|
|
|
|
|
|
|
বিষয়: ভারতের বিভিন্ন শহর |
শহর বললেই এখন আমাদের মনে হয়, নতুন, আধুনিক। আর গ্রাম হল পুরনো, সনাতন। কথাটা ঠিকই, তবে একটা ইতিহাস যেন কখনও ভুলে যেয়ো না। আমাদের সিন্ধুসভ্যতা ছিল নাগরিক সভ্যতা। হরপ্পা মহেঞ্জোদরোর নাগরিক নির্মাণ এখনও আমাদের চমকে দেয়। তার পর ভারতবর্ষে যে আর্য সভ্যতা গড়ে উঠল, সেটা কিন্তু বহু দিন পর্যন্ত ছিল গ্রামীণ। অর্থাৎ শহর চলে গিয়ে নতুন করে এল গ্রাম। তার পর আবার গ্রাম থেকে গড়ে উঠল জনপদ, তার পর মহাজনপদ, সেখান থেকেই আধুনিক শহর। আজ ভারতের কয়েকটি শহর নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। |
|
|
• অবিভক্ত ভারতে বেঙ্গালুরুতেই প্রথম বিদ্যুৎ চালু হয়। সেটা ১৯০৫ সাল। ১৯০২ সালে শিবসমুদ্রমে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার তিন বছর পর প্রথম বিজলি বাতি জ্বলেছিল শহরের পুরোনো সিটি মার্কেট বিল্ডিং-এ। এরও আগে, ১৮৫০ সাল নাগাদ এই শহরের অধিবাসীরা কফি পান করতে শেখেন। কারণ, সেই সময় রাজ্যের ব্রিটিশ কমিশনার মার্ক কাবন পশ্চিমঘাট পর্বতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কফি চাষের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। |
|
|
জানো কি |
• চেন্নাই আগে মাদ্রাজপট্টনম নামে পরিচিত ছিল। ১৬৪০ সালে ব্রিটিশরা এখানে ফোর্ট সেন্ট জর্জ নামে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। ধীরে ধীরে এই দুর্গকে কেন্দ্র করেই সেখানে গড়ে ওঠে উপনিবেশ। দেখতে গেলে, প্রায় ৩৭০ বছর ধরে ক্ষমতার বিশেষত, রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু থেকেছে এই দুর্গটি। ব্রিটিশরা আমাদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার কিছু আগে থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তামিলনাড়ু রাজ্যের বিধানসভা ও সরকারি সচিবালয় এখানেই অবস্থিত ছিল।
• পাঁচশো বছরেরও পুরোনো শহর হায়দরাবাদ খাবারের এক অনন্য ঘরানা তৈরি করে ফেলেছে, যার মধ্যে দক্ষিণ ভারতীয়, মোগলাই, আরবি এবং পারসিক রান্নাবান্নার মেলানো মেশানো স্বাদ পাওয়া যায়। খাবারকে এমন শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব অবশ্যই দিতে হবে এখানকার ভোজনরসিক নিজামদের, যাঁরা দীর্ঘকাল এখানে শাসন করেছেন। এমনও শোনা যায় যে নিজামের রাজপতাকাতেই নাকি ‘কুলচা’-র (এক ধরনের রুটি) মর্যাদাসূচক চিহ্ন থাকত। বছরের পর বছর ধরে হায়দরাবাদি খাবার ক্রমে ক্রমে এমন জনপ্রিয়তা লাভ করেছে যে ২০১০ সালে হায়দরাবাদি হালিমকে ‘জিয়োগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন’ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। |
কলকাতার বেথুন কলেজ |
• শিক্ষাজগতের অনেক কিছুই ‘প্রথম’ বার শুরু হয় ব্রিটিশ ভারতের এককালীন রাজধানী কলকাতায়। ১৮৭৯ সালে ভারতের প্রথম মেয়েদের কলেজ, বেথুন কলেজ স্থাপিত হয় এই শহরে। শিক্ষার কথা যখন উঠল তখন একটা গল্প বলা যাক। গল্পটি যাঁকে নিয়ে তাঁর নাম বেগম রোকেয়া। স্বামী মারা যাওয়ার সময়ে তাঁর জন্য কিছু সম্পত্তি রেখে যান। সেই দিয়ে তিনি মুসলমান মহিলাদের জন্য একটি স্কুল খুলেছিলেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁর ওপর এত নির্যাতন শুরু করেন যে বাধ্য হয়ে ভাগলপুর ছেড়ে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। কলকাতার ওয়ালিউল্লাহ লেন-এর একটি ছোট্ট বাড়িতে মাত্র এগারো জন ছাত্রী নিয়ে একটি স্কুল শুরু করেন। তাঁর মৃত্যুর পর এটি সরকার নিয়ে নেয়। বর্তমানে এই স্কুলটিকেই আমরা সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গর্ভমেন্ট গার্লস স্কুল নামে চিনি।
