কংগ্রেসকে তির অণ্ণার, পাল্টা বার্তা রাহুলেরও
ত দিন সব রাজনৈতিক দলকেই আক্রমণ করছিলেন তিনি। আর আজ মহারাষ্ট্রের রালেগাঁও সিদ্ধিতে বসে সরাসরি কংগ্রেসকে নিশানা করলেন অণ্ণা হজারে। কেন্দ্রের প্রধান শাসক দলের বিরুদ্ধে তাঁর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, “যদি লোকপাল বিল কংগ্রেস অনুমোদন না করে, তা হলে যে রাজ্যগুলিতে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন, সেখানে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচারে নামব। মানুষকে বলব, তাঁরা যেন কংগ্রেসকে ভোট না দেন।” সরাসরি তাদের দিকে ধেয়ে আসা এই আক্রমণের রাজনৈতিক জবাব মুহূর্ত পরেই ২৪ আকবর রোডে কংগ্রেস সদর দফতর থেকে ধেয়ে গিয়েছে অণ্ণা-শিবিরের দিকে। কংগ্রেসের নবীন প্রজন্মের নেতা রাহুল গাঁধীও সরাসরি না বলে অণ্ণা-শিবিরকে পরোক্ষে বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, “রাজনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমেই দুর্নীতি দমন সম্ভব।” রাজনৈতিক মহলের মতে, গাঁধী পরিবারের এই তরুণ প্রজন্ম ‘গাঁধীবাদী’ অণ্ণা ও তাঁর সহযোগীদের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এসে দুর্নীতি বিরুদ্ধে লড়াই করার কথাই বলতে চেয়েছেন।
শুধু কংগ্রেসকে হুঁশিয়ারি দেওয়া নয়, আজ প্রধানমন্ত্রীকেও নিশানা করেছেন অণ্ণা। তাঁর কথায়, “টু-জি কেলেঙ্কারিতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের যে কোনও ভূমিকা ছিল না, তা স্পষ্ট করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকেও অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে।” স্বাভাবিক ভাবেই অণ্ণার এই সব মন্তব্যের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আজ প্রশ্ন উঠেছে। সেটা আঁচ করে ভারসাম্য রাখতেও সচেষ্ট হয়েছেন অণ্ণা। বলেছেন, “কংগ্রেসের সমালোচনা করা মানেই যে আমি বিজেপিকে সমর্থন করছি, তা নয়। যাঁরা এটা মনে করছেন, তাঁরা মানসিক ভাবে প্রস্তুত নন।” এ কথা বলেই গুজরাতের পুলিশ কর্তা সঞ্জীব ভট্ট-র গ্রেফতারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন অণ্ণা। আর তাতে বিলক্ষণ চটেছে বিজেপি!
তাৎপর্যপূর্ণ হল, জনলোকপাল বিলের পক্ষে ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে গোটা দেশজুড়ে সফরের ঘোষণা অণ্ণা ইতিমধ্যেই করেছেন। আর তা তিনি শুরু করতে চলেছেন উত্তরপ্রদেশ থেকে। যে রাজ্যে কংগ্রেসের শক্তি বাড়ানো এখন রাহুল গাঁধী চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তবে অণ্ণা সহযোগীদের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সুতরাং, অণ্ণার প্রচার যাত্রার নেপথ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দেখা ঠিক হচ্ছে না।
মেট্রোয় চড়ে জনসমাবেশের পথে রাহুল গাঁধী। মঙ্গলবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
সহযোগীরা যে যুক্তিই দিন না কেন, অণ্ণার প্রচারের বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস যে উদ্বেগে, সংশয় নেই। ফলে কৌশলে মোকাবিলা করার কথাই এখন ভাবছেন দলের নেতৃত্ব। অণ্ণার আন্দোলনের গোড়ার দিকে তাঁকে কংগ্রেস বার্তা দিয়েছে, ক্ষমতা থাকলে রাজনীতিতে আসুন। তার পরে ক্ষমতা দেখান। শুরুতে যথেষ্ট চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু অণ্ণা সম্পর্কে কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারির মন্তব্য নিয়ে তুমুল নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার পর এখন তারা যথেষ্ট সংযত। শব্দচয়নে সৌজন্য রাখলেও কংগ্রেস অবশ্য অণ্ণা সম্পর্কে তাদের বক্তব্য বদলায়নি। আজ রাহুলের কথাতেও তারই প্রতিফলন ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
যুব কংগ্রেসের সদস্য অভিযানের জন্য আজ দিল্লির রোহিনীতে একটি সভা করেন রাহুল গাঁধী। সেখানে তিনি বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে এখন মানুষ সরব। কিন্তু দুর্নীতি দমন করতে গেলে রাজনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উপায়েই তা করা সম্ভব।” ইঙ্গিত স্পষ্ট, অণ্ণার ধাঁচে নয়, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে চান তিনি।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, অণ্ণার আন্দোলনে যুব সম্প্রদায় প্রভাবিত হয়েছে, সংশয় নেই। আর সেই কারণেই রাহুল যুব সমাজকে কাছে পেতে আগের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। আজ প্রথমে মেট্রো তার পরে ট্যাক্সি চড়ে যে ভাবে যুব কংগ্রেসের সমাবেশে পৌঁছেছেন রাহুল, তাতে যথেষ্টই খুশি সভায় উপস্থিত জনতা। কংগ্রেস সূত্রের বলা হয়, এ দিন উত্তর দিল্লির রোহিণীর কাছে জাপানিজ পার্কে দ্রুত পৌঁছনোর জন্য প্রথমে রেসকোর্স রোড থেকে মেট্রোয় চড়েন রাহুল। রোহিণী ওয়েস্ট মেট্রো স্টেশনে নেমে সেখান থেকে একটি ট্যাক্সি ধরে ২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে যুব কংগ্রেসের সভায় পৌঁছন তিনি। রাহুল গাঁধীকে সভায় পৌঁছে দিতে পেরে উত্তেজিত ট্যাক্সিচালক শ্রবণ বলেন, “আমি রোহিণী ওয়েস্ট মেট্রো স্টেশনের কাছে ছিলাম। রাহুল আমার ট্যাক্সিতে উঠে বসেন।” রাহুলের এক সহকর্মী জানিয়েছেন, সভাস্থলে পৌঁছনের ওটাই সব চেয়ে সহজ রাস্তা। তা ছাড়া, আজ তিনি যে ভাবে সভায় পৌঁছেছেন, তাতে যুব সমাজের কাছে একটা ইতিবাচক বার্তা গিয়েছে। দিল্লির আজকের সভার পরে এ বার উত্তরপ্রদেশ জুড়ে সফরে নামবেন রাহুল গাঁধী। জেলায় জেলায় ঘুরবেন। দুর্নীতি বিরুদ্ধে সেই সব সভায় সরব হবেন। উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী শাসনের ‘দুর্নীতি ও অপশাসন’ নিয়ে প্রচারই হবে রাহুলের আক্রমণের মূল সুর।

পরের ভোটে নেতা রাহুলই, বললেন প্রণব
পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বেই লড়বে কংগ্রেস। মঙ্গলবার আরও একবার এ কথা স্পষ্ট করে দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। এ দিন বীরভূমের লাভপুরে মিরিটি গ্রামে নিজের বাড়িতে বসে তিনি বলেন, “পরের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে লড়বে। তিনি হবেন আমাদের নেতা।” ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দল যে রাহুলকে সামনে রেখে লড়বে, সে কথা আগেও একাধিক কংগ্রেস নেতা প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.