খাদান-দূষণে জর্জর আদিবাসী গ্রামে উন্নয়ন রুদ্ধই
রাজ্যে শাসনক্ষমতার পালাবদলের পরে ওঁরা আশা করেছিলেন, এ বার হয়তো উন্নয়নের কাজ ত্বরান্বিত হবে।
কিন্তু পাথর-খাদান ও ক্রাশারের দূষণে জেরবার মহম্মদবাজারের আদিবাসীদের সে আশা পূরণের কোনও লক্ষণ চার মাস বাদেও চোখে পড়ছে না। ফলে বীরভূমের ওই গ্রামাঞ্চলে ক্ষোভ বাড়ছে। আদিবাসী সংগঠন ‘বীরভূম জেলা আদিবাসী গাঁওতা’র নেতা রবিন সরেন বলেন, “প্রথমে চেষ্টা করেছিলাম মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমাদের দুর্দশার কথা জানাতে। পারিনি। দু’-তিন বার চিঠি দিয়েও সাড়া পাইনি।”
এর পরে, সেপ্টেম্বরের গোড়ায় গাঁওতা-র নেতৃত্বে কয়েক হাজার আদিবাসী জেলা প্রশাসনের সামনে বিক্ষোভ দেখান। তার পরেও প্রশাসন নড়ে বসেনি বলে অভিযোগ।
পাথর ভাঙার ক্রাশার থেকে উড়ে আসা বিষ-ধুলো ও খাদানের বিস্ফোরণে বাড়ি-ঘর ভেঙে পড়ার নিরবিচ্ছিন্ন আতঙ্ক থেকে বাঁচতে গত বছর মহম্মদবাজারের বিভিন্ন গ্রামের আদিবাসীরা যে প্রবল আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তা প্রশমিত করতে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ছুটে যেতে হয়েছিল। পরে গাঁওতার প্রতিনিধিরা মহাকরণে বুদ্ধবাবুর সঙ্গে দেখা করেন। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দূষণক্লিষ্ট গ্রামগুলোর জন্য একটা উন্নয়ন-প্রকল্প তৈরি হয়। রাস্তা নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ, পরিত্যক্ত খাদানের জমা জলে মাছচাষ এবং একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়তে বরাদ্দ হয় তিন কোটি টাকা।
কী হাল সেই প্রকল্পের?
রবিনবাবু জানাচ্ছেন, মৎস্য দফতরের উদ্যোগে মাছচাষ শুরু হলেও বাকিগুলোর কোনওটাই হয়নি। প্রশাসন কী বলছে?
মহম্মদবাজারের আদিবাসী অঞ্চলের উন্নয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) কৃষ্ণা মান্ডির দাবি, “কাজ একেবারে থমকে গিয়েছে বলা যাবে না।” অথচ সেই ‘কাজের’ বিবরণ দিতে গিয়ে তাঁকেও পরিত্যক্ত খাদানে মাছচাষে এসে থেমে যেতে হচ্ছে। কারণ, অন্যগুলো প্রশাসনের তালিকাতে ‘হবে বা হচ্ছে’র পর্যায়েই আটকে রয়েছে। কৃষ্ণাদেবী বলেন, “তালবাঁধ গ্রামে একটা কালভার্ট আর রাস্তা বানানোর কথা। বিডিও-কে বলেছি শিগগির কাজ শুরু করতে।”
বাম আমলে মৎস্য দফতর বারোটা বন্ধ খাদানে মাছের পোনা ছেড়েছিল। প্রতিটিতে মাছচাষের জন্য স্থানীয় আদিবাসীদের সমবায় গড়ে দিয়েছে মৎস্য দফতর। রবিনবাবুর দাবি, আরও কয়েকটা ‘অবৈধ’ খাদান দখল করে আদিবাসীরা নিজেরাই মাছচাষ করছেন। তাঁর কথায়, “জবরদস্তি বা প্রতারণা করে আদিবাসীদের জমি হাতিয়ে যে সব খাদান চলছিল, সেগুলোকেই আমরা অবৈধ বলছি। জেলা প্রশাসন বার বার বলা সত্ত্বেও মালিকেরা বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।” তবে পরিবেশ দূষণের দায়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যে সমস্ত খাদান বন্ধ রাখতে বলেছে, তার অনেকগুলোই ইতিমধ্যে চালু হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ ওই আদিবাসী নেতার।
মহম্মদবাজার এলাকায় ৭৫টা পাথর-খাদান, ক্রাশারের সংখ্যা ৪০০। রবিনবাবুর আক্ষেপ, “দূষণ-বিধি কেউ মানছে না। তাই দূষণও কমছে না।” পর্ষদের নির্দেশ, ক্রাশার চালানোর সময়ে জল ছেটাতে হবে, যাতে ধুলো না-ওড়ে। সে নিয়মের তোয়াক্কা বিশেষ কেউ করে না। পাথর-দূষণে জেরবার গ্রামগুলোয় পৌঁছয়নি অনেক কিছুই। গাঁওতার আর এক নেতা সুনীল সরেনের অভিযোগ, বহু আদিবাসী বিপিএল কার্ড পাননি। আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের জন্য হস্টেল হয়নি। আদিবাসী-এলাকায় সাঁওতালি ভাষায় পঠন-পাঠন শুরু হয়নি। হাসপাতালও হয়নি। উপার্জনের পথ খুলতে তালের রস বোতলজাত করার একটা কারখানা স্থাপনের দাবিও জেলাশাসকের কাছে জানিয়েছিল গাঁওতা। তার কী হল?
কৃষ্ণাদেবী বলেন, “ওই অঞ্চলে প্রচুর তালগাছ। একটা কারখানা চলতেই পারে। এ ব্যাপারে খাদি গ্রামোদ্যোগের সঙ্গে কথা বলেছি।” পাশাপাশি শালপাতার থালা-বাটি তৈরির জন্য আদিবাসী মহিলাদের কয়েকটা স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। যে প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলাশাসকের মন্তব্য, “ওই কাজে বারোটা মেশিন লাগবে। ছ’টা বিডিও-র কাছে এসে গিয়েছে। তবে এখনও গ্রামে পৌঁছয়নি।” সুনীলবাবুও বলছেন, “প্রতিশ্রুতি বিস্তর পেয়েছি। কিন্তু জানি না, সে সব কত দিনে আমাদের গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছবে!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.