দশমীতে দেবী দর্শনের সুযোগ পান লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দারা
ঢাক বাজছে বাংলাদেশের মাশলিয়া গ্রামে।
এ পার বাংলার বাগদার লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাসিন্দারা খুশি, পুজো শুরু হয়ে গিয়েছে। দেবী দর্শনের জন্য আরও তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে।
দশমীতে মাশলিয়ার প্রতিমা বিসর্জন হয় কপোতাক্ষ নদে। যে নদের উল্টো দিকে লক্ষ্মীপুর। মা দুর্গাকে বিসর্জন দিতে হবে বলে মাশলিয়ার গ্রামবাসীদের যখন মন খারাপ, তখন দশভূজা দর্শনে হাসি ফোটে লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দাদের মুখে। তবে, এই সৌভাগ্যও লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দাদের প্রতি বছর হয় না। যে বছর কপোতাক্ষ কচুরিপানায় ভরা থাকে, সে বছর মাশলিয়ার প্রতিমা অন্যত্র বিসর্জন দেওয়া হয়। এ বার অবশ্য এখনও কচুরিপানার দেখা মেলেনি ওই নদে। তাই গ্রামবাসীরা দেবী দর্শনের আশায় রয়েছেন।
গ্রাম না বলে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার লক্ষ্মীপুরকে দ্বীপ বলাই ভাল। সীমান্তঘেঁষা গ্রামটির তিন দিক ঘিরে রয়েছে কপোতাক্ষ। নদীর উল্টো পাড়ে, পূর্ব দিকে বাংলাদেশের সাহাজাদপুর, দক্ষিণ দিকে কাবিলপুর এবং উত্তর দিকে মাশলিয়া। বনগাঁ শহর থেকে লক্ষ্মীপুরের দূরত্ব অন্তত ৩৫ কিলোমিটার। প্রায় ৭০টি পরিবারের বাস। বেশির ভাগ গ্রামবাসী খেতমজুরি বা দিনমজুরি করে সংসার চালান। মাস দুয়েক হল গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে। একটি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। ব্যস্, এই টুকুই। স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই, দোকানপাট নেই, গভীর নলকূপও নেই। সর্বত্রই অনুন্নয়নের ছবি স্পষ্ট। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনতে গ্রামবাসীদের বনগাঁ বা বাগদা বাজারে যেতে হয়। আসা-যাওয়ার পথে অনুমতি নিতে হয় গ্রামের বাইরে থাকা ক্যাম্পের বিএসএফ জওয়ানদের। শুধু নীল আকাশে সাদা তুলোর মতো মেঘ এবং বিলে শাপলা ফুটতে দেখলে গ্রামবাসীরা বুঝতে পারেন, পুজোর সময় কাছে এল।
নুন আনতে যাঁদের পান্তা ফুরোয়, তাঁরা পুজোর আয়োজনের কথা ভাবতেই পারেন না। কাছাকাছি পুজো বলতে দু’কিলোমিটার দূরে বয়রা বাজারের পুজো। তবে, সেখানকার ঢাকের শব্দ লক্ষ্মীপুরে পৌঁছয় না। গ্রামবাসীরাও সেখানে বড় একটা যান না। তাঁরা একাত্ম হন মাশলিয়ার পুজোর সঙ্গেই। জনা কয়েক যুবক অবশ্য বনগাঁয় পুজো দেখতে যান। বাকিরা গ্রামেই থেকে যান। অপেক্ষা করেন দশমীর জন্য। গ্রামের কল্যাণী মজুমদারের কথায়, “বিসর্জনের সময়ে মাশলিয়ার মানুষরা আমাদের আমন্ত্রণ জানান। আমরা গিয়ে মাকে সিঁদুর পরাই। বরণ করি। প্রণাম করি। ওই একটা দিনই আমাদের আনন্দ।”
দশমীতে মাশলিয়ায় ঢাকের আওয়াজ যত তীব্র হয়, লক্ষ্মীপুরে কপোতাক্ষের ধারে তত ভিড় জমে। বিকাল নাগাদ মাশলিয়ার প্রতিমা নৌকায় তুলে কপোতাক্ষ নদে বেশ কিছুক্ষণ ঘোরানো হয়। ব্যস, ওই এক দিনেই লক্ষ্মীপুরে পুজোর আনন্দের শুরু এবং শেষ। এ বছর অতি বর্ষণে খেত জলে ডুবে যাওয়ায় নষ্ট হয়েছে চাষ। তাই গ্রামের বেশির ভাগ কচিকাঁচারই নতুন জামাকাপড় হয়নি। তা নিয়ে তাদের বিশেষ কষ্টও নেই। দারিদ্রে তারা অভ্যস্ত। সপ্তম শ্রেণির আশিস বিশ্বাস তাই অনায়াসেই বলে, “বাবার এ বার ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। কী ভাবে নতুন জামা চাইব?” তবে, দশমীতে গ্রামের সকলের সঙ্গে সে-ও মাশলিয়ার প্রতিমা দেখবে বলে জানিয়েছে।
কিন্তু যে বার ওই নদে বিসর্জন হয় না?“সে বছর আর প্রতিমা দেখা হয় না। ঢাকের আওয়াজ যে দিন আর শোনা যায় না, বুঝতে পারি, পুজো শেষ” বললেন গ্রামের বিমল বালা। গ্রাম থেকে যে দু’এক জন বনগাঁয় পুজো দেখতে যান, ফিরে এসে তাঁরা সেই গল্প করেন। তা শুনেই তৃপ্ত হন গ্রামবাসীরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.