পুজোয় শিবির হচ্ছে না, নেই
ডোনার্স কার্ডও, সঙ্কট রক্তের
বৌবাজারে একটি রক্তদান শিবিরে মাস দেড়েক আগে রক্ত দিয়েও ‘ডোনার্স কার্ড’ পাননি কলুটোলার বাসিন্দা রণজিৎ মজুমদার। সপ্তাহ দু’য়েক আগে তাঁর মায়ের অস্ত্রোপচারের জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়। কার্ডের অভাবে নগদ ১০০ টাকা দিয়ে রক্ত কিনতে হয় তাঁকে। ক্ষুব্ধ রণজিৎবাবুর বক্তব্য, “প্রয়োজনের সময়ে যদি নিখরচায় রক্ত না পাই, তা হলে স্বেচ্ছা রক্তদানে লাভ কী?”
এই প্রশ্নটাই এখন গোটা রাজ্যের রক্তদাতাদের পীড়া দিচ্ছে। পুজোর মরসুমে স্বেচ্ছা রক্তদান শিবির কম হওয়াটা প্রায় নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ বার ডোনার্স কার্ডের আকাল রক্তের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, গত প্রায় চার মাস ধরে ‘ব্লাড ডোনার্স কার্ড’ ছাপা কার্যত বন্ধ রয়েছে। ফলে স্বেচ্ছা রক্তদানের পরে অধিকাংশ রক্তদাতাকে তাঁদের প্রাপ্য ডোনার্স কার্ড দিতে পারছে না শিবিরের আয়োজকরা। এর থেকে বাড়ছে ক্ষোভ, যার পরিণতিতে উৎসবের মরসুমে রক্তের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বছরভর যাঁরা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে তাঁদের অভিযোগ, ডোনার্স কার্ড না পেয়ে রক্তদানে উৎসাহ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। ফলে শিবিরে দাতার সংখ্যা কমছে। দাতার অভাবে অনেক শিবির বাতিলও করতে হয়েছে। তাঁদের কথায়, “দুর্গাপুজোর সময় বিভিন্ন ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের সঞ্চয় তলানিতে ঠেকে। এ বার কার্ডের অভাবে দাতার সংখ্যা কমে যাওয়ায় সঙ্কট আরও বেড়েছে।”
সঙ্কট কী রকম বেড়েছে? স্বাস্থ্য দফতরের রক্ত সেলের হিসাব বলছে, গত বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট রক্তদানের ৯১% ছিল স্বেচ্ছা রক্তদান। এ বছর ওই একই সময়ে স্বেচ্ছা রক্তদানের হার কমে হয়েছে ৬২%। স্বাস্থ্য দফতরের এক মুখপাত্র জানান, বছরে যেখানে ৬ লক্ষ ডোনার্স কার্ড ছাপানো হয়, সেখানে এ বার এখনও পর্যন্ত নামমাত্র কার্ড ছাপানো হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, ব্লাড ডোনার্স কার্ডের সঙ্গে রক্তদাতাদের উৎসাহ হারানোর সম্পর্ক কী? এর ব্যাখ্যা দিয়ে রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের কর্তারাই বলছেন, রক্তদানের পর প্রত্যেক দাতাকে বাধ্যতামূলক ভাবে ব্লাড ডোনার্স কার্ড দেওয়ার কথা। ওই কার্ড দেখিয়ে পরবর্তী এক বছরের মধ্যে বিনা খরচে এক ইউনিট রক্ত পাওয়া যায়। রক্তদাতাদের উৎসাহ দিতেই এই কার্ড চালু হয়েছিল। রক্তদাতারা সেই কার্ড না পেলে এবং নিজের প্রয়োজনের সময় রক্ত কিনতে হলে তাঁদের উৎসাহ কমতেই পারে। বিশেষ করে অনেক গরিব মানুষ আছেন, যাঁরা প্রয়োজনে নিখরচায় রক্ত পাবেন ধরে নিয়ে রক্তদান করেন।
কার্ড না পেয়ে রক্তদান শিবিরে দাতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যাওয়ায় সম্প্রতি স্বাস্থ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে চিঠি দিয়েছেন শান্তিপুর পুরসভার চেয়ারম্যান অজয় দে। তিনি বলেছেন, স্বেচ্ছায় রক্ত দেওয়ার পরেও অনেক দাতাকে প্রয়োজনে ৫০, ১০০ বা ৫০০ টাকা দিয়ে এক ইউনিট রক্ত কিনতে হচ্ছে। অবিলম্বে এর সুরাহা না-করলে স্বেচ্ছা রক্তদানে প্রভাব পড়বে। রক্তদান আন্দোলনে জড়িত অপূর্ব ঘোষ, ডি আশিস, দেবব্রত রায়, দীপঙ্কর মিত্রেরা অভিযোগ করেছেন, শুধু ডোনার্স কার্ডই নয়, রক্তদাতাদের টিফিন দেওয়ার জন্য জনপ্রতি ২০ টাকা দেওয়ার কথা স্বাস্থ্য দফতরের। চার মাস ধরে অনেক জায়গায় সেই টাকাও আসছে না।
স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা সরাসরি এর দায় নিতে নারাজ। যেমন, রাজ্য রক্ত সঞ্চালন পর্ষদের প্রধান রতনলাল গঙ্গোপাধ্যায় ‘প্রোকিওরমেন্ট বিভাগে জিজ্ঞাসা করুন’ বলে দায় এড়িয়েছেন। প্রোকিওরমেন্ট বিভাগের সহ-অধিকর্তা অমিতাভ বিশ্বাসের কথায়, “এ বছর বিভিন্ন জেলা থেকে কার্ডের ‘রিক্যুইজিশান’ আসতে সময় লাগায় বরাত দিতে দেরি হয়েছে। পরে ফাইল সময়মতো সই হয়নি। দরপত্র প্রক্রিয়া চলাকালীন প্রোগ্রাম বিভাগের অফিসারদের সময়মতো পাওয়া যায়নি। তবে পুজোর পরেই যাতে ডোনার্স কার্ডের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়, তার চেষ্টা চলছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.