পুজোর কবিতা
রং দাও পার্বতীকে
ছবি খুব কাগজ সাদা
রক্তের রং কি ফিকে?
পুড়ে কাঠ হওয়ার আগে
রং দাও পার্বতীকে?

সে তো রং মেখেই ছিল
যৌবন যে রং মাখে।
কিশলয় সবুজ পাতায়
লালে লাল ফুলের ঝাঁকে।

অধিবাস হওয়ার আগে
বেদখল যজ্ঞভূমির
বোবাচোখ শিখল ঠিকই
জলে বাঘ ডাঙায় কুমির।

জল নেই প্রথম থেকে
ক্ষমতার অন্ধ চোখে
হুকুমত দাখিল ছিল
গিলে খাও অন্ত্যজকে

গেলা শেষ? খেলার শেষে
ভাঙা হোক খেলার গুটি।
নিধিরাম কানুনগুলি
পেয়ে যাক আইনি ছুটি।

বেশ বেশ তাই হয়েছে
এই বার পুড়ুক মেয়ে
চ্যানেলের টি আর পি সব
উড়ে যাক আকাশ বেয়ে

তার পর? প্রশ্ন করো
কাহিনির শেষের দিকে
সকলেই বলছে কেন
রং দাও পার্বতীকে?


সহস্র মুখ এক মুহূর্তে!
মহামায়া, তোর দুনিয়াদারির, কিছু বোঝা যায় বাকিটা যায় না।
নিজের বিসর্জনের জন্য কেন বেছে নিস অবাক আয়না?
তোর উন্মুখ প্রতিবিম্বটি জলদর্পণে ভাসলে মায়ায়,
সব প্রতিজ্ঞা ভেসে চলে যাবে, বিসর্জনের শোক মহিমায়।
আসলে অমল ছেলেবেলা থেকে প্রাপ্তবয়স এখন অবধি
আরশিতে তোর ছায়া খুঁজে খুঁজে এত দিনে হল এ উপলব্ধি,
তুই না চাইলে তোর সেই মুখ কিছুতেই দেখা যাবে না, যায় না।
একটা আয়না ভেঙে ফেললেই যদিও মিলবে হাজার আয়না!
আর যদি চাস? সহস্র মুখ ভেসে উঠবেই এক মুহূর্তে!
পৃথিবী সহসা স্থির হয়ে যাবে নিজের কক্ষে ঘুরতে ঘুরতে।
প্রণাম রেখেছি, চুম্বনও রাখি হাজার ছবিতে অল্পে অল্পে
দশমীর চাঁদ হেসে উঠেছিল, অপ্রাকৃত এই প্রেমের গল্পে।

অঞ্জলি, ও জল! অঞ্জলি
ও জল তুমি সর্বব্যাপী, তোমাকে ছাড়া প্রাণ
কিছুতে খুঁজে পেত না এই গ্রহের সন্ধান।

তুমি প্রাণের পবিত্রতা ঢেলেছ দেহে মনে
আচমনের শুদ্ধতায়, স্মৃতিতে তর্পণে।

এই গ্রহতে অঢেল তুমি। চার ভাগের তিন
উড়িয়ে দিই, ফুরিয়ে দিই তোমাকে প্রতি দিন।

আর্সেনিক যখন এসে অমৃতকে ছোঁয়।
মেরুবরফ অবহেলায় মেশে সমুদ্রয়।

মাটির নীচে লুকিয়ে থাকা ফল্গুনদীটিকে


লোভের টানে উপড়ে ঢালি ক্ষয়ের চারিদিকে।

স্বচ্ছতোয়া নদীর বুকে অবাধ ঢালি বিষ।
সন্তানেরা নীল হয়ে যায়, আহা, অহর্নিশ!

কোথায় যাস লখিন্দর, কোথায় ভেসে যাস?
জবাবহীন উধাও ভেসে গিয়েছে মান্দাস।

ও জল, ওকে ফিরিয়ে দাও। তোমাকে আজ বলি,
চাইলে তুমি সভ্যতাকে দেব জলাঞ্জলি।

তুমি প্রলয়পয়োধি জল, তুমিই সে বোধন।
চিনিয়ে দাও অশ্রুভেজা মহা বিসর্জন।



তোমারই মাটির

আমার উঠোনে চির চেনা অভ্যাসে
জড়ো করা কাঠ খড়ের কাঠামো চিনে
পলিমাটি থেকে ভেজা পায়ে উঠে আসে
হারানো মেয়েটি, রথ যাত্রার দিনে।

এক মাটি শেষ। এ বার দ্বিতীয় মাটি
তাতে মিশে যাবে তন্তুর বৈভব।
আঙুলে মুদ্রা। চোখ মুখে পরিপাটি
সেজে উঠে মেয়ে বলে, ‘আজ উৎসব’!

উৎসব দিনে মৃণ্ময়ী সেই দেহে
প্রতিষ্ঠা করা হবে অনন্ত প্রাণ।
মাটির মেয়েকে পরম আদরে স্নেহে
মা বলে ডাকব মৃত্তিকা সন্তান।

উৎসব শেষে মেয়ে ফিরে যাবে ফের
নদীটির কাছে, যেখানে যাওয়ার কথা।
প্রায় বিবর্ণ বালুচরে আমাদের
রয়ে যাবে পলিমাটির উর্বরতা।

অপেক্ষা শুধু অপেক্ষা তার পরে।
আবার কখন কাঠামো চিনবে মাটি!
আবার ফিরবে দুঃখের ভাঙা ঘরে
মৃত্তিকা মেয়ে। মেয়ে নয় সে তো মা-টি।
 
পদ্মকলি, যেমন চেয়েছিলে
দেবীর পুজো, অকাল বোধন, যুগটা ছিল ত্রেতা,
চোখ উপড়ে অঞ্জলি দেন, বলতে পারো কে, তা?
পদ্মলোচন শ্রীরামচন্দ্র। এ তো সহজ জি. কে.
মোদ্দা কথা তখন থেকেই মানুষ গেছে শিখে,
পদ্ম পাতায় কাঁপছে জীবন, শুকনো সরোবরও।
পদ্মটি চাই, পদ্মটি নাই। পদ্ম জোগাড় করো।

রেল লাইনের দুই পাশে জল, নামহারা সেই ঝিলে
হাজার হাজার পদ্মকলি, যেমন চেয়েছিলে।
জীবন শেখায় কেউটে ছোবল, খিদেয় মোড়া ঘাম।
ছদ্মবেশে পদ্ম তোলেন, কলিযুগের রাম।
ঘুমিয়ে পড়ো কমলকলি, সাব জিরো হিমঘরে।
সামনে পুজোয় ফুটবে তুমি, মধ্যে অনেক ফড়ে!

একটা পাগল আপন মনে অঞ্জলি দেয় পদ্যে,
‘হৃদয়পদ্ম অর্ঘ্য দিলাম, তোমার করপদ্মে!’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.