ষষ্ঠীতেই জোয়ার উত্তরবঙ্গের মণ্ডপে মণ্ডপে
রের তিন দিন কী অবস্থা হতে চলেছে, তার ইঙ্গিত মিলল রবিবারই। মহাষষ্ঠীতেই ভিড় নামল পথে।
বস্তুত, কোচবিহার থেকে মালদহের বিভিন্ন মণ্ডপে রবিবার থেকেই রাস্তায় রাস্তায় মানুষের যে ঢল দেখা গিয়েছে, তাতে আগামী তিন দিন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে দর্শনার্থীদের সামাল দিতে উদ্যোক্তাদের যে বেগ পেতে হবে, সেটা স্পষ্ট। অথচ সব মণ্ডপ যে তৈরি, তা নয়। এখনও কোথাও কোথাও তুলির শেষ টান চলছে। কোথাও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যস্ততা। তার মধ্যেই বাড়ির ছোট ও বয়স্কদের নিয়ে মণ্ডপ দর্শনে বেরিয়ে পড়েছে শয়ে শয়ে পরিবার। অনেকেই পুজোর বাজার ও মণ্ডপ-দর্শন সারলেন এক সঙ্গে।
মালদহের ছবিটা কেমন ছিল? এখনও মণ্ডপের কাজ শেষ করে উঠতে পারেনি বেশ কয়েকটি পুজো কমিটি। কিন্তু তাতে কী! পুজোর বাজার সারার ফাঁকে সকালেই কচিকাঁচাদের নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন অনেক অভিভাবক। পোড়া মাটির তাওয়া, টব, ঘণ্টা, ঘট, প্রদীপ, গ্লাস, কলসি, বাটি, হাঁড়ি, মটকা, জালকাটি, কুয়োর পাট দিয়ে তৈরি প্রান্তপল্লি সবর্জনীনের মণ্ডপ থেকে শুরু করে গয়েশপুর মঙ্গল সমিতির গাছের আদলে গড়া দেবী মূর্তি দেখতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
বৃষ্টি এ বার উত্তরবঙ্গের পুজো কমিটিগুলিকে ভুগিয়েছে। এ দিনও শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার-সহ কিছু এলাকায় এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন উদ্যোক্তারা। বৃষ্টির জন্যই এখনও মণ্ডপ তৈরির কাজ শেষ করতে পারেনি মালদহের বিবেকানন্দ ক্রীড়া চক্র।
ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বালুরঘাটের একটি পুজোমণ্ডপে ভিড়। অমিত মোহান্ত-র তোলা ছবি।
ওই ক্লাবের সম্পাদক অমিতাভ রায় জানান, সোমবার দুপুরের মধ্যে মণ্ডপের কাজ তাঁরা শেষ করে ফেলতে চান। জেলা প্রশাসন সপ্তমীর দিন দুপুর তিনটে থেকে মালদহ শহরে সমস্ত ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকার কথা ঘোষণা করেছে। সে কথা মাথায় রেখে এ দিন বিকেলের পরেই বহু মানুষ রিকশায় বা মোটরবাইকে বা গাড়িতে করে প্রতিমা দর্শন সেরেছেন। সবর্জয়ী ক্লাবের লোহার টুকরো দিয়ে মণ্ডপ ও লোহার তৈরি দেবী দুর্গা, শান্তিভারতী পরিষদের চিন ও জাপানের সংস্কৃতির মিশ্রণে পুজো মণ্ডপ বা অভিযাত্রী সঙ্ঘের মণ্ডপে শিবলিঙ্গ দেখতে যথেষ্ট ভিড় হয়।
কোচবিহারেও কার্যত একই ছবি। শহরের সংহতি ক্লাব, গাঁধীনগর লীলাস্মৃতি ভবানী মন্দির, বিশ্বসিংহ রোড সর্বজনীন, ঘোষপাড়া ইয়ুথ ক্লাব কিংবা চালতাতলা যুব সঙ্ঘের মণ্ডপে ভিড় জমিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। দিনভর পুজো উদ্বোধনে ব্যস্ত ছিলেন উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তারই ফাঁকে নাতনিকে নিয়ে সকালে কয়েকটি পুজো মণ্ডপে ঢুঁ মেরে নিয়েছেন। বললেন, “পুজোয় ভিড় যে ভালই হবে, সেটা ষষ্ঠীতেই পরিষ্কার। গ্রাম থেকে আসা লোকজন যাতে নির্বিঘ্নে বাড়িতে ফিরতে পারেন, সে জন্য এ বার বাড়তি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।” জেলার সহকারী বিদ্যলয় পরিদর্শক দেবাশিস ভট্টাচার্য সপরিবার বিশ্বসিংহ রোড সর্বজনীনের মণ্ডপে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, “আজ বাড়ির কাছাকাছি কয়েকটি মণ্ডপ দেখে নিলাম। কাল থেকে দূরেরগুলো শুরু করব।” কোচবিহারে এ দিন রাজ পরিবারের পুজোর সূচনা হল।
ভিড় হয়েছে বালুরঘাটের মণ্ডপগুলিতেও। সাহেব কাছারি এলাকার সৃজনী সঙ্ঘের মণ্ডপে বাঁশের কুলো, ডালি, ধামা দিয়ে নবদ্বীপের শিল্পীর তৈরি কারুকার্য দেখতে দুপুর থেকেই দর্শনার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়েছিল। দেখতে দেখতে আনন্দপাড়ার উজ্জ্বল দাস কিংবা চকভবানীর পিন্টু চক্রবর্তীরা বললেন, “মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি। খুঁটিনাটি মণ্ডপসজ্জা দিনের আলোয় একবার দেখে নিচ্ছি।” ওই পুজো কমিটির সম্পাদক গাবা পোদ্দার বলেন, “এ বার আমাদের মণ্ডপে ভিড় হবে সেটা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছি। সেই জন্য চতুর্থীতেই মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে।” ষষ্ঠীতে শিলিগুড়িও কম যায়নি। সারদা সেবক সঙ্ঘের প্লাস্টিকের পানীয় জলের বোতল দিয়ে তৈরি মণ্ডপ থেকে শুরু করে অগ্রগামী ক্লাবের বালির ভাস্কর্য দেখতে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। রাত যত বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভিড়। বিশেষ করে বড় বাজেটের মণ্ডপে প্রচুর লোকজন হাজির হয়েছেন। সবারই এক বক্তব্য, “সপ্তমী থেকে তো রাস্তায় নামাই যাবে না! তাই এ দিনই যে ক’টা পারি মণ্ডপ ঘুরে নিচ্ছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.