ত্রয়োদশীতে কাঠামো পুজো সেরে বোধন শুরু হয়ে গেল জরুরের বামকালী পুজোর। পূর্ণিমা পেরোলে বুধবার থেকেই মাটি পড়বে সেই কাঠামোয়।
এই পুজো ঘিরে রয়েছে নানা জনশ্রুতি। ভরদুপুরে গ্রামের পশ্চিমপ্রান্তে ধানী জমির পাশে উঁচু ঢিবির উপরে নেহাৎই খেলাচ্ছলে গ্রামেরই দনা কয়েক বালক মিলে বানিয়েছিলেন কাদামাটির একটি কালীমূর্তি। সে প্রায় তিনশো বছর আগের কথা। ওই বালকেরা মূর্তির বাঁ পাটিকে ভুল করে সামনে রেখেছিলেন। তারপর শুরু হয়েছিল পুজো পুজো খেলা। কচুর ডাঁটা ছিল খড়্গ। খেলাই যখন, বালকেরা নরবলির কথাও ভেবেছিল। এক বালককে শুইয়ে সেই কচুর খড়্গ তার গলায় ঠেকাতেই জনশ্রুতি, তা দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। ভয় পেয়ে তার বন্ধুরা পালিয়ে যায়। সেই রাত্রেই স্থানীয় জমিদার ওই ঢিপি থেকে আবিষ্কার করেন একটি কালী প্রতিমা। প্রতিষ্ঠাও করা হয় তার। শুরু হয় পুজোও। সেই কাহিনিকেই সামনে রেখে এখনও পুজো হয়। এই দেবীর বাঁ পা-ই এখনও সামনে এগোনো। এই গ্রাম থেকে শুরু করে সেই কাহিনি ছড়িয়ে পড়েছে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে। সেই কাহিনিই যেন প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছে এই উৎসবের। কাহিনির আকর্ষণেই এখনও বহু মানুষ আসেন পুজোয়।
জরুর গ্রামেরই রায়, সেন ও মল্লিক বংশের পারিবারিক পুজো হলেও তাই এই বামকালীর পুজো হয়ে উঠেছে গোটা এলাকারই পুজো। রায় বংশের প্রবীণ কলেজ শিক্ষক আশিস রায় বলেন, “খেলাচ্ছলে সেই দিন যাঁরা এই মূর্তি গড়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন গ্রামেরই একাধিক পরিবারের সন্তানেরা। সেখানে জাতপাত কোনও বাধা ছিল না। সেই কারণেই এখনও এই পুজোয় অংশ নেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ। সম্প্রীতির মেলাও অনুষ্ঠিত হয় দু’দিন ধরে।” স্থানীয় বাসিন্দারা এই পুজোর জন্য অপেক্ষা করেন বছরভর। আশিসবাবু বলেন, “ছোটবেলায় দেখেছি গ্রামের শেখ পরিবারের বধূরা দুপুরে দল বেঁধে আসতেন মন্দিরে। সরায় জল আর কাপড় দিয়ে সলতে পাকাতেন তাঁরা। সেই সলতে দিয়েই রাতে জ্বালানো হত প্রদীপ। সেই প্রদীপের আলোয় শুরু হত পুজোর আয়োজন। মির্জাপুর থেকে শাঁখারিদের আনা হত। গ্রামের বিভিন্ন পরিবার থেকে আসত খড়, পাঁকাটি। এই ভাবেই গ্রামশুদ্ধু লোক শরিক হতেন পুজোর।”
কিন্তু এখন সেই সমারোহ আর দেখা যায় না। হাট অনেকটাই ভাঙা। গ্রামের প্রবীণেরা জানান, আসলে অনেক পরিবারই ভেঙে গিয়েছে। অনেকেই গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন। অনেকের পরিবারে গ্রামে রয়েছেন এক দু’জন। উদ্যোগী পরিবারগুলিই আর আগ্রহী নয়। পুজোর সময় দু’দিন গ্রামে এসেই তাঁরা ফিরে যান। তাই টানটাও আস্তে আস্তে কমছে।” শেখ পরিবারের আইনাল শেখ বলেন, “এই গ্রামে কিন্তু এই কালীপুজো মানুষকে একত্র করে রেখেছে।”
সেনগুপ্ত পরিবারের অরূপবাবু বলেন, “আগের মতো আর সব কিছু করা যায় না তা যেমন ঠিক, তেমনই রীতি নিয়ম কিন্তু যথাসাধ্য মানা হয়, তা-ও ঠিক। বুধবার থেকেই শুরু হয়ে যাবে মূর্তি তৈরির কাজ। পুজোর দিন গভীর রাতে প্রতিমাকে নিয়ে যাওয়া হবে মন্দিরে। সেখানে পরানো হবে সোনার গহনা।” |