শহরের গতি ফেরাল পুলিশ, দুর্ভোগে মেট্রো
ক জন শিক্ষা নিল। অন্য জন নয়।
তাই সপ্তমীর মতো মহাষ্টমীতেও ভুগলেন মেট্রো যাত্রীরা। অন্য দিকে পঞ্চমী, ষষ্ঠী ও সপ্তমীর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কলকাতার রাস্তায় এ দিন দুপুর থেকেই যানবাহন ছুটেছে স্বাভাবিক গতিতেই। বেশি সংখ্যায় কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবক নামিয়ে তাই শহরকে গতিশীল রাখতে সক্ষম কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ। ঠাকুর দেখতে রাস্তায় নামা দর্শনার্থীদের ভোট তাই পড়েছে কলকাতা পুলিশের বাক্সেই।
এ বার পুজো শুরু হয়েছে শুক্রবার, চতুর্থীর রাত থেকেই। পঞ্চমী, ষষ্ঠীতে এত লোক রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন যার আঁচ কলকাতা পুলিশ-কর্তারা আগে থেকে পাননি। মেট্রো রেল-কর্তারাও নন। ষষ্ঠীতে সারা রাত বাস চলেছে। কিন্তু মেট্রো চলেছে নিজস্ব নিয়মেই। সপ্তমীতে মেট্রো রাতে চলেছে দু’টো পর্যন্ত। কিন্তু শুরু হয়েছে বেলা দু’টোয়। মহাষ্টমীতেও মেট্রো কর্তারা ট্রেন চালিয়েছেন সেই বেলা দু’টো থেকেই। মহাষ্টমীর সকাল থেকে যে বেশি মানুষ রাস্তায় নামবেন তার ইঙ্গিত কিন্তু গত দু’দিনেই ছিল। মেট্রো-কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কিন্তু নড়চড় হয়নি। ফলে সপ্তমীর দুপুরের দুর্ভোগের পুনরাবৃত্তি হয়েছে মঙ্গলবারেও।
গত ১০ বছরের রেকর্ড বলছে, পুজোয় দর্শনার্থীদের সব থেকে বেশি ভুগিয়েছে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। দুপুরে ভোগ খেয়ে সবে মানুষ রাস্তায় বেরোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন কিংবা পাট ভাঙা নতুন জামা, নতুন জুতো পায়ে বাসে উঠছেন, ঝমঝম করে নামা বৃষ্টি মন খারাপ করে দিয়েছে। এ বার দ্বিতীয়া থেকেই বৃষ্টি অসুরটা অনুপস্থিত। আবহাওয়া দফতর জানিয়ে দিয়েছিল, নিম্নচাপের আশঙ্কা না থাকলেও, স্থানীয় ভাবে বৃষ্টি হবে কোথাও কোথাও। এ দিন দক্ষিণ কলকাতায় দুপুরের পরে ঝমঝম করে এক পশলা বৃষ্টি নামল। কিন্তু দর্শনার্থীদের তাতে কোনও সমস্যা হয়নি। কারণ, যেমন হঠাৎ এসেছিল, তেমনই হঠাৎ থেমে গেল বৃষ্টিটা।
বৃষ্টিতে গড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে বন্ধুদের সঙ্গে আটকে পড়েছিলেন তারকেশ্বরের ঝুমা দে। সকাল থেকে ঠাকুর দেখছেন। অস্বস্তিকর গুমোট আবহাওয়ায় ঘেমেনেয়ে একসা। একটা দোকানের শেডে দাঁড়িয়ে আঁজলা পেতে নিলেন জল। চোখেমুখে ছিটিয়ে নিয়ে বান্ধবীকে বললেন, “বাঁচা গেল। অস্বস্তিটা কাটিয়ে দিয়ে গেল বৃষ্টিটা।” মহাষ্টমীর বিকেলের বৃষ্টিটাকে তাই আর ভিলেন হতে হল না। ভিলেন এ দিনও সেই মেট্রো। মেট্রো সকাল সকাল চালু হলে এত হ্যাপা পোহাতে হত না ঝুমাদের। হাওড়া থেকে ধর্মতলা এসে গড়িয়া চলে আসতে পারতেন। সময় বাঁচত।
