সম্পাদকীয় ১...
প্রতিবাদের বিষয়
নাগরিকরা মিছিল-সমাবেশ করিয়া সরকারের নীতির প্রতিবাদ করিবেন, গণতন্ত্রে তাহা অপ্রত্যাশিত নহে। কিন্তু রবিবার নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন ব্রিজে সাতশো নাগরিক গ্রেফতারের ঘটনাটি একটু বিশেষ নজর দাবি করে। তাহার প্রথম কারণ প্রতিবাদের বিষয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাড়িয়া চলিতেছে। বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ন্ত্রণ করিতে মার্কিন সরকার ব্যর্থ। তাহার ফলে দেশের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হইতেছে এবং সাধারণ মানুষের অবস্থার ক্রমশ অবনতি ঘটিতেছে, সেই অভিযোগে এই প্রতিবাদ। ইতিপূর্বে যে বিষয়গুলি লইয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বড় বড় জনসমাবেশ হইয়াছিল, সেগুলিতে কোনও না কোনও নির্দিষ্ট দাবি ছিল। যেমন ইরাক যুদ্ধের অবসান, কিংবা সমকামীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অবসান। কিন্তু অর্থনৈতিক অসাম্যের প্রতিবাদ ঠিক সেই গোত্রের নহে। ইহা একটি সামগ্রিক অসন্তোষের প্রকাশ। আজকের মার্কিন নাগরিক, বিশেষত যুবসমাজ, তাহাদের জীবনযাত্রার সম্ভাব্য মান সম্পর্কে আশাবাদী নহেন। এই সমস্যার মীমাংসা এক দিনে হইবে না, তাহাও প্রতিবাদকারীরা জানেন। তাঁহারা তবু এক দীর্ঘমেয়াদি ‘অকুপাই’ বা ‘দখল করো’ আন্দোলনের পরিকল্পনা করিতেছেন-- শহরের কোনও একটি অংশ দখল করিয়া বসিয়া তাঁহারা ‘নীচের ৯৯ শতাংশ’ মানুষের সমস্যাকে দৃশ্যমান করিতে চান। দ্বিতীয়ত, এই প্রতিবাদে বিশ্বায়নবাদী হইতে মার্কসবাদী, নানা মতের মানুষ একজোট হইয়াছেন। আন্দোলনের কোনও নির্দিষ্ট পদ্ধতি নাই, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও নাই। তাহা সত্ত্বেও আন্দোলন ক্রমশ ছড়াইতেছে - নিউ ইয়র্ক, লস এঞ্জেলেস এবং বস্টন শহরে ‘দখল করো’ আন্দোলন শুরু হইয়াছে। আন্দোলনকারীরা মূলত ‘ফেসবুক’ বা ‘টুইটার’-এর মতো সামাজিক সংযোগের প্রযুক্তির দ্বারা কার্যসূচি পরিচালনা করিতেছেন। এমন আন্দোলন ফলপ্রসূ হইবে কি না, সন্দেহ করিয়াছেন অনেকেই। আন্দোলনকারীরা বলিয়াছেন, তিউনিশিয়া কিংবা মিশরে যদি নেতৃত্বহীন নাগরিক সমাজ অভীষ্ট সিদ্ধ করিতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রেই বা পারিবে না কেন?
সাফল্যের আশা কম হইলেও, এই বিক্ষোভের মূলে যথেষ্ট কারণ রহিয়াছে। বহুজাতিক বাণিজ্যিক সংস্থা, ব্যাঙ্ক, লগ্নিকারী সংস্থা প্রভৃতির অত্যধিক লাভের আগ্রহ এবং স্বনিয়ন্ত্রণে অনীহা বিশ্বের অর্থনীতিতে বিপর্যয় ডাকিয়া আনিয়াছিল। ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হইয়াছে যে আর্থিক মন্দার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নবিত্ত মানুষদের ক্ষতি হইয়াছে অনেক বেশি। বর্তমানে সে দেশের ১৫ শতাংশ জনসংখ্যা ‘গরিব’ বলিয়া চিহ্নিত হইয়াছে, যাহা গত তিন দশকের ইতিহাসে সর্বাধিক। ছয়জনের একজন মার্কিনি কোনও না কোনও সরকারি সহায়তা পাইতেছেন। একবিংশ শতকের প্রথম দশকটিকে ‘হারানো দশক’ বলা হইতেছে, কারণ এই সময়ে মার্কিন পরিবারগুলির আয় বাড়ে নাই, বরং কমিয়াছে। ছাত্রদের উপর ঋণের বিপুল বোঝা চাপিয়াছে, বহু পরিবার গৃহঋণ শোধ করিতে না পারিয়া গৃহহারা হইতেছে, কর্মহীনতা বা সামান্য বেতনে আংশিক সময়ের কাজ পরিবারে এবং সমাজে নিরাপত্তাহীনতা আনিতেছে। সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি বন্ধ হইতেছে, ফলে গরিব পরিবারগুলি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে। কৃষ্ণাঙ্গ এবং স্প্যানিশভাষীদের মধ্যেই দারিদ্র অধিক, তাই সামাজিক অস্থিরতার আশঙ্কাও বাড়িতেছে। কিছু দিন পূর্বে ব্রিটেনে যে দাঙ্গা ঘটিয়া গেল, তাহা সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এইরূপ অস্থিরতা এবং ক্ষোভেরই বহির্প্রকাশ। এমন অবয়বহীন, স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ক্রমশ বাড়িতে পারে। অতএব ‘দখল করো’ আন্দোলন অসংগঠিত এবং পরিকল্পনাহীন হইলেও তাহাকে অবজ্ঞা করা ভুল হইবে। ইহা অশনিসংকেত। গণতান্ত্রিক দেশেও রাজনৈতিক নেতারা যে সাধারণ মানুষের সমস্যার প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল নহেন, এই আন্দোলন তাহারই প্রমাণ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.