দুর্গাপুরে পথের কাঁটা ডিভিসি মোড়ের খাটাল
রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনা ও আধুনিকতার অন্যতম মুখ দুর্গাপুর। অথচ শহরের মাঝেই ডিভিসি মোড়ে রমরমিয়ে চলছে খাটাল।
আজ নয়, তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এই খাটালের অস্তিত্ব। আশপাশের এলাকায় অবিরত দুর্গন্ধ ছড়ানো তো আছেই। রাস্তা নোংরা করা ছাড়াও যখন তখন পথ জুড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে মোষের দল। অবিলম্বে খাটালগুলি সরিয়ে এলাকার সৌন্দর্যায়নের দাবি তুলেছেন শহরবাসী। পুরসভার ডেপুটি মেয়র শেখ সুলতানের আশ্বাস, কেন্দ্রীয় রাজীব আবাস যোজনার মাধ্যমে খাটাল মালিকদের বাড়ি করার পরিকল্পনা দিয়ে এলাকা ফাঁকা করার চেষ্টা করবে পুরসভা।
ডিভিসি মোড়ে জাতীয় সড়কের দু’পাশে সরকারি জমি দখল করে ভিন রাজ্য থেকে আসা প্রায় আড়াইশো পরিবার বসবাস করছে, যাদের প্রধান পেশা খাটাল ব্যবসা। বস্তির ভিতরে রাস্তাঘাট তেমন ভাল নয়। তবে পানীয় জলের কুয়ো আছে বেশ কয়েকটি। আছে বিদ্যুৎ সংযোগও। অধিকাংশ পরিবারেরই বসবাস আশির দশকের গোড়া থেকে। কয়েকটি পরিবার আবার তারও আগে এসেছে। যথেষ্ট অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। বাড়ির দোরগোড়ায় বাঁধা গরু, মোষের পাল। পাশে খড়ের গাদা। জল-গোবর-খড়ের বিচালির সম্মিলিত গন্ধ খাটাল ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে জাতীয় সড়কে। বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব। জাতীয় সড়ক ধরে যাওয়া যে কোনও গাড়িরই সওয়ারির খাটালের উপস্থিতি বুঝতে দেরি হয় না। রাখাল-বালকেরা মোষের দল নিয়ে যায় পাকা রাস্তা ধরে। রাস্তা নোংরা করা তো আছেই। সেই সঙ্গে আটকে পড়ে গাড়ি-ঘোড়াও।
গত এক দশকে দুর্গাপুর শহর অনেকখানি বদলেছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হয়েছে মাল্টিপ্লেক্স, শপিং মল, তারকা হোটেল, বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থার শো-রুম, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজ। নতুন নতুন কারখানা-অফিস হওয়ায় শহরের লোকসংখ্যাও অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে ক্রমশ জোরালো হয়েছে পরিকল্পিত নগরায়নের দাবি। পুরসভার পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে দিয়ে বিভিন্ন বস্তি উচ্ছেদ করা হয়েছে। অথচ শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ডিভিসি মোড়ের খাটাল উচ্ছেদ নিয়ে পুরসভা আদৌ কোনও পরিকল্পনা নেয়নি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
সম্প্রতি খাটালে গিয়ে দেখা যায়, সাধু যাদব, রাম যাদব, বিজয়কুমার যাদব, বাবলু রাই, সুমুল রাইয়েরা খাটিয়ায় বসে খোশগল্প করছেন। তাঁরাই জানান, কেউ-কেউ পঞ্চাশ বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন। সব পরিবারই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে খাটাল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। শহরের দৈনন্দিন দুধের একটা বড় অংশ তাঁরাই সরবরাহ করেন। তাঁদের বক্তব্য, পুরসভা বস্তিতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু বাকি পরিষেবা তেমন মেলে না। পাকা বাড়ি পেলে তাঁদের বেশির ভাগই অন্যত্র যেতে রাজি। কিন্তু সেখানেও খাটাল চালানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। বিজয়বাবু বলেন, “তা না হলে আমাদের সংসার চলবে কী করে? দেশের বাড়িতেও নিয়মিত টাকা পাঠাতে হয়। খাটাল না চললে তা আসবে কোথা থেকে?”
তবে শহরের প্রান্তিক এলাকায় যেতে রাজি নন খাটালের বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, তাতে রোজগারের ক্ষতি হবে। ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে, এমন জায়গায় বাড়ির ব্যবস্থা করে দিলে তাঁদের যেতে আপত্তি নেই। পুরসভা সূত্রে জানা যায়, আগে শহরের অন্যত্রও বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু খাটাল ছিল। জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে দিয়ে বেশ কিছু পরিবারকে সরানো হয়েছে। সেই ভাবেই ডিভিসি মোড়ের খাটালগুলিকেও সরানোর ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা চলছে। ডেপুটি মেয়র জানান, কেন্দ্রীয় রাজীব আবাস যোজনার কাজ শুরু হলে ওই প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে ডিভিসি মোড়ের পরিবারগুলিকে সরানোর পরিকল্পনা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনে এডিডিএ-র কাছেও সাহায্য চাইবেন তাঁরা।
দুর্গাপুর দ্রুত পাল্টাচ্ছে। খাটাল শেষমেশ কবে সরে, সেটাই এখন দেখার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.