির ওই বাজার বসলেও এ বছর প্রথমে সেই বাজার বসার অনুমতি দেয়নি সেনাবাহিনী। বিস্তর জলঘোলার পরে শেষ পর্যন্ত বড়বাজারের বাজি ব্যবসায়ীরা সমস্যার সমাধানের জন্য রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ নিয়ে ওই ব্যবসায়ীদের সংগঠন বৈঠক করে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মুখ্যসচিব সমর ঘোষের সঙ্গে। সংগঠনের সম্পাদক সঞ্জয়কুমার দত্ত জানান, দু’জনেই বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ ময়দানে বাজি বাজার বসার ছাড়পত্র আসে দিল্লি থেকে। এর পরেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা ওই ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্তাদের ফোন করে খবরটি দেন।
সঞ্জয়বাবু জানান, ১৯৯৫ সাল থেকেই ময়দানেই বাজি বাজার বসে। যোগ দেন প্রায় ৮০ জন ব্যবসায়ী। প্রতি বছর গড়ে দশ কোটি টাকার ব্যবসা হয় এখানে। আগে প্রতিবার ফোর্ট উইলিয়াম থেকে অনুমতি মিললেও এ বছর তা দিতে অস্বীকার করেন সেনাবাহিনীর কর্তারা। তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, এই বাজার বসাতে হলে দিল্লির অনুমতি লাগবে।
কিন্তু কী কারণে সেনা প্রাথমিক ভাবে অনুমতি দিল না?
সেনাবাহিনী সূত্রের খবর, বাজি বাজার একটি বাণিজ্যিক উদ্যোগ। তাই সেনার অধিকারে থাকা ময়দানে এই ধরনের অনুষ্ঠানের অনুমতি একমাত্র দিল্লির সদর দফতর থেকে আনতে হয়। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র, গ্রুপ ক্যাপ্টেন তরুণকুমার সিঙ্গা জানিয়েছিলেন, ফোর্ট উইলিয়াম থেকে অনুমতিপত্রের আবেদন সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। দিল্লি থেকে যা নির্দেশ আসবে, সেই অনুযায়ী কাজ হবে। এ দিন দিল্লির অনুমতি মিলে যাওয়ায় এ বছরের বাজি বাজার নিয়ে আর কোনও সমস্যা রইল না বলেই জানান ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গত ১৫ বছর ধরে বাজি বাজার বসলেও এত দিন বাণিজ্যের বিষয়টি সেনা-কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি কেন? সেই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।
শুক্রবার দুপুরেও লালবাজারে বাজি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও দমকলের একটি বৈঠকে ব্যবসায়ীরা বলেন, সেনা আদৌ অনুমতি দেবে কি না, তা জানিয়ে দেওয়া হোক। অনুমতি না মিললে তাঁরা শহরের অন্য কোথাও বাজার বসানোর কথা ভাববেন। ওই সংগঠন সূত্রের খবর, ময়দানের পরিবর্তে পার্ক সার্কাস ময়দানই ছিল তাঁদের প্রথম পছন্দ। কিন্তু পার্ক সার্কাস ময়দানে অন্য একটি মেলা চলায় স্থান সঙ্কুলান ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। মিলনমেলা প্রাঙ্গণেও বাজি বাজার বসানোর ভাবনা ছিল সংগঠনের কর্তাদের। কিন্তু মিলনমেলা প্রাঙ্গণে বাজার বসা নিয়ে আপত্তি ছিল সংগঠনের বহু প্রতিনিধিরই। তাঁদের যুক্তি ছিল, বাইপাসের ধারে বাজার বসলে বিক্রি ভাল হবে না। তাই, ময়দানে বাজার না বসলে এ বছর বড় সমস্যায় পড়তেন ব্যবসায়ীরা। মহাকরণ সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শেষ মুহূর্তে দিল্লি থেকে অনুমতি মেলায় এ বছরের জন্য নিশ্চিন্ত হলেন বাজি ব্যবসায়ীরা।
তবে, এই প্রথম নয়। এর আগেও বাজি বাজার বসা নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। ২০০৯ সালে ৫৫টি বাজির মধ্যে ৪১টি বাজির শব্দমাত্রা ৯০ ডেসিবেল অতিক্রম করে যাওয়ায় সেগুলিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। ফলে, প্রাথমিক ভাবে বাজি বাজার বসবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন দফতরের অনুমতি পাওয়ায় বাজি বাজার বসেছিল ময়দান চত্বরেই।
এ দিন লালবাজারের বৈঠকে সেনাবাহিনীর প্রতিনিধির কাছ থেকে নিশ্চিত আশ্বাস না-পেয়ে ফের মহাকরণে যান ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। সেখানে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁদের একপ্রস্ত কথা হয়। এর পরে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর কানে যায়। মহাকরণ সূত্রের খবর, তাঁর নির্দেশে পার্থবাবু প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে কথা বলেন। তার পরে জটিলতা কাটে। এ দিন মহাকরণ থেকে বেরোনোর পরেই পুলিশ কমিশনারের দফতর থেকে ফোন যায় সঞ্জয়বাবুদের কাছে। দীর্ঘ টালবাহানার পরে এই অনুমতি মেলায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশি বাজি ব্যবসায়ীরা। তাঁদের সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন, রাজ্য প্রশাসন ও লালবাজার কর্তাদের। সঞ্জয়বাবু বলেন, “যে ভাবে সরকার ও কলকাতা পুলিশ সাহায্য করেছে, তার জন্য আমার কৃতজ্ঞ থাকব।” |