কৃষ্ণনাথ কলেজের স্নাতকোত্তর সংস্কৃত বিভাগ মদনমোহন তর্কালঙ্কারের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত হওয়ায় আনন্দিত হলাম। মুর্শিদাবাদ জেলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের বিদ্যাসাগর ও মদনমোহন তর্কালঙ্কারের গভীর যোগ আছে। মদনমোহন তর্কালঙ্কার সংস্কৃত কলেজের সাহিত্যশ্রেণীর অধ্যাপক পদ থেকে ১৮৫০-এর নভেম্বরে জজ পণ্ডিত হয়ে মুর্শিদাবাদ চলে আসেন। স্ত্রী-শিক্ষা প্রসারে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের ভূমিকা ইতিহাস খ্যাত। বেথুন সাহেবের বালিকা বিদ্যালয়ে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের দুই কন্যা ভুবনমালা ও কুন্দমালা প্রথম ছাত্রীদ্বয়। স্ত্রী-শিক্ষার স্বপক্ষে তিনি ‘সর্ব্বশুভকরী’ পত্রিকায় দীর্ঘ প্রবন্ধ রচনা করেন। মুর্শিদাবাদ থেকে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সঙ্গে আরও বহু জনের স্বাক্ষরিত বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে পত্র সরকারি দফতরে পাঠানো হয় ১৮৫৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। ১৮৫৫ সালের ডিসেম্বরে মুর্শিদাবাদের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হন তিনি। ১৮৫৬-তে কান্দির ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছিলেন। বিদ্যাসাগরের পরম বন্ধু ছিলেন তিনি। যদিও পরে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য হয়েছিল। বন্ধু বিচ্ছেদের কারণে ম্লান হয়ে চিঠি লিখেছিলেন শ্যামাচরণ দে-কে। ১৮৫৮ সালে ৯ মার্চ কান্দিতে কলেরা রোগে ভুগে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যু কালে স্ত্রী-কন্যাকে বিদ্যাসাগরের সহায়তা নিতে বলেছিলেন তিনি। মদনমোহন পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন বিদ্যাসাগর। তিনি স্ত্রীকে বুঝিয়ে দেন সংস্কৃত প্রেসের স্বত্ব, মদনমোহনের কন্যা ও ভগিনীর জন্য উইলে কিছু অর্থের অংশীদার করে যান। দু-জনের অমিলন বন্ধুত্ব এ ভাবে চিরন্তন হয়ে থাকে। মদনমোহনের লেখা প্রাতঃস্মরণীয় শিশু শিক্ষার সেই উল্লেখযোগ্য পঙক্তি‘পাখী সব করে রব, রাতি পোহাইল’ প্রতিটি বাঙালির মনে রাখা দরকার। অবশ্যই তাঁর সম্বন্ধে আরও আলোচনা হওয়া উচিত।
সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বহরমপুর
|
উত্তর রাঢ়ের প্রাচীন ও বর্ধিষ্ণু জনপদ পাঁচথুপির দুর্গাপুজো ৫০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন। যদিও বাংলাদেশে এই পুজোর সূচনা হয় দ্বাদশ শতাব্দীতে। দুর্গোৎসব কোনও বন্য-অনুষ্ঠান নয়, তা সুন্দরের আরাধনা ও কল্যাণের আহ্বান। কন্যারূপী ‘উমা’ ‘আগমনী’ বা দুর্গা যেন পতিগৃহ থেকে তিন দিনের জন্য পিতৃগৃহে আসেন। সপ্তমী অষ্টমী ও নবমী পিতৃগৃহে কাটিয়ে দশমীর দিন উমা পতিগৃহে ফিরে যান। বাঙালি গৃহজীবনের এই কাহিনিটিকেই আমাদের জাতীয় উৎসব দুর্গাপুজোর রূপদান করা হয়। এর মধ্যে অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কার বিজড়িত বলি দান প্রথার কোনও জায়গা নেই। অথচ পাঁচথুপির পারিবারিক দুর্গাপুজোগুলিতে মেষ, মোষ ও ছাগ বলি দেওয়ার রেওয়াজ আজও অব্যাহত। শ্রীচৈতন্যদেব বাংলায় একটা নতুন যুগ সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর ভাবধারায় বাঙালি সমাজ এক বিশেষ আদর্শ স্থাপন করেছিল। কিন্তু শ্রীচৈতন্যের স্পর্শ ও পদধূলি ধন্য পাঁচথুপিতে আজও সংস্কারের জীর্ণ বিধিবদ্ধতার আগল ঘুচল না। শিক্ষা-সংস্কৃতি-নাট্যচর্চায় অগ্রগণ্য পাঁচথুপিবাসী এখনও মধ্যযুগীয় ধ্যানধারণায় আবদ্ধ থেকে নির্মম পশুবলিতে মেতে ওঠেন। নবপ্রজন্মের ভাবা প্রয়োজনপ্রাক-বৈজ্ঞানিক যুগের নিষ্ঠুর বলিদান প্রথাকে আজও কেন আমরা বাঁচিয়ে রাখবো?
