পাকিস্তানকে চাপে রাখাই প্রধান কৌশল
হক্কানিকে ভেঙে আলোচনা চায় আমেরিকা
কাবুলে হক্কানি গোষ্ঠী ও আইএসআইয়ের যৌথ সন্ত্রাস নিয়ে আমেরিকা প্রকাশ্যে উত্তরোত্তর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সমালোচনা তীব্র করছে।
কিন্তু কেন?
নয়াদিল্লিতে সাউথ ব্লক বলছে, আসলে পাকিস্তানকে প্রবল চাপের মুখে ফেলে আমেরিকা হক্কানি গোষ্ঠীর নরমপন্থী নেতাদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করতে চাইছে। এই আলোচনা চাইছেন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইও। আর কারজাই চাইছেন বলে ভারতও এই প্রস্তাবের পক্ষে। কিন্তু এখনও পাকিস্তান এ প্রস্তাবের ঘোরতর বিরোধিতা করে চলেছে।
কিন্তু ওবামা-কারজাই হঠাৎ হক্কানি গোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার প্রক্রিয়ায় যেতে চাইছেন?
ওবামা যখন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন, তার পর থেকেই কারজাই বলতে শুরু করেন, পেন্টাগন না থাকলে তাঁর পক্ষে তালিবানের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। কিন্তু কারজাই যতই বলুন, ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পরে আমেরিকার পক্ষে আর আফগান সীমান্তে সেনা মজুত করে রাখা কঠিন। আমেরিকায় ভোটও এগিয়ে আসছে। এবং সে দেশের জনমত এখন সেনা প্রত্যাহারের পক্ষে। শুধু তাই নয়, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলিও আর্থিক মন্দার দিনে সেনা প্রত্যাহারের কথাই বলছে। কারজাইয়ের আশঙ্কা, এই সেনা প্রত্যাহারের সুযোগ নিয়ে পাকিস্তান তথা আইএসআই আফগানিস্তানের তালিবানিকরণে আবার সক্রিয় হয়ে উঠবে।
আফগানিস্তানে এখন মূলত তিনটি গোষ্ঠী সক্রিয়। তাদের মধ্যে তেহরিক-ই-তালিবান পাক বিরোধী। এই গোষ্ঠীর জঙ্গিরা কিন্তু সে ভাবে মার্কিন বিরোধিতা করে না। এ ছাড়া আছেন উপজাতি নেতা মোল্লা ওমর। তিনি এবং তাঁর গোষ্ঠী পাকিস্তানপন্থী ও প্রবল ভাবে মার্কিন বিরোধী। কিন্তু এখন তাদের চেয়েও বেশি সক্রিয় হক্কানি গোষ্ঠী। এই তিন গোষ্ঠীর বাইরে রয়েছেন গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার এবং তাঁর দল। আফগানিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হেকমতিয়ার এক সময় সরকার বিরোধী ছিলেন।
কাবুলে মার্কিন এবং ভারতীয় দূতাবাসে হামলাকারী
এখনও তাঁরা লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু এখন তাঁর সঙ্গে আফগান প্রশাসনের সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে বলেই খবর। এদের বাইরে পাকিস্তানে সব থেকে সক্রিয় জঙ্গি গোষ্ঠী হল লস্কর-ই-তইবা। তারা পাকপন্থী এবং একসঙ্গে ভারত ও আমেরিকা বিরোধী। আফগান জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে তাদের যোগাযোগও যথেষ্ট।
হামিদ কারজাই এখন হেকমতিয়ারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে হক্কানি গোষ্ঠীকে ভাঙতে চান। এ বার তিনি দিল্লি এলে ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের প্রথম কৌশলগত সম্পর্ক (‘স্ট্র্যাটেজিক অ্যালায়েন্স’) তৈরি হবে। এই চুক্তিতে হক্কানি গোষ্ঠীকে কী ভাবে মোকাবিলা করা হবে, তার কৌশলও ঠিক করা হবে। হক্কানি গোষ্ঠীই এখন আফগানিস্তানে সব থেকে সক্রিয় জঙ্গি গোষ্ঠী। তারা এক দিকে যেমন কাবুলে মার্কিন দূতাবাসকে নিশানা করছে, তেমনই বাদ দিচ্ছে না ভারতীয় দূতাবাসকেও। হক্কানি গোষ্ঠীর প্রবীণ নেতা জালাউদ্দিন কট্টরপন্থী। তাঁর ছেলে সিরাজুদ্দিনও এখন গোষ্ঠীর বড় নেতা। কারজাই হেকমতিয়ারের মাধ্যমে সিরাজুদ্দিনের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চালাচ্ছেন। কারণ, তাঁদের কাছে খবর, সিরাজুদ্দিন বাবার মতো ততটা কট্টর নন। এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে আমেরিকা এবং ভারত। কিন্তু পাকিস্তান কারজাইয়ের এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে।
