|
|
|
|
‘মমতা-রাজ্যে’ দিল্লির প্রকল্পে নজর কংগ্রেসের |
সঞ্জয় সিংহ • কলকাতা |
কেন্দ্রের কংগ্রেসে নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের জনমুখী কর্মসূচি তৃণমূল-শাসিত পশ্চিমবঙ্গে কেমন চলছে, এ বার তার উপর ‘নজরদারি’ করবে প্রদেশ কংগ্রেস।
কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের সুযোগ দেশের ‘আম আদমি’ পাচ্ছে কিনা তা দেখার জন্যেই দিল্লি ‘ভারত নির্মাণ স্বেচ্ছাসেবক’ কর্মসূচি নিয়েছে। কংগ্রেসের এই কর্মসূচি দেশের সব রাজ্যের জন্যই। সনিয়া গাঁধীর নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গেও এ কাজ শুরু হচ্ছে বলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন।
বস্তুত, নতুন এই প্রকল্পের মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে পশ্চিমবঙ্গেও দিল্লির ‘জনমুখী কর্মসূচি’র হাল কেমন তা জানতে পারবে দিল্লিও।
তিন মাস অন্তর প্রকল্পের কাজের রিপোর্ট দিল্লিতে পাঠানো হবে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ রূপায়নের ‘নোডাল এজেন্সি’ রাজ্য সরকার। ফলে মুখ্যমন্ত্রীকেও ‘কেন্দ্রের জনমুখী কর্মসূচি’ এ রাজ্যে কেমন চলছে, তা জানানো হবে।
পুজোর মরসুম কাটলেই জঙ্গলমহল থেকে প্রদেশ কংগ্রেস ওই কর্মসূচি শুরু করছে। জঙ্গলমহলে এই কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার কথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের।
আপাতত রাজ্য রাজনীতিতে ‘গুরুত্বের নিরিখে’ তৃণমূলের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে কংগ্রেস। তাদের হাতে আন্দোলন করার মত ‘হাতিয়ারও’ বিশেষ কিছু নেই। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের জনমুখী প্রকল্পের ‘সুফল’কে নিজেদের অনুকূলে কাজে লাগাতে চান প্রদেশ নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় সরকারের জনকল্যাণমুখী ১৬টি প্রকল্পের কাজ রাজ্যে কেমন হচ্ছে, এই সমস্ত প্রকল্প থেকে কত মানুষ উপকৃত হচ্ছেন ইত্যাদি বিষয়ে ‘ভারত নির্মাণ স্বেচ্ছাসেবক’ কর্মসূচির কর্মীরা খোঁজ নেবে। পাশাপাশি, কেন্দ্রের প্রকল্পগুলি নিয়ে জনসাধারণের কাছে প্রচারও করা হবে। এই বিষয়ে দলের স্লোগান হয়েছে- ‘আমাদের পয়সা, আমাদের হিসাব।’
কর্মসূচি রূপায়ণের ব্যাপারে একটি ‘মনিটরিং কমিটি’ করা হয়েছে। প্রদীপবাবু ওই কমিটির চেয়ারম্যান। প্রকল্পের মুখ্য সঞ্চালক করা হয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীকে। প্রকল্পের কাজ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পরিচালিত করতে ৭টি আঞ্চলিক কমিটি করা হয়েছে। দলের যে সমস্ত কর্মী এই কাজে নিযুক্ত হবেন তাঁদের ‘বিশেষ প্রশিক্ষণে’রও ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রদীপবাবু বলেন, “এই কর্মসূচিতে যাঁরা অংশ নেবেন তাঁদের কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির খুঁটিনাটি বিষয় জানতে হবে। প্রকল্পের কাজ কী ভাবে পর্যালোচনা করতে হবে সেই ব্যাপারেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।”
প্রদীপবাবু বলেন, “কেন্দ্রের যে ১৬ প্রকল্পের কাজ নিয়ে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা খোঁজ নেবেন, সেগুলির মধ্যে প্রথমেই রয়েছে মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চিত আইন। গত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে এ কাজে আমাদের রাজ্য অনেক পিছিয়ে রয়েছে। এরপরেই আছে সর্বশিক্ষা অভিযান, মিড ডে মিল, ইন্দিরা আবাস যোজনা, জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য প্রকল্প ইত্যাদি। এই সমস্ত প্রকল্পগুলি গ্রামের গরিব মানুষের কল্যাণের জন্যেই। কিন্তু কেন্দ্র যে উদ্দেশ্যে ও যাদের জন্য করছে, তা তাদের কাজে লাগছে কিনা তা দেখা আমাদের উদ্দেশ্য।”
