জগজিৎ সিংহ প্রয়াত
দু’সপ্তাহ ধরে ইসলামাবাদের ‘চায়ে খানা’ কাফেতে বেজে চলেছে সেই সব গান ‘হোঁঠো সে ছু লো তুম’, ‘তুম ইতনা যো মুসকুরা রহে হো’, ‘তুম কো দেখা’...। কাফে-মালিক টেবিলে টেবিলে রেখে দিয়েছেন একটা ছোট্ট বার্তা “ভারতের সেই মহান গায়ক গুরুতর অসুস্থ। আসুন, সবাই মিলে প্রার্থনা করি, তিনি যেন দ্রুত সেরে ওঠেন।”
প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে সেই শুভেচ্ছা বার্তা সম্ভবত এসে পৌঁছয়নি ভারতের ‘গজল সম্রাটের’ কাছে। মস্তিষ্কে গভীর রক্তক্ষরণ হওয়ায় ২৩ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন জগজিৎ সিংহ। ১৭ দিন আইসিইউতে কাটিয়ে আজ সকাল আটটা দশে মারা যান তিনি। লীলাবতী হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন, এর মধ্যে দু’বার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়েছিল জগজিতের। কিন্তু ফের গুরুতর রক্তক্ষরণ থেকে আজ সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।
লতা মঙ্গেশকর থেকে অমিতাভ বচ্চন, মনমোহন সিংহ থেকে খুশবন্ত সিংহ জগজিতের মৃত্যুতে সকলেরই এক প্রতিক্রিয়া “ভেতরটা কাঁপিয়ে দেয়, এমন এক কণ্ঠ থেমে গেল!” শোকস্তব্ধ পাকিস্তানও। বিভিন্ন পাক ওয়েবসাইটে আজকের প্রধান খবর, ‘জগজিৎ নেই’। এটা তা হলে নেহাত সমাপতন নয় যে, ২৩ তারিখ যখন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন জগজিৎ, তার কয়েক ঘণ্টা বাদেই পাক গজল গায়ক গুলাম আলির সঙ্গে মুম্বইয়ের শঙ্খমুখানন্দ প্রেক্ষাগৃহে তাঁর এক অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল! এর আগে বহু বার হলেও এ বার সেই ‘দ্বৈতসঙ্গীত’ আর গাওয়া হল না।
১৯৪১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাজস্থানের শ্রীগঙ্গানগরে এক শিখ পরিবারে জন্ম জগমোহনের। পরে বাবা ছেলেটির নাম পাল্টে রাখেন ‘জগজিৎ’। বাবা-ই ছেলেকে নিয়ে যান তার প্রথম সঙ্গীতগুরুর কাছে পণ্ডিত ছগনলাল শর্মা। পরে সাইনিয়া ঘরানার উস্তাদ জামাল খানের কাছে খেয়াল, ঠুমরি ও ধ্রুপদে তালিম নিয়েছেন জগজিৎ।
১৯৭০-এর দশকে জগজিৎ যখন প্রথম গাওয়া শুরু করেন, তখন গজল গায়ক বলতে পাকিস্তানের মেহদি হাসান ও নুর জহান এবং ভারতের তালাত মেহমুদ ও বেগম আখতার। সেই সব দিক্পালের মধ্যে জগজিৎ একটা স্বতন্ত্র জায়গা করে নিতে পেরেছিলেন তাঁর অনবদ্য সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে। সমালোচকেরা বহু দিন বলেছেন, সুরের আবহে গা ভাসিয়ে সঙ্গীতের ব্যাকরণ থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন জগজিৎ। কিন্তু সে সব কথায় বিশেষ কান দেননি দু’দেশে তাঁর অসংখ্য অনুরাগী। পাঁচ দশক-ব্যাপী সঙ্গীতসফরের পরে আজ সমালোচকেরাও স্বীকার করবেন যে, জগজিতের কণ্ঠ-জাদুই গজলকে সাধারণ শ্রোতার বসার ঘরে এনে হাজির করে দিয়েছিল।
ষাটের দশকের শেষের দিকে জগজিতের সঙ্গে আলাপ হয়ে বাঙালি মেয়ে চিত্রা দত্তের। চিত্রা তখন বিজ্ঞাপনের গান গাইতেন। বছর দুই পরে, ১৯৭০ সালে বিয়ে করেন তাঁরা। তার পর ১৯৭৬-এ প্রকাশিত হয় তাঁদের প্রথম অ্যালবাম ‘দ্য আনফরগেটেবল’। স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ সঙ্গীতময় সফরের সেই শুরু, যা শেষ হয়ে যায় ১৯৯০ সালে, মর্মান্তিক ভাবে। পথ দুর্ঘটনায় কিশোর ছেলে বিবেক মারা যাওয়ার পরে সঙ্গীত জগৎ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন চিত্রা। জগজিৎও গান গাওয়া অনেক কমিয়ে দেন। শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন বহু সংস্থার সঙ্গে জড়িয়ে রেখেছিলেন নিজেকে, গান গাইতেন সেই সব সংস্থাকে সাহায্য করতেই।
জগজিতের সঙ্গীতজীবন জুড়ে রয়েছে অসংখ্য অ্যালবাম, বহু অনন্য সুর। তবে গজলের রাজপথে জগজিতের সব থেকে বড় মাইলফলক সম্ভবত ‘মির্জা গালিব’। গুলজারের প্রযোজনায় ১৯৮৮ সালের এই টিভি সিরিয়ালটিতে উনিশ শতকের উর্দু মহাকবির অমর সৃষ্টি নতুন করে প্রাণ পেয়েছিল জগজিতের কণ্ঠে
দিল এ নাদান তুঝে হুয়া কেয়া হ্যায়
আখির ইস দর্দ কি দাওয়া কেয়া হ্যায়!

এই আর্তির অনুরণন সহজে মেলাবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.