|
|
|
| |
| চিঠি গুলাম নবিকে |
| এইমস ধাঁচে হাসপাতাল কল্যাণীতে চান মমতা |
| অনিন্দ্য জানা • কলকাতা |
রাজ্যে এইমসের ধাঁচে যে হাসপাতাল হওয়ার কথা, সেটি কল্যাণীতে করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদকে চিঠি পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসপাতালটি প্রাথমিক ভাবে রায়গঞ্জে হবে বলে ঠিক ছিল।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সরকারের জমি-নীতির কথা উল্লেখ করে জানিয়েছেন, রায়গঞ্জে হাসপাতালটি করতে গেলে বেশ কিছু পরিমাণ বহু ফসলি জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু তাঁর সরকার জমি, বিশেষত কৃষিজমি, অধিগ্রহণের পক্ষে নয়। তার চেয়ে কল্যাণীতে বর্তমান পরিকাঠামো কাজে লাগিয়েই অত্যাধুনিক হাসপাতাল গড়ে তোলা সম্ভব।
  উত্তরবঙ্গের মানুষের চিকিৎসার জন্য ভাল হাসপাতালের চাহিদার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সম্পূর্ণ অবহিত। সেই জন্য গুলাম নবিকে লেখা চিঠিতে একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব: পর্যায়ক্রমে রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ি, মালদহ, বালুরঘাট এবং মুর্শিদাবাদেও একই রকম উন্নত মানের হাসপাতাল হোক। তবে যেহেতু পরিকাঠামোর দিক থেকে কল্যাণী অনেকটাই এগিয়ে আছে এবং সেখানে জমি অধিগ্রহণের প্রশ্ন নেই, তাই মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন এইমসের ধাঁচে প্রথম হাসপাতাল প্রকল্পটি সেখানে হোক।
এইমস ধাঁচের হাসপাতাল রায়গঞ্জে করার কথা বলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে এর আগে চিঠি দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেই চিঠিরই জবাবে কল্যাণীতে হাসপাতাল করার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রায়গঞ্জে কেন এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল হচ্ছে না, সে ব্যাপারে বরাবরই সরব ছিলেন স্থানীয় কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সি। হাসপাতালের কাজ শুরু না-করলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনেরও ডাক দিয়েছেন দীপা। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য আগেই বলেছিলেন, জমি সমস্যার জন্য হাসপাতালটি কল্যাণীতে হওয়া উচিত। এ বার গুলাম নবির চিঠির জবাবে লিখিত ভাবে তাঁর সেই অবস্থানের কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিলেন, এই ব্যাপারে কোনও ‘রাজনৈতিক চাপে’র কাছে তিনি নতি স্বীকার করতে চান না। সেই ‘চাপ’ শরিকের একাংশের দিক থেকে এলেও নয়। দীপার সঙ্গে মমতার ‘সম্পর্ক’ জোট শিবিরে এমনিতেই ‘সুবিদিত’! মুখ্যমন্ত্রীর এই চিঠির ফলে মমতা-দীপা সম্পর্কেও নতুন ‘মাত্রা’ সংযোজিত হবে বলে জোট শিবির সূত্রের ব্যাখ্যা।মুখ্যমন্ত্রী মমতা এই চিঠির মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিলেন যে, দীপার দাবিকে তিনি ‘গুরুত্ব’ দিচ্ছেন না। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছেও ‘বার্তা’ পাঠালেন যে, রাজ্যের ওই অংশে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটানোর প্রয়োজনীয়তার কথা তাঁর মাথায় রয়েছে। উত্তরবঙ্গে এ বার বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের ফল ভাল হয়েছে। সেই নিরিখেই উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি থেকে তাঁর মন্ত্রিসভায় একাধিক প্রতিনিধি বেছেছেন মমতা। শাসক শিবিরের মতে, যে উত্তরের মানুষ ভোটবাক্সে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের চাহিদাকে ‘অগ্রাহ্য’ করা মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে সম্ভবও ছিল না। তাই পর্যায়ক্রমে উত্তরবঙ্গে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল করার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর চিঠির যে জবাব মুখ্যমন্ত্রী পাঠিয়েছেন, সেখানে বলা হয়েছে: উত্তর দিনাজপুরের জেলা-সদর রায়গঞ্জে যে এলাকা হাসপাতালের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে, সেখানে বেশ কিছু বহু ফসলি জমি রয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার তার জমি-নীতির সঙ্গে ‘আপস’ করতে রাজি নয়। তার চেয়ে নদিয়ার কল্যাণীতে ওই হাসপাতাল গড়া সুবিধাজনক। সেখানে প্রাথমিক পরিকাঠামো কিছুটা রয়েছে। নতুন করে জমি অধিগ্রহণের দরকার নেই। উত্তরবঙ্গের একাধিক শহরে পরবর্তী পর্যায়ে উন্নত মানের হাসপাতাল গড়ার প্রস্তাবও এই সূত্রেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।
জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের আওতায় রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি সেই সময় রায়গঞ্জেরই সাংসদ ছিলেন। স্বভাবতই প্রিয়-ঘরণী এবং রায়গঞ্জের বর্তমান সাংসদ দীপা বিষয়টির সঙ্গে ‘ভাবাবেগ’ জড়িয়ে দিতে চাইছেন। স্থানীয় মানুষ এবং উত্তরবঙ্গের বাকি অংশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশিই প্রিয়বাবুর ‘স্বপ্নপূরণে’র কথা বলছে দীপা-শিবির। রায়গঞ্জে হাসপাতালের কাজ না-হলে দীপা যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন, তা নিয়ে উত্তরবঙ্গের কংগ্রেস মহলে প্রাথমিক ভাবে ঈষৎ মতবিরোধ ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রদেশ কংগ্রেস দীপারই পাশে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর চিঠির জবাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা অবশ্য বুঝিয়ে দিলেন, কংগ্রেস সাংসদের আন্দোলনের ‘হুঁশিয়ারি’র জন্য তাঁর জমি-নীতির সঙ্গে তিনি আপস করতে রাজি নন। কৃষিজমি অধিগ্রহণ-বিরোধী আন্দোলনের ডানায় ভর করেই মমতা ক্ষমতায় এসেছেন এবং এখন জমি-প্রশ্নে তাঁর ঘোষিত অবস্থানের বাইরে যেতে যে তিনি রাজি নন তা-ই স্পষ্ট এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল নিয়ে তাঁর চিঠিতে।
মমতার এই সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কী হয়, এর পরে তা-ই দেখার! |
|
|
 |
|
|
