গত মাসে টানা বৃষ্টিতে মার খেয়েছে বেশির ভাগ ফুলের চাষ। পুজোর ফুলবাজারে তাই ছিল মন্দার ছবি। তবে, সেই বৃষ্টিই লক্ষ্মীপুজোয় কিছুটা হাসি ফুটিয়েছে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের মুখে। পদ্ম ফুলে ছেয়ে গিয়েছে বাজার। বিভিন্ন বাজারে ফুল-ফল-সব্জির দাম অবশ্য গত বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি। তাতেও খামতি নেই কেনাবেচায়।
হাওড়া ব্রিজের নীচে মল্লিকঘাটে এশিয়ার বৃহত্তম পাইকারি ফুলবাজার জমে উঠেছিল লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন, সোমবার দুপুরে। ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে গমগম করছিল ফুলবাজার। ভিড়ে হাঁটা দায়। বিক্রেতারা কেউ গ্রামের ফুলচাষি, কেউ বা সম্পন্ন ব্যবসায়ী। ভগবানপুরের চাষি কৃষ্ণপ্রসাদ দলুই বিক্রি করছেন কেবলই ধানের ছড়া। ১০টি ছড়ার বান্ডিলের দাম ১০ টাকা। এ দিন তিনি এনেছিলেন ৮৫০ ছড়া। শুক্র থেকে রবি তিন দিনে বিক্রি করেছেন সাড়ে তিন হাজার ছড়া। এক বান্ডিল দূর্বা পাঁচ টাকা।
গত পুজোর তুলনায় এ বছর রজনীগন্ধার দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। মল্লিকঘাটের ফুল ব্যবসায়ী অসীম শাসমল এ কথা জানিয়ে বলেন, “এ বার পুজোয় এই বাজারে রজনীগন্ধার দাম উঠেছিল ৪০০ টাকা কিলো। লক্ষ্মীপুজোয় তা কিছুটা কমেছে।” আর এক ব্যবসায়ী গৌতম সমাদ্দার বলেন, “গত বছরের তুলনায় পাইকারি বাজারে ফুলের দাম এ বার প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।” ১০০টি গোলাপের বান্ডিল কমবেশি ১২৫ টাকা। ২০টি ডাচ গোলাপের বান্ডিল ১২৫ টাকা। খদ্দেরের কাছে বিক্রেতা চাইছেন আরও বেশি। চলছে দরদাম।
|
লক্ষ্মীপুজোর জন্য মল্লিকঘাট ফুলবাজারে ক্রেতার ভিড়। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক |
মল্লিকঘাটে এখানে-ওখানে গাঁদার স্তূপ। রানাঘাট-বিনপুর, ভাঙর, ঠাকুরপুকুর থেকে এই ফুলের জোগান এসেছে বেশি। গাঁদার দর কিলোপিছু ২০ থেকে ৪০ টাকা। গাঁদার মালা বিক্রি হচ্ছে একসঙ্গে ১০ বা ২০টি করে। দাম নির্ভর করছে ফুলের মানের উপরে। ছোট পদ্মের প্রতিটির দাম কমবেশি পাঁচ টাকা। গাঁদা আর পদ্মে বাজার ছেয়ে গিয়েছে। কোন পদ্ম সদ্য মাঠ থেকে তুলে আনা, কোনগুলো আনা ঠান্ডাঘর থেকে, অভিজ্ঞ ছাড়া কে-ই বা ধরবেন? পাইকারি বাজারের এই ফুল-মালা বিভিন্ন বাজারে বিকোচ্ছে অনেক বেশি দামে।
আনাজপাতির দরও চড়া। বাঁধাকপি ২০ টাকা কিলো, বেগুন ৩০ টাকা, পুরনো আলু ৮ টাকা, নতুন আলু ২৫ টাকা, টোম্যাটো ৪০ টাকা। ফুলকপি প্রতিটির দাম ১২ থেকে ১৫ টাকা। পোস্ত আর গোলমরিচ কিলোপিছু যথাক্রমে ২১০ ও ৩৮০ টাকা। ‘প্রগতিশীল ব্যবসায়ী সমিতি’র সম্পাদক আনন্দ দত্ত বলেন, “টোম্যাটোর দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। বেড়েছে গোলমরিচের দামও। অন্যান্য মশলার দামে খুব একটা হেরফের হয়নি। দাম কমেছে ফুলকপি, আলু আর পোস্তর।”
দাম বেড়েছে বিভিন্ন ফলেরও। আপেল, শসা, তরমুজ কিলোপিছু ৫০ টাকা, ২৫ টাকা ও ৪০ টাকা। মোসাম্বি, বাতাবি লেবুর প্রতিটির দাম যথাক্রমে পাঁচ টাকা ও ২০ টাকা। বাজার, মান এবং মাপ হিসেবে অবশ্য দামের হেরফের হচ্ছে। কলেজ স্ট্রিট, গড়িয়াহাট বাজারের মতো লেক মার্কেটেও এ দিন ছিল খদ্দেরদের ভিড়। ‘লেক মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি’র যুগ্ম সম্পাদক মনোতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গত বছরের পুজোয় যা বাজারদর ছিল, এ বার তা বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।” |