|
|
|
|
সিপিএম নেতার বাগানে অস্ত্র কারখানার হদিস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মালদহ |
এক সিপিএম নেতার লিচুবাগানে হানা দিয়ে বড় মাপের অস্ত্র তৈরির কারখানার হদিস পেল মালদহ জেলা পুলিশ। সোমবার সকালে কালিয়াচক থানার মুজমপুরের বালুগ্রামে আসাদুল্লা বিশ্বাস নামে ওই সিপিএম নেতার বাড়ির পিছনের লিচুবাগানে হানা দেয় পুলিশ। কারখানা থেকে শতাধিক রাইফেল ও রিভলভার তৈরির সরঞ্জাম ও অস্ত্র তৈরির ৩০ রকমের যন্ত্রাংশ উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে ২০টি দেশি রাইফেল প্রায় তৈরিই হয়ে গিয়েছিল। ঘটনার সময়ে ওই সিপিএম নেতা বাড়িতে ছিলেন না। এলাকায় রাজনৈতিক সংঘর্ষের জেরে তিনি বেশ কিছুদিন ধরে এলাকা ছাড়া। ওই কারখানা থেকেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। কালিয়াচক থানার দাবি, তারা লিচুবাগানে পৌঁছতেই দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।
জেলার পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “সিপিএম নেতা আসাদুল্লা বিশ্বাসের বাড়ির পিছনে লিচুবাগানে বেশ কিছুদিন ধরেই বাইরে থেকে দুষ্কৃতীদের এনে অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছিল। বেআইনি অস্ত্র কারখানা থেকে প্রচুর অস্ত্র তৈরি হয়ে বাইরে চলে গিয়েছে বলেও প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। এই ঘটনায় ওই সিপিএম নেতার হাত রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “বহুদিন থেকেই পুলিশকে বলেছিলাম কালিয়াচকে বেআইনি অস্ত্র কারখানা আছে। সেগুলি বন্ধ না করলে কালিয়াচকে রাজনৈতিক সংঘর্ষ বন্ধ হবে না, সে-কথাও পুলিশকে বলেছি। পুলিশ কিছুই করেনি। কালিয়াচকে এখনও অনেক বেআইনি অস্ত্র তৈরির কারখানা আছে।” |
|
উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায় |
দলের নেতার লিচুবাগানে পুলিশ বেআইনি অস্ত্র কারখানার সন্ধান পেতেই চরম অস্বস্তিতে পড়েছে জেলা সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদক জীবন মৈত্র বলেন, “যে লিচুবাগানে বেআইনি অস্ত্র তৈরির কারখানা সন্ধান পাওয়া গিয়েছে সেটি আমাদের দলের সদস্যের হলেও বছর খানেক আগে তিনি জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন, তাঁর জমিতে কেউ বেআইনি ভাবে পোস্ত চাষ করছে। তিনি ওই জমিতে ঢুকতে পারছেন না। সুতরাং ওই বেআইনি অস্ত্র তৈরির কারখানার সঙ্গে দলের কেউ জড়িত নয়।”
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরে মোজমপুরের সিপিএমের সঙ্গে ইমাম জাগির ও নারায়ণপুরের কংগ্রেস কর্মীদের সংঘর্ষ চলছে। ওই সংঘর্ষের জেরে আসাদুল্লা বিশ্বাস ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এলাকা ছাড়া। তা সত্ত্বেও পুলিশের অভিযোগ, প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে আসাদুল্লা বিশ্বাস বাইরে থেকে দুষ্কৃতী এনে নিজের এলাকায় বেআইনি অস্ত্র তৈরি করাচ্ছিলেন। যদিও আসাদুল্লা বলেন, “১২ দিন ধরে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যেরা কলকাতায় আছি। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক কারা বাইরে থেকে দুষ্কৃতী এনে বেআইনি অস্ত্র তৈরি করাচ্ছিল। আমি জানি পুলিশ আমার বিরুদ্ধে ফের আর একটা মিথ্যা মামলা করবে। আমি পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে যাব।”
পুলিশের দাবি, কিছুদিন আগে তাঁরা জানতে পারেন বিহার থেকে ৫ জন দুষ্কৃতীকে এনে মোজমপুরে বেআইনি ভাবে অস্ত্র তৈরি হচ্ছে। এ দিন মালদহ থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে তল্লাশি শুরু হয়। কালিয়াচক থানার আইসি রাজীব ভট্টাচার্য বলেন, “চারদিক ঘন লিচুবাগানের জন্য কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। একটি জলাশয় পেরিয়ে লিচুবাগানের কাছে পৌঁছতেই অস্ত্র তৈরির কারখানার হদিস পাই। কিন্তু যারা বেআইনি অস্ত্র তৈরি করছিল তারা সবাই পালিয়ে যায়। কাউকে ধরতে পারিনি।” |
|
|
|
|
|