নেই হিমঘর, সব্জি সংরক্ষণ নিয়ে হয়রানি
ব্লক জুড়ে সারা বছর ধরে বিভিন্ন সব্জির চাষ হয়। অথচ সেই সব সব্জি সংরক্ষণের জন্য নেই কোনও হিমঘর। বেশির ভাগ সময়ে মাঠ থেকে তুলে অল্প দামেই ফসল বিক্রি করে দিতে হয়। আবার সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় কখনও কোনও কারণে সব্জি নষ্ট হয়ে গেলে বাজারে জোগান কমে যায়। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের চাষিরা তাই এলাকায় সব্জি সংরক্ষণের জন্য একটি হিমঘর গড়ার দাবি তুলেছেন।
কালনা মহকুমায় সব থেকে বেশি সব্জি চাষ হয় পূর্বস্থলী ২ ব্লকে। প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে সব্জি চাষ হয় এই ব্লকে। বিশ্বরম্ভা, স্বরডাঙা, দুবরাজপুর, চাপাতলা, মুড়াগাছা, নিমদহ, কালেখাঁতলা, ফলেয়া, মেড়তলা, চণ্ডীপুর, পারুলিয়া ইত্যাদি এলাকার বহু চাষি সারা বছর ধরে বিভিন্ন সব্জি চাষ করেন। সব থেকে বেশি চাষ হয় রবি মরসুমে। পটল, উচ্ছে, ঢ্যাঁড়স, শসা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, বিট ইত্যাদি চাষিরা জমি থেকে তুলে সরাসরি পাইকারি বাজারে নিয়ে আসেন চাষিরা। সেখানে বিভিন্ন আড়তদারদের কাছে ফসল বিক্রি করেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত, এমনকী ভিন্ রাজ্যের ব্যবসায়ীরা এই সব পাইকারি বাজারে ট্রাক নিয়ে এসে আড়তদারদের থেকে সব্জি কিনে নিয়ে যান। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কালেখাঁতলা এলাকার পাইকারি বাজারে শীতের মরসুমে প্রতি দিন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে অন্তত একশো ট্রাক সব্জি কিনে নিয়ে যায়।
আড়তে ডাঁই হয়ে পড়ে সব্জি। কালেখাঁতলায় ছবিটি তুলেছেন কেদারনাথ ভট্টাচার্য।
চাষিদের ক্ষোভ, প্রচুর সব্জি উৎপাদন হলেও তা সংরক্ষণের কোনও জায়গা নেই। মহকুমায় এক মাত্র সব্জি হিমঘরটি রয়েছে কালনা শহর সংলগ্ন জিউধারা এলাকায়। এক দিকে যেমন সেটি আয়তনে ছোট, তেমনই পূর্বস্থলী-২ ব্লকের এক একটি গ্রাম থেকে তার দূরত্ব কোথাও ৫৫ কিলোমিটার, কোথাও বা তার থেকেও বেশি। ফলে ফুলকপি, বাঁধাকপির মতো সব্জির অভাবি বিক্রি শুরু হলে অধিকাংশ চাষিরই জমি থেকে ফসল তুলে হিমঘরে নিয়ে আসার মানসিকতা থাকে না। বাধ্য হয়ে অনেকে তা গরুকেও খাইয়ে দেন। আবার অতিবৃষ্টির জেরে মাঝেমধ্যেই গোড়া পচা রোগে বিঘার পর বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তখন স্থানীয় বাজারগুলিতেও ভাল সব্জির জন্য হাহাকার ওঠে। চাষিদের দাবি, হিমঘর থাকলে এই সমস্যা মারাত্মক হবে না। ফসলের দাম কম হলে, তা বিক্রি না করে তখন হিমঘরে মজুত রাখা যাবে। আবার কোনও এক মরসুমে অতি বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হলে হিমঘরে মজুত রাখা সব্জিই জোগান দেওয়া যাবে স্থানীয় বাজারে। এতে উপকৃত হবেন চাষি ও ক্রেতা দু’পক্ষই। সম্প্রতি সব্জির অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির জেরে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে কালনা মহকুমাশাসকের দফতরে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক বসে। স্থানীয় বাজারগুলির উপরে নজরদারির জন্য তৈরি হয় টাস্ক ফোর্স। বৈঠকেই উঠে আসে মহকুমার সব্জি উৎপাদনের মূল ভাণ্ডার পূর্বস্থলী ২ ব্লকে হিমঘর না থাকার সমস্যার কথা।
সব্জির হিমঘর না থাকার পাশাপাশি পূর্বস্থলী ২ ব্লকে সব্জি বিক্রির পাইকারি বাজারগুলির করুণ দশা। কালেখাঁতলা পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা গিয়েছে, সেখানে না আছে পানীয় জলের ব্যবস্থা, না আছে কোনও শৌচাগার। চাষিদের জন্য কোনও বিশ্রামগারও নেই সেখানে। পাইকারি বাজারের সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী রাস্তাগুলির করুণ দশা। এই পাইকারি বাজারে রয়েছেন ৩৫ জন আড়তদার। পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে তাঁদের মধ্যে। চিত্তরঞ্জন দাস, রামকৃষ্ণ মণ্ডলদের কথায়, “এ বাজার থেকে প্রতি দিন ১০০ গাড়ি সব্জি দেশের নানা প্রান্তে পৌঁছলেও সরকারি ভাবে মালপত্র মাপজোকের কাজ করার জন্য মেলেনি কোনও জমি। সারা দিনই আমাদের কাজ সারতে হয় বেসরকারি ভাড়া জমিতে। অথচ, প্রতি বছর আমাদের সরকারি ভাবে খাজনা দিতে হয়। নিয়মিত খাজনা নিতে আসেন বাজার কমিটির লোকজনেরা।” আর এক আড়তদার মৃত্যুঞ্জয় মাহাতোর অভিযোগ, “খাজনা নেওয়ার সময় প্রতি বারই নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটির কর্মীরা আশ্বাস দেন, পাইকারি বাজারের হাল ফিরবে। অথচ, বছর ঘুরে যায়, সমস্যার সমাধান হয় না।”
পূর্বস্থলী ২ ব্লকে সব্জির হিমঘর তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করেছে মহকুমা প্রশাসন। মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন, “এ নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে জেলা উদ্যান পালন বিভাগের সঙ্গে। প্রয়োজনীয় জমি জোগাড়ের জন্য পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়কের সঙ্গে কথা হয়েছে।” পাশাপাশি মহকুমাশাসক জানান, জেলা প্রশাসনের আর্থিক সাহায্যে সব্জির পাইকারি বাজারের পরিকাঠামো উন্নত করা হবে। এছাড়া পাইকারি বাজারের পরিকাঠামো উন্নয়নে সাহায্য করবে নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটি। পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “একটি নয়। এলাকায় দু’টি হিমঘর প্রয়োজন। এক ব্যক্তির সঙ্গে কথাবার্তা অনেকটাই এগিয়েছে। হিমঘর তৈরির জন্য বড়গাছি মোড়ে তিন বিঘা জমি দিতে চেয়েছেন তিনি।”
কবে এই প্রকল্প দিনের আলো দেখবে, তা নিয়ে অপেক্ষায় চাষিরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.