হক্কানি গোষ্ঠীর মূল নিশানা এখন আফগানিস্তানে অবস্থিত আমেরিকা এবং ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলি। বুশের আমলেই হক্কানিরা প্রথম ভারতীয় দূতাবাসে হামলা করে। তত দিনে সিরাজুদ্দিন উঠে এসেছেন নেতৃত্বে। তখন মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পর্ষদের অধিকর্তা মিচ ম্যাকানেল কিন্তু বুশকে তাঁর রিপোর্টে প্রথম জানিয়েছিলেন, হক্কানিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আইএসআই এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। কিন্তু তখন তার ছ’মাস মধ্যেই ছিল বুশের নির্বাচন। ফলে এই নিয়ে আমেরিকা সে সময় আর কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এ বার ভারতীয় দূতাবাসে বিস্ফোরণ ঘটার পর ওবামার গোয়েন্দারা সেই একই কথা বলছেন। শুধু তাই নয়, আমেরিকার মুখেও এখন মুহুর্মুহু পাকিস্তানের সমালোচনা। সেই দলে আছেন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন থেকে সেনাপ্রধান মাইক মুলেন, সকলেই। এ দিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও বলেছেন, পাকিস্তানের সন্ত্রাস দমন ব্যবস্থা মোটেও কাজের নয়।
ক্রমাগত এই সমালোচনা এবং তার সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে সব রকম সাহায্য বন্ধের মার্কিন হুমকির পরে মনে হতেই পারে, দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ভারত কিন্তু মনে করছে, আমেরিকা মুখে যতই সমালোচনা করুক, আসলে পাকিস্তানের সঙ্গে তারা সামরিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইছে না। তারা ‘গাজর ও লাঠি’-এর তত্ত্ব (ক্যারট অ্যান্ড স্টিক) মেনে এত দিন পাকিস্তানকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। এ বার লাঠি হাতে কঠোর হয়ে তাদের বাধ্য করতে চাইছে। প্রকাশ্যে কঠোর হলেও আমেরিকা তো পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক ছিন্ন করেইনি। অস্ত্র ও অর্থ সাহায্যও বন্ধ করেনি। শুধু বন্ধ করার হুমকি দিয়ে বলেছে, কথা না শুনলে পাকিস্তানে ঢুকে মার্কিন সেনা তালিবান খতম অভিযান চালাবে। এর পাশাপাশি প্রকাশ্যে জঙ্গিদের মদতদাতা হিসেবে আইএসআইয়ের ভূমিকা সাক্ষ্যপ্রমাণ-সহ তুলে ধরেছে। এ সবের মধ্যে দিয়ে আসলে পাকিস্তানকে প্রকাশ্যে অপমান ও অস্বস্তিতে ফেলাটাই তাদের লক্ষ্য।
এই পরিস্থিতিতে দিল্লির সঙ্গে ওয়াশিংটনের গোয়েন্দা সহযোগিতাও চলেছে। বস্তুত, ওবামা প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়ে ভারতই বলেছে, হক্কানি গোষ্ঠীর নরম ও কট্টরপন্থীদের মতপার্থক্য যে ওদের গোপন রণকৌশল নয়, তাই বা কে বলতে পারে? ভারতে যে ভাবে পরেশ বড়ুয়া-অরবিন্দ রাজখোয়া বা মাওবাদীরা নিজেদের অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখিয়ে আসলে দু’মুখো রণকৌশল নেয়, এ ক্ষেত্রে হক্কানিরা সেটা করছে কি না তাও বোঝা দরকার। অবশ্য এ কথা বলার পরেও ভারত কিন্তু কারজাইকে সমর্থন করছে। তবে ভারতের কাছে এটা স্পষ্ট যে, আমেরিকা মুখে যা-ই বলুক না কেন, আসলে তারা পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে না। তারা আসলে হক্কানি গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের সমর্থন চাইছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.