উত্তরের চিঠি
বাবুই এখনও বাসা বুনছে!
বাবুই পাখির বাসা। ছবি: অশোক সূত্রধর
প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে হঠাৎ বাবুই পাখির বাসার সন্ধান পাওয়া গেল। সাতপুকুরিয়া হাটের কাছে এক নার্সারি বিদ্যালয়ের লাগোয়া খেজুরগাছে মোট চারটি বাসা দুলছে। পুরুষ বাবুই ও স্ত্রী-পাখির বাসার দেখা মিলল। দীর্ঘ দুই দশক পর এ রকম ঝুলন্ত বাসা দেখতে পেয়ে সত্যি আনন্দিত হলাম।
ছোটবেলায় বন্ধুবান্ধব মিলে বাবুই পাখির খসে পড়া পরিত্যক্ত বাসা এখানে-ওখানে খুঁজে বেড়াতাম। প্রায়ই সেই বাসা বাড়িতে নিয়ে আসতাম। ঘরের মধ্যে ঝুলিয়ে রেখে দিতাম খুব যত্ন সহকারে। প্রখর বুদ্ধি সম্পন্ন বাবুই পাখির বাসা অত্যন্ত আশ্চর্যের। পুরুষ বাবুর পাখির বাসা স্ত্রী-বাবুই পাখির তুলনায় ছোট। এবং শুধু বসার জায়গায় দণ্ডের মতো থাকে। সেখানে বসে রাত কাটায়। স্ত্রী-বাবুই উল্টো কুঁজোর মতো বাসা তৈরি করে। সেখানে তারা ডিম দেয় এবং ছানাদের বড় করে তোলে। বাবুই পাখির বাসার ভিতরের দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে ভেতরের দুই দিকে কাঁচা গোবর লাগানো থাকে। মাঝে মাঝে কাঁচা গোবর লাগিয়ে সেখানে জোনাকি লাগিয়ে রাখে তাদের বাসা আলোকিত করার জন্য।
এত সুন্দর সুপরিকল্পিত ভাবে নারকেল, সুপারি, খেজুর ইত্যাদি পাতা থেকে চিকন সুতোর মতো আঁশ বের করে বাসা বোনে, তা খুবই আশ্চর্যের। এমন বাসা বড় বড় কোম্পানির সুদক্ষ কারিগরেরাও বানাতে পারবে না। দক্ষ কারিগরের মতো এই পাখি আমাদের পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, এর দায় কিন্তু আমাদেরই।
যথেচ্ছ নগরায়ন, বিমানবন্দর তৈরি, অরণ্য ধ্বংসের ফলে গাছগাছালির সংখ্যা ক্রমশই কমছে। পেট্রোল ডিজেলের ধোঁয়া বেড়ে চলেছে। ধোঁয়ার মধ্যে নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ বাতাসে মিশে কীট-পতঙ্গ মরে যাচ্ছে। পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানাচ্ছেন, মোবাইল টাওয়ার থেকে নিঃসৃত বিদ্যুৎ চুম্বকীয় বিকিরণ পাখির ডিম ও ভ্রূণের যথেষ্ট ক্ষতি করে। সালিম আলি সেন্টার ফর অর্নিথলজি অ্যান্ড ন্যাচারাল হিস্টরি-র গবেষকদের মতে, টাওয়ার থেকে নির্গত ক্ষুদ্র তরঙ্গ পাখি-শাবকের হালকা মাথার খুলির যথেষ্ট ক্ষতি সাধন করে।
এই বাবুই পাখিদের এশিয়া, ইউরোপ, সুদান, মিশর, আরব, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ-সহ পৃথিবীর বহু দেশেই অবাধ বিচরণ ছিল। এখন ক্রমশ বিলুপ্তির পথে। পক্ষীবিজ্ঞানীরা বলেছেন, প্রকৃতিতে একটি প্রজাতির পাখি কমে যাওয়ার অর্থ জৈব বৈচিত্রের ব্যাপক ধ্বংসের পূর্বাভাস। তাই, এই পাখিকে বাঁচিয়ে রাখতে পরিবেশপ্রেমী তথা সকল স্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান রাখছি।
পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে
১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের পর প্রথম লোকগণনা হয় ১৯৫১-য়। তার রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের লোকসংখ্যা ছিল ৩৬.১১ কোটি। আর বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১২১ কোটি। অর্থাৎ, গত ষাট বছরে লোকসংখ্যা বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। এমন দ্রুতগতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে খাদ্য সমস্যা, বেকার সমস্যা ইত্যাদি আরও বিভিন্ন সমস্যা ছাড়াও গ্রামবাংলার মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর ক্রমশ ধ্বংসাত্মক প্রভাব দেখা দিচ্ছে। চার-পাঁচ দশক আগে যখন লোকসংখ্যা অনেক কম ছিল, তখন প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে গেলে সেখানে দেখা যেত অনেক উঁচু-উঁচু গাছপালা, ঝোপঝাড়, খাল-বিল আর কত পশুপাখি। সবুজে ঢাকা দিগন্তপ্রসারী কৃষিজমি, পুকুরে অপর্যাপ্ত মাছ। প্রতিটি ঋতুর পরিবর্তন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে সহজেই বোঝা যেত। আজকাল ক্যালেন্ডার না দেখলে বোঝাই যায় না কোনটা কোন ঋতু! আবার, গভীর রাতে প্রহরে প্রহরে শিয়ালের ডাকে, নিঝুম দুপুরে ‘ইষ্টিকুটুম’ আর ‘বউ কথা কও’ পাখিদের কলতানে, পদ্মফুলে ভরা দিঘিগুলির কালো জলে পানকৌড়িদের ডুব সাঁতার দেখে বোঝা যেত এটাই তো গ্রামবাংলার আসল রূপ! সেদিন মনে হত এই বাংলার গাঁয়ের এমনি রূপ দেখে মুগ্ধ হয়ে কবি একদিন লিখেছিলেন ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি’।
আজকাল গ্রামে-গঞ্জে গেলে সেই সব মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য আর চোখে পড়ে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মাঠ, গাছপালা, ঝোপ ইত্যাদি ধ্বংস করে, জলাভূমিগুলি ভরাট করে শুধু ঘন বসতি আর ঘিঞ্জি বস্তি তৈরি হচ্ছে। কোথাও আর ফাঁকা জায়গা দেখা যাচ্ছে না। গাছপালাহীন, পশুপাখিহীন গ্রামগুলি এখন ছন্দহীন কবিতার মতোই সৌন্দর্যহীন হয়ে পড়েছে। তাই জনবিস্ফোরণ নিয়ন্ত্রণ করা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করা সবচেয়ে জরুরি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.