দুর্গাপুজোর ভাসানের পরে জলদূষণ রুখতে গত কয়েক বছর ধরে প্রশাসনিক পর্যায়ে তৎপরতা বেড়েছে বিভিন্ন এলাকায়। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পষর্দও এ ব্যাপারে পুরসভাগুলির কাছে আবেদন রেখেছে। হাইকোর্টের নির্দেশও আছে। কয়েক বছর ধরে সচেতনা বেড়েছে মানুষের মধ্যেও। হুগলি জেলার উত্তরপাড়া, কোন্নগর, শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি, বৈদ্যবাটির ঘাটগুলিতে দেখা গেল তারই নমুনা। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য কাজ এগোচ্ছে কিছুটা ধীর গতিতে।
উত্তরপাড়া-কোতরঙ পুরসভা এলাকায় ৯২টি পুজো হয়। তার মধ্যে প্রায় ৭৫টি প্রতিমা বিসর্জন হয় দোলতলা রামসীতা ঘাটে। কিছু প্রতিমা ভাসান দেওয়া হয় শিমূলতলা ও বাবুঘাটে। দোলতলা ঘাটে মাইকে প্রচার চলেছে পুরসভার তরফে। প্রতিমা গঙ্গায় নামানোর আগেই ফুল-বেলপাতা-কলাবউ ফেলতে হচ্ছিল পুরসভার ভ্যাটে। অধিকাংশ প্রতিমা গঙ্গায় নামিয়েছেন শ্রমিকেরা। একটি পুজো কমিটির তরফে সর্বোচ্চ পাঁচ জন নামতে পেরেছেন ঘাটে। সিঁড়িতে নামতে দেওয়া হয়নি মহিলা ও শিশুদের। এ জন্য ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছিল। প্রতিমা বিসর্জনের পরে কাঠামো তুলে নিয়ে গঙ্গার ধারে ধারে রাখা হয়েছে।
পুলিশি ব্যবস্থা তো ছিলই। সেই সঙ্গে পুরসভার কাউন্সিলরেরাও ঘাটে উপস্থিত ছিলেন বিসর্জনের দিন। পরিবেশ সচেতনতার দিক থেকেও পুজোর আগে থেকেই জোর দিয়েছে এই পুরসভা। পুজোয় পরিবেশের উপরে পুরস্কারেরও ব্যবস্থা ছিল। পরিবেশ সচেতন করতে গত কয়েক মাস ধরেই এই পুর এলাকায় প্রচার চলছে। উত্তরপাড়া-কোতরঙ পুরসভার জনস্বাস্থ্য ও পরিষেবা দফতরের চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল দিলীপ যাদব বলেন, “এ বার আমরা কালীপুজোর প্রস্তুতি শুরু করেছি। সেখানেও জিততে হবে আমাদের সকলকে।” |
শ্রীরামপুরের রায়ঘাটে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
কোন্নগর শহরে ৬৩টি পুজো হয়। বিসর্জন হয় মূলত বারোমন্দির, পঞ্চু দত্তের ঘাট-সহ কয়েকটিতে। প্রত্যেক জায়গায় ছিল পুরসভার নজরদারি। ফুল-চাঁদমালা-কলাবউ ফেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রাখা হয়েছিল। কাঠামো তুলে নিতেও দেরি করেননি পুরকর্মীরা। ফলে, অন্য বছরের তুলনায় কোন্নগরের ঘাটগুলি এ বার অনেকটাই সাফসুতরো বলে জানালেন স্থানীয় মানুষ। পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এর কৃতিত্ব পুজো কমিটিগুলিকেই দিতে চান। তিনি জানান, পুজোর আগে থেকেই কমিটিগুলিকে এ ব্যাপারে সচেতন করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা যে সে কথা অক্ষরে অক্ষরে মানবেন, এতটা ভাবিনি। এটুকু বলতে পারি, সকলের চেষ্টায় গঙ্গার বুকে আঁচড় পড়েনি এতটুকু।”
শ্রীরামপুরের প্রতিমাগুলি অধিকাংশ ভাসান দেওয়া হয় রায়ঘাট এবং কলেজঘাটে। এই পুরসভার তরফেও ফুল-বেলপাতা-কলাবউ ফেলার জায়গা করা হয়েছিল। কলেজ ঘাটে প্রায় সমস্ত কাঠামোই জল থেকে তুলে ফেলা হয়েছে। তবে, শনিবার ভাসান-পর্ব মিটে গেলেও সোমবার দুপুরে রায়ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, বেশ কিছু কাঠামো এখনও তোলা বাকি। উপপুরপ্রধান উত্তম নাগ বলেন, “রায়ঘাটে স্থানীয় ছেলেরাই জল থেকে কাঠামো তুলে ফেলে। তা সত্ত্বেও যদি কিছু পড়ে থাকে, আমরা তা অবশ্যই তুলে ফেলব।”
শেওড়াফুলি এবং বৈদ্যবাটি পুরসভার গঙ্গার ঘাটগুলি বেশ পরিষ্কার আছে। শুড়িঘাট, নিস্তারিনী ঘাট, কালীবাড়ি ঘাট, মুখার্জি ঘাট প্রভৃতি কয়েকটি ঘাটে বিসর্জন হয়। বৈদ্যবাটি পুর এলাকায় পুজোর সংখ্যা শতাধিক। প্রতিমার আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র ফেলার জন্য এখানেও পৃথক জায়গা রাখা হয়েছিল। গঙ্গাদূষণ রোধে মাইকে প্রচার চলেছে।
তবে, জল থেকে কাঠামো তোলা নিয়ে এখানে বিশেষ ভাবতে হয়নি পুর কর্তৃপক্ষকে। স্থানীয় চাতরা কুমোরপাড়ার লোকজন দ্রুত কাঠামো তুলে নিয়ে গিয়েছে। পুরপ্রধান অজয়প্রতাপ সিংহ বলেন, “ঠিকঠাক সচেতনতা কর্মসূচি নিতে পারলে যে কতটা কাজ হয়, এ বার তার প্রমাণ পাওয়া গেল।” |