• কলকাতার পর দিল্লিই ভারতের দ্বিতীয় শহর যেখানে মেট্রো পরিষেবা চালু হয়েছে। দিল্লি মেট্রোর পরিকল্পনা শুরু হয় ১৯৮৪ সালে। কলকাতা মেট্রো তৈরি হতে এত সময় নিয়েছিল যে তার থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারত সরকার এবং দিল্লি প্রশাসন ১৯৯৫ সালে যৌথভাবে দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থার তত্ত্বাবধানে নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৯৮ থেকে। তবে কলকাতা মেট্রোর তুলনায় দিল্লির মেট্রো পরিষেবা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। বর্তমানে এর ছ’টি রুট রয়েছে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, বেগুনি এবং এয়ারপোর্ট এক্সপ্রেস রুট।
• ভারতের স্বাধীনতার পর যে গুটিকতক পরিকল্পিত শহর তৈরি হয়, তার অন্যতম চণ্ডীগড়। প্রাথমিক ভাবে অ্যালবার্ট মেয়ার পরিকল্পনা করলেও, শহরের উন্নয়ন প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিক ভাবে পরিকল্পনা ও সম্পাদন করেন লে কর্বুসিয়ের। শহরের এদিকে ওদিকে বিভিন্ন স্থাপত্যশিল্প আছে। এদের মধ্যে আমার অন্যতম প্রিয় স্থাপত্যটি হল ‘ওপেন হ্যান্ড মনুমেন্ট’। সেক্টর ১-এ অবস্থিত এই বিশালকার হাতটি ১৪ মিটার লম্বা। এটি আবার হাওয়া-মোরগের মতো ঘুরতেও পারে। হাতটির বৈশিষ্ট্য এই যে এটি একটি সামাজিক বার্তা বহন করে। ‘দেওয়া ও নেওয়া, দুইয়ের জন্যেই মুক্তহস্ত’। বলে রাখি, এটি শহরের আনুষ্ঠানিক প্রতীকও।
• যদিও আমদাবাদের সবচেয়ে নামকরা শিক্ষপ্রতিষ্ঠানটি হল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমার পছন্দ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডিজাইন। স্বাধীনতার পর ভারত সরকার বিখ্যাত ডিজাইনার যুগল চালর্স ও রে ইয়েমস-এর সাহায্যে গড়ে তোলেন এই প্রতিষ্ঠান।
• এক সময়ের শান্ত, নিরিবিলি শহর পুণে এখন একটি ব্যস্ত মহানগর। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখতে পাবে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য পশ্চিম ভারতের মানুষদের একত্র করতে ১৮৯৪ সালে বাল গঙ্গাধর তিলক ও তাঁর অনুগামীরা এই শহরে ‘গণেশ চতুর্থী’ উৎসব চালু করেন।
• আচ্ছা, বলতে পারো, কোন শহরের পুরোনো নাম ছিল কাকামুচি ও গালাজুঙ্কা? পারবে না তো? বলে দিই? উত্তরটা বম্বে, এখন যাকে আমরা মুম্বই নামে চিনি। মুম্বই বলতে মনে পড়ল, এক বার আমি সুযোগ পেয়েছিলাম এলিফ্যান্টা কেভস্ দেখার। আশা করি তোমরা নিশ্চয় জানো, এই গুহাগুলি এখন ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। দু’সারি গুহা, আর সেখানে রয়েছে পাথর খোদাই করে তৈরি নানা ধরনের হিন্দু এবং বৌদ্ধ ভাস্কর্য খোদাইগুলি এতই সুন্দর যে দেখে তাক লেগে যায়। কলা ঐতিহাসিকদের মতে, এই গুহাগুলি পঞ্চম খ্রিস্টাব্দের শেষ দিক থেকে অষ্টম খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকের মধ্যে নির্মিত হয়।
|
|
বলো তো |
১ ১৮৭৩ সালের ২৬ জুন সভাপতি কর্নেল জে এ বালার্ড-এর তত্ত্বাবধানে কোন বন্দর নির্মিত হয়?
২ অচিনলেক রিপোর্ট-এর ওপর ভিত্তি করে পুণেতে কোন প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়?
৩ ব্রিটেনে বিখ্যাত ‘মেলা’ রেস্তোরাঁ দিল্লির কোন গলিকে নকল করে তৈরি করা হয়েছে?
৪ ১৮৯৮ সালে জমশেদজি টাটার স্বামী বিবেকানন্দকে লেখা একটি চিঠির প্রক্ষিতে ভারতে কোন বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে?
৫ চণ্ডীগড় শহর ৫৬টি সেক্টরে বিভক্ত। কিন্তু আসলে সেখানে আছে ৫৫টি সেক্টর। কত নম্বরের সেক্টর নেই? |
|
উত্তর |
১) মুম্বই, ২) ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি, ৩) পারান্থেওয়ালি গলি, ৪) ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স, বেঙ্গালুরু, ৫) সেক্টর ১৩ |
|
|
|
|
|
|