|
|
|
|
প্রথা পালনই ব্রত বক্সীবাড়ির পুজোয় |
অভিজিৎ চক্রবর্তী • ঘাটাল |
সময়ের সঙ্গে হয়তো জৌলুস কমেছে। কিন্তু ২০৯ বছর পরেও ঘাটালের সুলতানপুরের বক্সী পরিবারের পুজো অম্লান তার ঐতিহ্যে। নিষ্ঠাভরে পারিবারিক নিয়মরক্ষাই এই পুজোর বিশেষত্ব।
সুলতানপুরের বক্সীদের আদি বাড়ি ছিল হুগলির মোক্তারপুরে। তখন এই পরিবারের পদবি ছিল সরকার। অষ্টাদশ শতকের গোড়ায় দেবীচরণ সরকারকে ঘাটালের সুলতানপুরে জমিদারি এস্টেটের দায়িত্ব দেওয়ার পরে প্রচুর জমি দান করে পাকাপাকি ভাবে থাকার ব্যবস্থা করে দেন বর্ধমানের মহারাজ ত্রিলোকচন্দ্র। সেই সময় থেকেই বক্সী পদবি। |
|
নিজস্ব চিত্র। |
দেবীচরনের নাতি জানকীরাম বক্সীর আমলে সুলতানপুরে কলেরা ছড়ায়। মহামারীর কবলে গ্রাম যখন উজাড় হওয়ার জোগাড়, তখনই বক্সী পরিবারের কুলদেবতার পূজারী দশভুজার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজা করার স্বপ্নাদেশ পান। তা শুনে জানকীরাম বড় আটচালা বানিয়ে শুরু করেন দুর্গাপুজা। তন্ত্র মতে এই পরিবারে দশভুজা বা দেবী দুর্গার পুজো হয় একমেড়ের। প্রচলিত প্রথা ভেঙে এখানে লক্ষ্মী-সরস্বতীকে বসানো হয় নীচে। আর কার্তিক-গণেশকে বসানো হয় উপরে। অন্য দিকে এই পরিবারে এখনও সপ্তমীতে একটি, অষ্টমীতে একটি এবং নবমীতে তিনটি ছাগবলির রেওয়াজ রয়েছে। মহালয়ার সাত দিন আগে থেকে বেলগাছের তলায় শুরু হয় কল্পারম্ভ। আর স্থায়ী দুর্গা দালানে চলে চণ্ডীপাঠ। ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যায় বেলবরণের পরে কুলদেবতা নারায়ণ শিলাকে আনা হয় দুর্গা মন্ডপে। শুরু হয় পুজো। বাড়ির প্রবীণ সদস্য সনৎবাবু, প্রফুল্লবাবু এবং বিশ্বনাথবাবুরা জানান, অষ্টমীতে যজ্ঞ ও আরতির পর ছোট ছোট মাটির প্রদীপ বাঁশের চেঙারিতে বসিয়ে পরিবারের সদস্যরা যে যার ঘরে নিয়ে যান। দশমীতে পরিবারের সব পুরুষ সদস্যরা পাঁচ বার দুর্গাস্তোত্র পাঠ করে দালানের সামনে আটচালায় গড়াগড়ি দেন। পুজো চালানোর জন্য বর্ধমান মহারাজ বক্সী পরিবারকে ৫০০ বিঘা জমি এবং বেশ কিছু পুকুর দান করেছিলেন। তখন পুজো হতো বেশ জাঁকজমক করেই। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই সম্পত্তির কিছুই নেই প্রায়। তাই জাঁক কমেছে। তবে, প্রথা-রীতিনীতি রয়েছে অটুট। |
|
|
|
|
|