|
|
|
|
মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবেন সেচমন্ত্রী |
খাল সংস্কারে সরাতে হবে দখলদারদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
কলকাতা শহরের নিকাশির ‘লাইফলাইন’ খালগুলির সংস্কার নিয়ে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। পুরসভা জানাচ্ছে, খালগুলি সেচ দফতরের। নিয়মিত পলি তোলা এবং অন্য বর্জ্য নিষ্কাশনের দায় তাদেরই। আর সেচ দফতর দায়ভার চাপাতে চাইছে খালপাড়ের ঝুপড়িগুলির উপরে। তারা জানিয়েছে, বিভিন্ন নিকাশি খালের দু’ধার দখল হয়ে যাচ্ছে। ওই দখলদারেরা অনেকেই পেশাগত কারণে খালের দু’পাশের জমিতে ডাঁই করে রাখছেন প্লাস্টিক ও মেডিক্যাল বর্জ্য। যার অনেকটাই জমছে খালে। সেচ দফতর এটাও জানিয়ে দিয়েছে, খাল সংস্কার তাদের কাজ হলেও দখলদার হটানোর দায় তাদের নয়। এ ব্যাপারে রাজ্যের বিভিন্ন দফতর যাতে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে, তার জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্য চাইবেন বলে জানান সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া।
কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, টাউন হেডকাট, সাবার্বান হেডকাট, ডিডব্লিউএফ চ্যানেল (শুখা মরশুমের নিকাশি নালা) এবং এসডব্লিউএফ চ্যানেল (বর্ষার জল যাওয়ার নিকাশি নালা), কেষ্টপুর খাল, কুলটি গাঙ সব ক’টি খালই তাদের নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে। ফলে শহরের নিত্যদিনের বর্জ্যযুক্ত জলই ঠিকমতো বয়ে যেতে পারছে না। ভারী বর্ষণের পরে উপচে পড়ছে খালগুলি। ফলে, জল নামায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে কলকাতায়।
পুরসভা সূত্রের খবর, দ্রুত নগরায়নের জেরে মহানগরীর দৈনিক বর্জ্য জলের পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু নিয়মিত খাল সংস্কার হচ্ছে না। মেয়র পারিষদ (নিকাশি) রাজীব দেব বলেন, “শহরের জল যে সব নিকাশি নালা দিয়ে কুলটি গাঙে পড়ে, সেগুলি পলিমুক্ত করতে না পারলে জল জমার সমস্যা মিটবে না। বর্ষায় অতিবৃষ্টি হলে পাম্পিং স্টেশনের সাহায্যে প্রতি সেকেন্ডে ৫০০০ বর্গফুট জল ফেলা হয় খালগুলিতে। সেই জল টানার ক্ষমতা এখন আর নিকাশি নালাগুলির নেই।”
কলকাতা পুরসভার সঙ্গে খাল সংস্কার নিয়ে এ বার সরব হয়েছে সেচ দফতরও। শহরের নিকাশি জল বেরোনোর খালগুলি তাদের আওতাধীন। অর্থাৎ, সংস্কারও করতে হবে সেচ দফতরকেই। সরকার পরিবর্তনের পরে খাল সংস্কার নিয়ে পুরসভার সঙ্গে বৈঠক করেছেন সেচমন্ত্রী। উপস্থিত ছিলেন কেএমডিএ-র অফিসারেরাও। বৈঠকে সেচসচিবের অধীনে একটি কমিটিও গড়া হয়।
কেন খালগুলিতে এত প্লাস্টিক ও মেডিক্যাল বর্জ্য পড়ছে, তা অনুসন্ধানের পরে খালপাড়ের অবৈধ দখলদারদের উপরে দায় চাপিয়েছে ওই কমিটি। মানসবাবু জানান, জবরদখলকারীদের হাত ঘুরেই খালে জমছে ওই সব পদার্থ। তাঁদের না হটালে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের সম্ভাবনা যে কম, তা-ও বুঝিয়ে দেন তিনি। কিন্তু দখলদারদের সরাবে কে? মানসবাবু বলেন, “এটা আমার দফতরের কাজ নয়। সব সরকারি দফতরকেই যৌথ ভাবে কাজ করে কলকাতার নিকাশির হাল ফেরাতে হবে। এ ব্যাপারে একটি সমন্বয় কমিটি গড়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।”
খাল বোজানোর ক্ষেত্রে বেআইনি দখলদারদের পাশাপাশি সেচমন্ত্রী কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন বেসরকারি নার্সিংহোমগুলিকেও। তাঁর অভিযোগ, “বাইপাসের বিভিন্ন বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে মেডিক্যাল বর্জ্য খালে ফেলা হচ্ছে। একই অবস্থা কলকাতারও। এর জেরে এক দিকে যেমন নিকাশি ব্যবস্থা প্রভাবিত হচ্ছে, তেমনই পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর হচ্ছে। চিকিৎসা-বর্জ্যের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আমি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখব।”
পুর-নিকাশি ইঞ্জিনিয়ারদের অবশ্য বক্তব্য, কলকাতার নিকাশি ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বানতলা ভেড়ির বিষয়টিও। বানতলায় মাছ চাষের জন্য শহরের নিকাশি নালার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চৌবাগা লকগেট বন্ধ করা হয়। ফলে শহর থেকে আসা নিকাশি জল ও অন্য বর্জ্য বানতলায় ডিডব্লিউএফ এবং এসডব্লিউএফ চ্যানেলে স্থির হয়ে থাকে। তাই সেখানে অত্যধিক মাত্রায় পলি জমছে। এ ভাবেই চৌবাগা থেকে বানতলা হয়ে কুলটি গাঙে পড়া নিকাশি খালটিতেও পলি জমে যাচ্ছে বলে জানান পুর-অফিসারেরা। পুরসভা সূত্রের খবর, ১৯৯৮ সালে ওই খালগুলি এক বার ভাল ভাবে সাফ করা হয়। তার পরে ২০০২ সালে সামান্য কিছু পলি তোলা হয়। তার পরে সংস্কার হয়নি। ফলে চার-পাঁচ মিটার গভীর ওই খালগুলির কোথাও এক মিটার, কোথাও পৌনে এক মিটার পলি জমে রয়েছে।
পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, গঙ্গা নদীতে জোয়ারের সময়ে শহরে তুমুল বৃষ্টি হলেও লকগেট বন্ধ করে দিতে হয়। তার ফলে ভাটা পর্যন্ত চার-পাঁচ ঘণ্টা চৌবাগার লকগেট বন্ধ রাখতে হয়। সেখানে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন পাম্পিং স্টেশন না-থাকায় জল কুলটি গাঙে ফেলার ব্যবস্থা নেই। একই ভাবে কেষ্টপুর থেকে কুলটি গাঙ পর্যন্ত নিকাশি নালাও বন্ধ রাখতে হয় গঙ্গায় জোয়ারের সময়ে। সেখানেও পলি জমে যায়। রাজ্যের কাছে কলকাতা পুরসভার প্রস্তাব: চৌবাগা এবং কেষ্টপুরে যে দু’টি লকগেট আছে, সেখানে দু’টি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন পাম্পিং স্টেশন তৈরি করা হোক। তা হলে মহানগরীর জল নিষ্কাশনে সুবিধা হবে। |
|
|
|
|
|