সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বন্দুকের ভুয়ো লাইসেন্স নিয়ে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে কাজ করার চক্রের হদিস পেয়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীকে ওই অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার হয়েছে মোট ৮টি বন্দুক।
পুলিশের দাবি, এই চক্রের মূল পাণ্ডা পুরুলিয়া শহরের একটি বন্দুকের দোকানের মালিক। চণ্ডী কর্মকার নামে ওই ব্যবসায়ীকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে। রবিবার তাঁকে রঘুনাথপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তিন দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সোমবার ধৃত ব্যক্তিকে নিয়ে পুরুলিয়া শহরে তাঁর দোকানে তল্লাশিও চালায় পুলিশ। রঘুনাথপুরের এসডিপিও দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানান, দোকান থেকে বন্দুকের লাইসেন্স এবং বন্দুক বিক্রি সংক্রান্ত কিছু নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বন্দুকের ভুয়ো লাইসেন্স নিয়ে কিছু লোক বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেছে, এই খবরের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তে নেমে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে গ্রেফতার করেছিল কৃষ্ণা সিংহ ও তাপস চক্রবর্তী নামের দুই নিরাপত্তারক্ষীকে। সাঁওতালডিহি ও বলরামপুরের এই দুই বাসিন্দা বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী হিসাবে কাজ করছিলেন বিদ্যুৎকেন্দ্রে। তাঁদের কাছ থেকে ভুয়ো লাইসেন্স ও বন্দুক বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। ধৃতদের জেরা সাঁওতালডিহি থানার ওসি অসিত পাণ্ডের নেতৃত্বে পুলিশ ঝাড়খণ্ডের বোকারোয় গিয়ে গ্রেফতার করে ভবতোষ মাহাতো ও রাখহরি বাউরি নামের আরও দুই বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীকে। এই দু’জনও আগে সাঁওতালডিহি বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করতেন। পরে বোকারোয় নিরাপত্তাকর্মীর কাজ নিয়েছিলেন।
এসডিপিও-র দাবি, তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, পুরুলিয়া শহরের ওই বন্দুকের দোকানের মালিক ভুয়ো লাইসেন্স তৈরি করে বন্দুক বিক্রি করার ব্যবসা চালাচ্ছিলেন অনেক দিন ধরেই। শুধু সাঁওতালডিহি নয়, আসানসোল-রানিগঞ্জ-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলেও বিভিন্ন কারখানায় ও খনিতে জাল লাইসেন্স দিয়ে বন্দুক বিক্রির কারবার ফেঁদেছিলেন এই ব্যবসায়ী। ব্যবসার জাল ছড়িয়েছিল ঝাড়খণ্ডেও। এ ছাড়া তাঁর দোকান থেকে বন্দুক কেনা এমন কিছু ব্যক্তি, যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের লাইসেন্স নম্বর ব্যবহার করে ভুয়ো লাইসেন্স বানানোর কাজও করতেন চণ্ডীবাবু। তদন্তে নেমে জাল লাইসেন্স থাকা দু’টি একনলা ও ৬টি দোনলা বন্দুক উদ্ধার করেছে পুলিশ। এগুলির মধ্যে ৬টি বন্দুক মিলেছে সাঁওতালডিহি এলাকা থেকেই। বাকি দু’টি বাজেয়াপ্ত হয়েছে বোকারো থেকে। পাশাপাশি ৩০ রাউন্ড কার্তুজও উদ্ধার হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, চণ্ডী কর্মকার নামে ওই দোকান মালিকের বিরুদ্ধে আগেও ভুয়ো লাইসেন্স তৈরি করে বন্দুক বিক্রি করার অভিযোগ দায়ের হয়েছে কলকাতার তিলজলা, বর্ধমানের দুর্গাপুর ও বীরভূমের দুবরাজপুর থানায়। ওই ঘটনাগুলির তদন্ত করছে সিআইডি। এসডিপিও বলেন, “সিআইডি আগেই ওই ব্যক্তির দোকান থেকে নথিপত্র সিজ করেছে। সোমবারের তল্লাশিতে গত দু’বছরের বন্দুক বিক্রি ও লাইসেন্স তৈরির নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে।” সাঁওতালডিহি ছাড়াও রঘুনাথপুর ও লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের বেশ কিছু কারখানায় ভুয়ো লাইসেন্স নিয়ে নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে নিয়োগের চক্র জাল বিছিয়েছে বলে পুলিশের সন্দেহ। এসডিপিও-র কথায়, “বিশদে তদন্তের জন্য সিআইডি-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।” |