সুভাষ ঘোষ হাজরা, পাঁচথুপি
|
আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবার স্পর্শ থেকে অনেক দূরে রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা। এই জেলায় নেই ক্যান্সার, কিডনি, হার্ট বা মস্তিষ্কের কোনও জটিল রোগের চিকিৎসার সুব্যবস্থা। ক্যান্সারের অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, রেডিও থেরাপি, কিডনির ডায়ালিসিস, জটিল হৃদরোগ বা মস্তিষ্কের আঘাত জনিত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য জেলার মানুষকে ছুটতে হয় কলকাতায়। সেখানে সরকারি হাসপাতালে শয্যা পাওয়া যেমন দুষ্কর, তেমনি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেলে সর্বস্ব খোয়াতে হয় রোগীর পরিবারকে। এরকম দুঃসহ পরিস্থিতিতে কিছুটা আশার আলো নিয়ে এসেছিল প্রস্তাবিত বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ। কারণ এই কলেজ স্থাপন হলে অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা সম্ভব হত বহরমপুরেই। উপকৃত হতেন জেলাবাসী। কিন্তু আচমকা জানা গেল ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল-এর প্রতিনিধিরা বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজের নির্মিয়মাণ ভবনের কাজ সরকারি নির্দেশ অমান্য করার কারণে অনুমোদন বাতিল করেছেন। কিন্তু এই অনুমোদন কি স্থায়ী ভাবে বাতিল করা হয়েছে নাকি অদূর ভবিষ্যতে আবার অনুমোদন মিলবে, তা নিয়ে জেলার মানুষের সংশয় রয়েছে। গোটা বিষয়টি সম্বন্ধে তাঁরা অন্ধকারে! আমার সবিনয় অনুরোধ, বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ অনুমোদনে জেলার ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীগণ, সাংসদ, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সকলে মিলে প্রশাসনিক পর্যায়ে উদ্যোগী হন।
কল্যাণ বাগচি, বহরমপুর
|
সপ্তাহে এক দিন বা দু-দিন নদিয়া-মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে কোথায় কোন সিনেমা, নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে এবং কোথাও কোনও খেলা অনুষ্ঠিত হলে নিয়মিত তার খবর পরিবেশন করা প্রয়োজন। এই ধরণের সংবাদ প্রকাশিত হলে সংস্কৃতপ্রেমী মানুষ জানতে পারেন জেলায় কখন কোন লিটল ম্যাগাজিন আত্মপ্রকাশ করছে। কোন নাটক বা সিনেমা রবীন্দ্রসদন ও ঋত্বিক সদনে হচ্ছে। সাংবাদ মাধ্যম ছাড়া কখন কোথায় কী হচ্ছে জেলাবাসীর পক্ষে জানা সম্ভব নয়। ভাল সিনেমা, নাটক বা খেলার খবর পান না বলেই দেখতে যেতে পারেন না অনেকেই। ফলে বেশির ভাগ সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাগৃহগুলি ফাঁকা থাকে। দর্শক, শ্রোতার সংখ্যা কমে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির শিকার হন ওই প্রেক্ষাগৃহ কতৃর্পক্ষ। সেই সঙ্গে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সাংস্কৃতিক সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সাংস্কৃতিক কর্মীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পোস্টার ও ফ্লেক্স লালদিঘি বা রবীন্দ্রসদন চত্বরে না টাঙিয়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের জনবহুল এলাকা যেমন স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, বিডিও অফিস বা বাজারে টাঙানো উচিৎ। উৎসব মরশুম শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সময় বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।
উত্তমকুমার জৈন, লালগোলা
|
জঙ্গিপুরবাসী আজও উন্নত রেল পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। দিনের বেলায় জঙ্গিপুর রোড স্টেশন হয়ে কলকাতা, নবদ্বীপ বা ব্যান্ডেলগামী ট্রেনের সংখ্যা খুবই কম। কলকাতা যাওয়ার এক মাত্র ট্রেন মালদা-হাওড়া ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। কিন্তু সেই ট্রেনে কামরা সংখ্যা মাত্র ১১। ফলে সংরক্ষিত বা অসংরক্ষিত কামরায় প্রচণ্ড ভিড় হয়। ফলে বহু যাত্রী জঙ্গিপুর রোড স্টেশন থেকে মালদা-নবদ্বীপধাম এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে আজিমগঞ্জ জংশন বা কাটোয়া জংশন থেকে ট্রেন ধরে হাওড়া বা শিয়ালদহ যান। কিন্তু সম্প্রতি ওই ট্রেনের কামরার সংখ্যাও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১০টি কামরার বদলে বর্তমানে মাত্র ৫টি কামরা রাখা হয়েছে। জঙ্গিপুর মহকুমাবাসীর স্বার্থে অবিলম্বে ওই ট্রেনের কামরা সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।
কাশীনাথ ভকত, জঙ্গিপুর
|
নদিয়া জেলার কালীগঞ্জ ব্লকের দেবগ্রাম থেকে বহরমপুর পর্যন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের হাল শোচনীয় এবং ভয়ঙ্কর। সড়ক দুর্ঘঠনা নিত্য ঘটনা। নিত্যযাত্রীদের পক্ষে চলমান যানবাহনে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে সুস্থ শরীরে যাতায়াত করা প্রায় দুঃসাধ্য। অসতর্ক মুহূর্তে যে কোনও সময়ে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। শারদোৎসবের দিনগুলি কি আমাদের সড়ক-আতঙ্কে কাটবে?
তরুণকুমার সিংহ, দেবগ্রাম |