ছিল খালি জলের বোতল, হয়ে গেল পুতুল! কোনওটা লাল, কোনওটা নীল। প্লাস্টিকের গামলা, জলের জার, ঘিয়ের কৌটো রঙ করেও তৈরি করা হয়েছে পুতুল। শয়ে শয়ে। আর এমন অভিনব সজ্জা দেখতে রবিবার, ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় ভিড় উপচে পড়ল শিলিগুড়ির সারদাপল্লির সারদা সেবক সঙ্ঘের মণ্ডপে। শুধু সারদা সেবক সঙ্ঘই নয়, শিলিগুড়ির ‘বিগ-বাজেট’-এর পুজো মণ্ডপগুলিতে এ দিন থেকেই ঢল নেমেছে জনতার। আগত দর্শনার্থীদের সংখ্যার নিরিখে পিছিয়ে ছিল না জলপাইগুড়ির ডিবিসি রোড, কদমতলা, রায়কতপাড়ার পুজো মণ্ডপও। এ দিন শিলিগুড়ির পুজোগুলির মধ্যে এ বছরের পার্লে-আনন্দবাজার পত্রিকার শারদ অর্ঘ্যে সেরার সম্মান পায় সেন্ট্রাল কলোনি। গেট বাজার এলাকার এই পুজোর থিম রাজস্থানের শিল্পগ্রাম।
দুপুরেই একপশলা বৃষ্টি। ষষ্ঠীর শিলিগুড়ি জলে ভাসবে কি না এমন আশঙ্কা উঁকি দিচ্ছিল অনেকের মনে। তবে বিকেলের আগেই আকাশ ফের স্বাভাবিক। সুযোগ হাতছাড়া করে কে? সন্ধ্যায় শিলিগুড়ির জাতীয় তরুণ সঙ্ঘের মণ্ডপে আলো জ্বলার পরে ভিড় দেখে মনে হচ্ছিল, সপ্তমী! সেখানে ছিমছাম মণ্ডপের সঙ্গে আলোকসজ্জা নজরকাড়া। নজর কাড়ার এই লড়াই ষষ্ঠীতেই জমিয়ে দিয়েছে শিলিগুড়ির হায়দরপাড়াও। রথের মেলাকে ‘থিম’ করে গড়া এই মণ্ডপে সন্ধ্যার পরেই ভিড় জমতে শুরু করে। ভিড় দেখা গিয়েছে রবীন্দ্র সঙ্ঘেও। লুঙ্গি ও গামছা দিয়ে এখানে চমকে দেওয়ার মতো মণ্ডপ তৈরি করেছেন নবদ্বীপের শিল্পীরা। মেটেলির দিলীপকুমার সাহা স্ত্রী-র সঙ্গে এসেছিলেন সারদা সেবক সঙ্ঘের মণ্ডপে। বললেন, “পুজোর ক’দিন খুব ভিড় হয় শুনে ষষ্ঠীতেই বেরিয়ে পড়েছি। এত রকমের চিন্তা-ভাবনা রয়েছে মণ্ডপ তৈরির পিছনে। বেশ লাগল।” মা দীপিকাদেবী এবং ছেলে শুভজিৎকে নিয়ে এ দিন ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা শ্রাবণী রায়। শ্রাবণীদেবী বললেন, “আজ যা ভিড় দেখছি, পরের তিনটে দিন যে কী হবে!” |
বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে এ দিন সন্ধ্যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যস্ততাও ছিল যথেষ্ট। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব এবং শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বিকেল থেকে ব্যস্ত ছিলেন বিভিন্ন পুজো-উদ্বোধনে। গৌতমবাবু উপকার অ্যাথলেটিক ক্লাব, বাঘা যতীন পার্কের পুজো, পূর্বাচল ক্লাব, তিনবাতি মোড়ের পুজো, অগ্রণী সঙ্ঘ, হিমাচল সঙ্ঘের মতো বিভিন্ন পুজোর উদ্বোধনে যোগ দেন। মন্ত্রী বলেন, “বাসিন্দারা পুজো উপভোগ করুন। পুলিশ প্রশাসনকে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, যানজট নিয়ন্ত্রণে নজর দিতে বলা হয়েছে।” অন্য দিকে, এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান বাঘাযতীন কলোনি, প্রধাননগর এলাকার বেশ কয়েকটি পুজো মণ্ডপ উদ্বোধন করেন। রুদ্রনাথবাবু বলেন, “ষষ্ঠীতে যে ভিড় দেখছি, তাতে পুজোর কয়েকটা দিন রাস্তায় কী পরিমাণ ভিড় হবে, অনুমান করতে পারছি। তবে প্রশাসনও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।”
জলপাইগুড়িতে এ দিন সন্ধ্যায় আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। মুখ শুকিয়ে যায় উদ্যোক্তাদের। তারই মধ্যে প্রতিমা দর্শনে বেরিয়ে ছিলেন বেগুনটারি এলাকার একটি আবাসনের বাসিন্দা কল্যাণ পাল। তিনি বলেন, “সপ্তমী থেকে তো সমস্ত রাস্তা জনসমুদ্রে ছেয়ে যাবে। সে জন্য আগেই যে ক’টা পারি প্রতিমা দর্শন করে নিচ্ছি।”
একই রকমের ভিড় ছিল বাজারেও। বিউটি পার্লারগুলির সামনে মহিলাদের লম্বা লাইন। সেই লাইনেই দাঁড়িয়েছিলেন সদ্য বিবাহিতা তনুজা দত্ত। বললেন, “কিছু কেনাকাটা বাকি ছিল। এ বার সেজেগুলেজ বাড়িতে ফিরব।” আইসক্রিমের স্টলের সামনে আড্ডা দেওয়া তরুণী প্রিয়াঙ্কা কর বললেন, “যে ক’টা পারি প্রতিমা দেখে নিয়েছি।” এ দিন শহরের যান নিয়ন্ত্রণ বিধি খতিয়ে দেখতে রাস্তায় নামেন পুরপ্রধান মোহন বসু। তিনি বলেন, “পুলিশ ও পুরসভা সমন্বয় রেখে কাজ করবে।”
ভিড় এ দিন দেখা গিয়েছে মালদহ থেকে কোচবিহার--উত্তরবঙ্গের ছয় জেলাতেও। মালদহে সবর্জয়ী ক্লাবের লোহার টুকরোর মণ্ডপ ও লোহার তৈরি প্রতিমা, শান্তিভারতী পরিষদের চিন ও জাপানের সংস্কৃতির মিশ্রণে মণ্ডপ বা অভিযাত্রী সঙ্ঘের মণ্ডপে শিবলিঙ্গ দেখতে যথেষ্ট ভিড় হয়। কোচবিহারে সংহতি ক্লাব, গাঁধীনগর লীলাস্মৃতি ভবানী মন্দির, বিশ্বসিংহ রোড সর্বজনীন, ঘোষপাড়া ইয়ুথ ক্লাব কিংবা চালতাতলা যুব সঙ্ঘের মণ্ডপেও ভিড় করে জনতা। বালুরঘাটেও সাহেব কাছারি এলাকার সৃজনী সঙ্ঘের মণ্ডপে বাঁশের কুলো, ডালি, ধামা দিয়ে নবদ্বীপের শিল্পীর তৈরি কারুকার্য দেখতে দুপুর থেকেই দর্শনার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়। |