প্রদীপবাবুর অভিযোগ, ‘‘বাম সরকারের আমলে দরিদ্র মানুষের উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকারের বহু প্রকল্পের কাজ সময়মতো না করতে পারায় টাকা ফেরত চলে যেত। এটার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সে দিকেও লক্ষ্য রাখা হবে।”
কংগ্রেস শিবিরের একাংশের অভিমত, বর্তমানে রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেসকে আরও ‘প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ’ করে তুলে ধরতেই ‘ভারত নির্মাণ’ কর্মসূচিকে সামনে রাখা হচ্ছে। বিশেষত, আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্যে কংগ্রেসকে সাংগঠনিক দিক থেকে মজবুত করতে ওই কর্মসূচির উপর অনেকটাই নির্ভর করছে প্রদেশ কংগ্রেস। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট সরকার চলছে। বাংলায় তৃণমূলের জোট সরকারের শরিক কংগ্রেস। এই পরিস্থিতিতে নেতিবাচক কোনও রাজনীতি করা মুস্কিল। ধর্না, অবস্থান ইত্যাদি করা যাবে না। কিন্তু রাজনীতির ময়দানে টিঁকে থাকতে কংগ্রেসকে নানা কর্মসূচি নিয়ে মানুষের কাজে যেতে হবেই।”
|
চাহিদার পাশাপাশি বেড়েছে বিদ্যুৎ চুরি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মহোৎসবে বিদ্যুৎ চুরি নতুন কিছু নয়। তবে এ বার দুর্গাপুজোয় রাজ্য জুড়ে বিদ্যুৎ চুরি বেড়ে গিয়েছে ব্যাপক ভাবে। বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির এলাকায় ষষ্ঠী ও সপ্তমীতে ৮,৩৫৬টি মণ্ডপে অভিযান চালানো হয়। ২,৪৮২টি চুরির ঘটনা ধরা পড়েছে। আগের বছর বিদ্যুৎ চুরি করে ধরা পড়েছিল ১,৩৯২টি পুজো। এ বার চাহিদাও বেড়েছে বিদ্যুতের। বণ্টন কোম্পানির এলাকায় চুরি করে ব্যবহার করা হচ্ছিল সাড়ে নয় মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। জরিমানা করা হয়েছে ২৯ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা।
চুরির ঝোঁক বেড়েছে সিইএসসি এলাকাতেও। গত বছর চুরি ধরা পড়েছিল মাত্র ৫২টি পুজো মণ্ডপে। এ বছর ১৩০টি মণ্ডপে চুরি ধরা পড়েছে। এক সিইএসসি-কর্তা বলেন, এ বারের চুরির একটা বৈশিষ্ট্য দেখা গিয়েছে। বহু পুজো কমিটিই বিদ্যুৎ-সংযোগ চেয়েছিল ষষ্ঠী থেকে, কিন্তু পঞ্চমী থেকেই মণ্ডপে আলো জ্বালিয়ে দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই হাতেনাতে ধরা পড়ে গিয়েছে এই অনিয়ম। মোট ২৭৫টি মণ্ডপে নজরদারি চালিয়ে ১৩০টি চুরি ধরা পড়াটা বেশ উদ্বেগের বিষয় বলে মন্তব্য করেন এক সিইএসসি-কর্তা। তিনি বলেন, “এটা একটা নতুন ঝোঁক। আগামী বছর আমরা চতুর্থীর দিন থেকেই নজরদারি শুরু করে দেব।” গত বারের থেকে এ বছরের পুজোয় চাহিদা বেড়েছে বিদ্যুতের। মঙ্গলবার, মহাষ্টমীর সন্ধ্যায় বণ্টন কোম্পানির এলাকায় সর্বোচ্চ চাহিদা ওঠে ৪,২৫০ মেগাওয়াট। ২০১০ সালের অষ্টমীতে এই চাহিদা ছিল ৩,৪৫০ মেগাওয়াট। এক লাফে ৮০০ মেগাওয়াটের চাহিদা বৃদ্ধি। চাহিদা এতটা বাড়ল কী ভাবে? সংস্থার ব্যাখ্যা, গত এক বছরে গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের ব্যাপক অগ্রগতির দৌলতেই ৮০০ মেগাওয়াট চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। কোথাও কোনও বিদ্যুৎ-ঘাটতি হয়নি। |
|
|
|
|
|