বেলা দু’টোর পরে মেট্রো চালু হওয়ার পরে যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য দেখতে পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে হাজির হন তিন পদস্থ কর্তা। রেলবোর্ড চেয়ারম্যান বিনয় মিত্তল, মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার পেরি ভাস্কর মূর্তি এবং মেট্রোর নতুন গেট-এর দায়িত্বে থাকা সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর, বিক্রম চোপড়া। মেট্রোর মুখপাত্র প্রত্যুষ ঘোষ জানান, রেলকর্তারা নতুন গেটগুলি পরীক্ষা করেন এবং প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। যাত্রীদের অধিকাংশেরই মত হল, পুজোর সময় বেলা বারোটা নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হলে সুবিধা হয়। যাত্রীদের প্রকৃত চাহিদা অনুসারে ট্রেন চলাচলের সময় অদলবদল করা হলে যাত্রীরা উপকৃত হবেন। কিন্তু তাতেও সিদ্ধান্ত বদলায়নি মেট্রো। আজ, নবমীতে ফের বেলা দু’টো থেকেই চলবে মেট্রো। এত তাড়াতাড়ি সকাল সকাল ট্রেন চালানোর পরিকাঠামো তাঁরা তৈরি করতে পারবেন না বলে যুক্তি দিয়েছেন মেট্রো-কর্তারা।
যাত্রীদের ভোগান্তি দেখে মেট্রো রেল কোনও শিক্ষা না নিলেও, মহাষ্টমীর ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজতে এ দিন দুপুরে লালবাজারে পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সপ্তমীতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন, তা নিয়ে আলোচনা হয় এ দিনের বৈঠকে। সপ্তমীর গভীর রাতে মূল ও সংযোজিত এলাকার বড় মণ্ডপগুলি ঘুরে দেখেন কমিশনার। নিজের অভিজ্ঞতাও তিনি জানান অন্য অফিসারদের। সেই মতো তৈরি হয় অষ্টমী ও নবমীর ট্রাফিকের অ্যাকশন প্ল্যান। সপ্তমীর অভিজ্ঞতার নিরিখে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকেই রাস্তায় নেমে যায় অতিরিক্ত বাহিনী। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে পুলিশের সংখ্যাও। কোন কোন এলাকা গত দু’দিন ভুগিয়েছে, তা ধরে ধরে তৈরি হয় নির্দিষ্ট পরিকল্পনা। আর তার জেরেই মঙ্গলবার দুপুর থেকে দক্ষিণের গড়িয়া নবদুর্গা থেকে উত্তরের সিঁথি সাউথ অ্যাথলেটিক, কিংবা পূর্বের কাঁকুড়গাছি মিতালি থেকে পশ্চিমের বড়িশা ক্লাব পর্যন্ত যান চলেছে মসৃণ ভাবে। কী ভাবে তা সম্ভব হল?
লালবাজার সূত্রের খবর, ষষ্ঠী ও সপ্তমীতে যে সব রাস্তা-মণ্ডপে নির্দিষ্ট সময়ের পরে তেমন ভিড় দেখা যায়নি, সে সব জায়গা থেকে আড়াইটের সামান্য আগে ট্রাফিকের কিছু ইনস্পেক্টর, সার্জেন্ট ও কনস্টেবলকে সরিয়ে নেওয়া হয়। সকাল আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত বিশ্রাম দেওয়ার পরে তাঁদের মোতায়েন করা হয় দক্ষিণের ওই রাস্তাগুলিতে।
দর্শনার্থী ও পুলিশের অভিজ্ঞতা বলছে, শহরের বিভিন্ন জায়গায় সমস্যা হয়েছে, দু’টি রাস্তার সংযোগস্থলে দর্শনার্থীদের দড়ি ধরার ক্ষেত্রেও। সেখান থেকে ‘অনভিজ্ঞ’ পুলিশকর্মীদের সরিয়ে মোতায়েন করা হয়েছে অভিজ্ঞদের। ফলে রাস্তার সংযোগস্থলগুলিতেও যানবাহন কিংবা দর্শনার্থী কারও তেমন সমস্যা হয়নি। রাতে মানুষের চাপ যেখানে যেমন বেড়েছে, সেখানে সেই মতো রিজার্ভে থাকা পুলিশকর্মীদের ব্যবহার করা হয়েছে। মহাষ্টমীতে ভিড়ের সঙ্গে যুদ্ধে উতরে গিয়েছে কলকাতা পুলিশ। মহাষ্টমীর দাওয়াই তাই মহানবমীর অস্ত্র পুলিশের।
সব ভাল যার শেষ ভাল।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.