শুক্রবার দুপুর দু’টো। মহম্মদ আলি পার্কের বন্ধ গেটের বাইরে বড়সড় জটলা। কাছে যেতেই বোঝা গেল, পুজোর দু’দিন আগেই রাস্তায় নেমে পড়েছে উৎসাহী মানুষের ঢল।
এ বার দ্বিতীয়া থেকেই উদ্বোধন শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর। তৃতীয়া ও চতুর্থীর সন্ধ্যায় খুলে গিয়েছে অধিকাংশ বড়-মেজ পুজোর মণ্ডপ। আর তার পর থেকেই ওই সব মণ্ডপে ভিড় জমিয়েছেন দর্শনার্থীরা। উত্তর কলকাতার একটি নামী পুজোর এক কর্মকর্তা জানালেন, এ বার তৃতীয়ার সন্ধ্যা থেকেই অনেকে মণ্ডপে ঢুঁ মেরেছেন। তা ছাড়া, পুজোর ভিড় বাড়ার আগে কাছেপিঠের মণ্ডপদর্শন সেরে নিতে চেয়েছেন অনেকেই। কিন্তু ফাঁকায় ফাঁকায় ঠাকুর দেখার কথা ভেবে পথে নামলেও ভিড় ঠেলে মণ্ডপে ঢোকা খুব সোজা হয়নি।
শহরের অধিকাংশ স্কুল-কলেজে শুক্রবারই ছিল পুজোর ছুটির আগে শেষ দিন। তাই এ দিন বিকেলে বিভিন্ন মণ্ডপে ছিল ইউনিফর্ম পরা স্কুল-ফেরত পড়ুয়াদের ভিড়ও। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার একটি মণ্ডপে কলেজছাত্রদের একটি দলকে নিজেদের মধ্যে খুনসুটি করতে দেখা গেল। তাঁদেরই এক জন অরিজিৎ নাগ বললেন, “কলেজ ছুটি হয়ে গিয়েছে। অষ্টমীতে অবশ্য কয়েক জনের সঙ্গে দেখা হবে। তবে ক্লাসের সবার সঙ্গে আড্ডাটা চতুর্থীতেই সেরে নিচ্ছি।’’ কয়েকটি মণ্ডপে অবশ্য কম ছিল না কচিকাঁচাদের ভিড়ও।
শুধু স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারাই নয়, এ দিন বিকেল থেকে ঠাকুর দেখা শুরু করে দিয়েছেন বয়স্করাও। কখনও বা সান্ধ্য আড্ডার বন্ধুদের সঙ্গে, কখনও বা নাতি-নাতনির হাত ধরে। উত্তর কলকাতার একটি মণ্ডপে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েক জন বৃদ্ধ। তাঁরা জানালেন, বছরের অন্য সময়ে পাড়ার চায়ের দোকান বা রোয়াকে বসলেও এ ক’দিন আড্ডা বসবে মণ্ডপ চত্বরেই। আবার বালিগঞ্জের একটি মণ্ডপে ফাঁকায় ফাঁকায় বছর ছয়েকের নাতনির হাত ধরে ঠাকুর দেখা সেরে নিচ্ছিলেন এক বৃদ্ধা।
দর্শনার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়ে গেলেও বিভিন্ন পুজোমণ্ডপে টুকটাক কাজ করতে দেখা গিয়েছে শিল্পী-কারিগরদের। বেলা ১২টা নাগাদ লেকটাউনের একটি পুজোর থিমে ‘ফাইনাল টাচ্’ দিচ্ছিলেন বিহারের মিথিলা থেকে আসা শিল্পীরা। সেখানে তৈরি ঘাসের বুনোটে গড়ে তোলা হচ্ছে মধুবনী শিল্প। শেষ পর্যায়ের কাজ চলেছে মহম্মদ আলি পার্ক-সহ বিভিন্ন নামী পুজোতেও। পুজো উদ্যোক্তাদের দাবি, সামান্য কিছু কাজ বাকি। তবে সন্ধ্যার মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে সব।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই অবশ্য নানা ধরনের আলোকসজ্জা চোখে পড়েছে কলকাতার বহু পাড়ায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় উত্তরের বিবেকানন্দ রোডে সিমলা ব্যায়াম সমিতির পুজোমণ্ডপের সামনে শোনা গিয়েছে রবীন্দ্রসঙ্গীত। শুধু সিমলে পাড়া নয়, পুজোমণ্ডপের লাউডস্পিকারে এ বার রবি ঠাকুরেরই একচ্ছত্র আধিপত্য। এ দিন খুলে গিয়েছে কলেজ স্কোয়ার, মহম্মদ আলি পার্ক, ত্রিধারা সম্মিলনী-সহ বিভিন্ন পুজোমণ্ডপ। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে শুরু করে দর্শনার্থীদের।
পুজো উদ্বোধনের পর থেকেই একাধিক মণ্ডপ চত্বরে খাবারের দোকান-সহ মেলা বসে গিয়েছে। ফুচকা থেকে ভেলপুরি, চাউমিন থেকে পাওভাজি কী নেই। ছোটদের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, দোলনা-সহ নানা রকম মজার রাইডও। তবে সেখানেও কমতি নেই ভিড়ের।
এক দিকে যখন মণ্ডপে মণ্ডপে লাইন দিয়েছেন শহরবাসীদের একাংশ, তখনও কিন্তু অনেকেই ব্যস্ত কেনাকাটায়। শুক্রবার সন্ধ্যাতেও ভিড় ছিল হাতিবাগান, নিউ মার্কেট ও গড়িয়াহাটে। আর এই দু’দিক সামাল দিতে রীতিমতো নাজেহাল হয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের কর্মীরা।
ট্রাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার বিকেলের পর থেকে যানজট শুরু হয় হাতিবাগান, গড়িয়াহাটে। এক পুলিশ অফিসারের ব্যাখ্যা, বাজারের পাশাপাশি ওই অঞ্চলে বেশ কিছু নামী পুজো থাকায় ভিড় হয়েছে অনেক বেশি। তবে যানজটে আটকে থাকলেও ভাটা পড়েনি মানুষের উৎসাহে। |