সারা বছর এই সময়ের অপেক্ষায় ওরা থাকতেন। তখন উৎসবের আলো এসে পড়ত ওদের বাড়ির উঠোনে। কাঁচা মালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ও থিম ভিত্তিক পুজো শুরু হওয়ায় এখন শোলা শিল্পীদের বাজার কার্যত পড়ে গিয়েছে। অন্তত, গত কয়েক বছর ধরে হুড়ার লায়েকডি গ্রামের ডাক শিল্পীদের দিন-কাল ভাল যাচ্ছে না।
লায়েকডি গ্রামের অনেকগুলি পরিবার রয়েছে, যাঁরা পুজোর সময় প্রতিমার ডাকের সাজ তৈরি করেন। শোলা শিল্পীদের নানা শৈল্পিক কারু কাজ মণ্ডপে মণ্ডপে শোভা পায় প্রতিমার অঙ্গে। পরিশ্রম অনুযায়ী টাকা না পেলেও দর্শকদের তারিফে কাজের দাম পেতেন তাঁরা। তাঁর জন্যই পুজোর আগে দিন রাত পরিশ্রম করে তাঁরা প্রতিমার অঙ্গ সজ্জা তৈরি করতেন। শিল্পী মিত্তন যোগীর কথায়, “কাজের তারিফ পেলেই আমাদের মন ভরে যায়। তাই, বিক্রি করে কত টাকা পেলাম- তা নিয়ে কখনই মাথা ব্যাথা হয়নি।”
কিন্তু, তাঁদের সেই সুদিন আর নেই। একে কাঁচা মালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তার উপর ইদানিং পুজো কমিটিগুলি থিম পুজোর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ত্রিশ বছর এই পেশার সঙ্গে যুক্ত গৌতম যোগীর কথায়, “কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করছি, ডাকের সাজের কদর উদ্যোক্তাদের কাছে কমে গিয়েছে। এ বার তো বেশির ভাগ উদ্যোক্তা যোগাযোগই করেন নি।” কারণ, তাঁর অভিজ্ঞতা, থিম ভিত্তিক পুজো চালু হওয়ায় ডাক সাজের কদর কমে গিয়েছে। এখন সেই সাবেক প্রতিমা তৈরি করা কমে গিয়েছে। তার বদলে নানা ধরনের দুর্গা প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। শিল্পীদের ভাবনা অনুযায়ী এখন প্রতিমা তৈরি করা হয়। সে ক্ষেত্রে ডাক সাজের প্রয়োজন হয় না। আবার শোলার দাম গত কয়েক বছর ধরে বেশ বেড়ে যাওয়ায় অনেক পুজো উদ্যোক্তা ডাক সাজের জন্য খরচ করতে চাইছেন না।
শিল্পীরা জানিয়েছেন, এ বছর স্থানীয় কয়েকটি পুজো উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বায়না এসেছে। অথচ, কয়েক বছর আগে বাইরে থেকে অনেক কাজের বায়না আসত। তখন তাঁরা দম ফেলার ফুরসত পেতেন না। গৌতমবাবুর কথায়, “কর্ণাটক, বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকে কাজের বরাত আসত। তখন স্থানীয় উদ্যোক্তাদের বায়না নিতে পারতাম না। এখন ভিন রাজ্য থেকে আর কাজের জন্য যোগাযোগ করে না।” স্থানীয় পুজোগুলির বাজেট কম। তাই কাজও সে তুলনায় কম। তাই শোলা শিল্পীদের আক্ষেপ, বাংলার প্রাচীন ও সনাতন শোলা শিল্প বোধ হয় এ ভাবেই এক সময় হারিয়ে যাবে। |