ভাড়াবাড়ির দোতলার ঠাকুরঘরে গলাকাটা তরুণী বধূর দেহ। বৃদ্ধা বাড়িওয়ালির গলাকাটা দেহ পড়ে দোতলারই রান্নাঘরে। শনিবার রাতে বর্ধমানে কেতুগ্রামের কান্দরার ওই জোড়া খুনে জড়িত অভিযোগে বধূটির স্বামীকে রবিবার বিকেলে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, নিহতেরা হলেন গৌরী মাঝি (১৯) ও রেখারানি রায় (৬৭)। কেতুগ্রামের আইসি রঞ্জন সিংহের বক্তব্য, “আমাদের অনুমান, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই খুন হয়েছেন ওই বধূ। বাধা দেওয়ায় রেখারানিদেবীকে খুন করা হয়েছে।” পুলিশের দাবি, গৌরীর স্বামী, ধৃত সুয়াজ মাঝি জেরায় তাদের কাছে ওই খুনের কথা স্বীকার করেছেন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, রূপক বৈরাগ্য নামে এক যুবকের সঙ্গে গৌরী গত মাস দেড়েক কান্দরা ডাকবাংলো মোড়ের কাছে রেখারানিদেবীর বাড়িতে ভাড়া ছিলেন। রূপক পুলিশকে জানিয়েছেন, কাটোয়ার পঞ্চবটিপাড়ায় সুয়াজের বাড়ির পাশেই তাঁর বাড়ি। বছরখানেক ধরে তাঁর সঙ্গে গৌরীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সুয়াজ ও গৌরীর চার বছরের একটি মেয়ে আছে। রূপকের দাবি, সুয়াজ স্ত্রী-র উপরে অত্যাচার করতেন। সে জন্যই গৌরী বাড়ি ছাড়েন। কান্দরায় ভাড়া থাকছিলেন। রূপক ডাকবাংলো মোড়ের একটি কাপড়ের দোকানে কাজ নেন। তাঁর অভিযোগ, “পুজোর আগে গৌরীকে খুন করবে বলে সুয়াজ ফোনে হুমকি দিচ্ছিল।” |
রূপক পুলিশকে জানিয়েছেন, শনিবার রাত পৌনে ১০টা নাগাদ দোকান থেকে তিনি বাড়ি ফেরেন। ওই যুবকের দাবি, “সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ এক বার বাড়ি গিয়েছিলাম। তখনও সব ঠিক ছিল। রাতে দোকান থেকে ফিরে দেখি, বাড়ির দোতলায় ঠাকুরঘরে গৌরী ও রান্নাঘরে রেখারানিদেবী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে।” রূপকের চিৎকারে জড়ো হন পড়শিরা। পুলিশ জানায়, গৌরীর গলার নলি কাটা ছিল। রেখারানিদেবীকে প্রথমে মাথায় আঘাত করা হয়, তার পরে গলার নলি কাটা হয়েছে।
একই বাড়িতে দু’জন খুন হওয়া সত্ত্বেও আশপাশের কেউ কিছু বুঝতে পারল না কেন? ডাকবাংলো মোড়ের এক ব্যবসায়ী বলেন, “শনিবার সন্ধ্যায় এলাকা জমজমাট ছিল। রাস্তা দিয়ে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। দোকানগুলিতেও বেশ ভিড় ছিল। সম্ভবত সে জন্যই আমরা কেউ কিছু বুঝতে পারিনি।” আততায়ী কী ভাবে দোতলায় উঠল তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। রেখারানিদেবীর ছোট মেয়ে, হাওড়ার রামরাজাতলার বাসিন্দা রানু ভট্টাচার্য বলেন, “দোতলায় ওঠার মুখে সিঁড়ির দরজা সব সময় বন্ধ থাকত। একতলায় ভাড়াটেরা থাকত। দোতলায় মা একা থাকতেন। চেনা লোক ছাড়া মা সিঁড়ির দরজা খুলতেন না।” পুলিশ জানায়, বাড়িটি ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে। গৌরীর মা, মুর্শিদাবাদের সালারের বাসিন্দা তুলসি মাঝির বক্তব্য, “শুক্রবারই সুয়াজ আমাদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়েছিল, পুজোর আগেই গৌরীকে খুন করবে। তাই শনিবার সকালে মেয়েকে সাবধান করেছিলাম। কিন্তু রাতেই এমন হবে ভাবিনি।” |