আক্ষরিক অর্থেই এ হল ঘরে ফেরার ডাক!
বছরের পর বছর এ দেশ থেকে কৃতী পড়ুয়ারা গিয়ে সমৃদ্ধ করছেন ভিন দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে। আর ভারত বঞ্চিত হচ্ছে নিজের ছেলেমেয়ের মেধা থেকে। কিন্তু এ বার স্রোতে উল্টো টান। সম্পদে-ভাবনায়-সুযোগে ভারতও যে গত ক’বছরে অনেক বদলেছে, তা বুঝিয়ে ঘরের ছেলেমেয়েদের ঘরে ফেরানোর ডাক।
এবং এরই পোশাকি নাম ‘ইয়ং ইনভেস্টরস মিট।’ অক্টোবরের ৮ থেকে শুরু করে ১০ তারিখ পর্যন্ত মার্কিন মুলুকের বস্টন শহরে যা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। বিদেশে প্রতিষ্ঠিত এক ঝাঁক তরুণ-তরুণীর সঙ্গে সেখানে মিলিত হবেন এ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক-গবেষক, বিজ্ঞানী, প্রশাসনিক কর্তা ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিভাগের কর্তারা। ওই ছেলেমেয়েদের কাছে তাঁরা শুনবেন, কী ধরনের পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা পেলে ওঁরা দেশে ফিরে কাজ করতে ইচ্ছুক। পাশাপাশি ওঁদের জানাবেন, তাঁরাও ঠিক কী চান।
আর দু’পক্ষের চাহিদা যেখানে এক বিন্দুতে মিলবে, সেখানেই আসবে সাফল্য। প্রবাস ছেড়ে স্বদেশে ফিরবেন কৃতীরা। দু’বছর হল এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। প্রথম বছরে ফিরেছিলেন ২৪ জন। দ্বিতীয় বছরে সংখ্যাটা বেড়েছে। উদ্যোক্তাদের আশা, এ বারেও তাঁরা যথেষ্ট সাড়া পাবেন।
গোটা ভাবনাটার পিছনে যিনি রয়েছেন, তিনি এক বঙ্গসন্তান। আদতে নদিয়ার কল্যাণীর বাসিন্দা সেই শিলাদিত্য সেনগুপ্ত বর্তমানে হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের রিজেনারেটিভ মেডিসিনের চিকিৎসক। তাঁর কথায়, “বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ভারত এখনও পিছিয়ে। কেন্দ্রীয় সরকারও এখন সেটা বুঝতে পেরে সুযোগ-সুবিধা বাড়াচ্ছে। গবেষণায় উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। সেরাদের পাওয়ার ব্যাপারে সরকারি তরফে আগ্রহ বাড়লে কৃতীরাও বেশি সংখ্যায় ফিরতে আগ্রহী হবে।” কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের এক কর্তাও বলেন, “এ ভাবে ভাল ছেলেমেয়েদের মধ্যে দেশে ফেরার প্রবণতা বাড়তে থাকলে তা ভবিষ্যতের পক্ষে খুবই আশাব্যঞ্জক।”
বস্টনে প্রথম বারের ‘ইয়ং ইনভেস্টরস মিট’-এ যোগ দিতে চেয়ে শ’চারেক আবেদন জমা পড়েছিল। বিশ্বের নানা দেশ থেকে ভারতীয় বিজ্ঞানী, চিকিৎসক-গবেষকরা এসেছিলেন। অনুষ্ঠানের প্রথমে ভারতের বিভিন্ন গবেষণা ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারেরা জানান, এ দেশে থেকে কী ভাবে ভবিষ্যৎ গড়তে পারবেন নবীন পড়ুয়ারা। তার পরে সরকারি প্রতিনিধিরা বলেন, তাঁরা ঠিক কোন কোন দিকে কী কী সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে পারবেন। পরের ধাপে প্রবাসী ভারতীয় চিকিৎসক-গবেষকেরা জানান তাঁদের ভাবনার কথা। কী ধরনের পরিবেশে কেমন গবেষণাগারে কাজ করা যাবে, অনুদান কতটা মিলবে, কাজের স্বাধীনতা কতটা থাকবে এ সব বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। পরের দু’দিন ধরে চলে সেই সংক্রান্ত কর্মশালা। শেষে দু’দিকের প্রতিশ্রুতি ও প্রত্যাশা মিলে গেলে তৈরি হয় নতুন যাত্রাপথ।
সেই পথেই যাত্রা করেছেন ঋতুপর্ণা সিংহরায় বা সুদীপ্ত বসুরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ঋতুপর্ণা ছিলেন হার্ভার্ডের কৃতী গবেষক। গত বছর তিনি যোগ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার)-এ। প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী সুদীপ্ত বসু আইআইটি কানপুর থেকে গিয়েছিলেন হার্ভার্ডে। স্বদেশে ফিরে গত এক বছর ধরে তিনিও আইসারে। ফেরার সিদ্ধান্তটা যে সঠিক ছিল, সে ব্যাপারে ওঁদের কারও দ্বিমত নেই।
তৃতীয়, তথা চলতি বছরের ‘ইয়ং ইনভেস্টরস মিট’-এ পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমন্ত্রিত হয়েছেন এসএসকেএমের স্কুল অফ লিভার ডিজিজেস-এর কর্ণধার অভিজিৎ চৌধুরী। সম্মেলনে রাজ্যের ছবিটা তিনিই তুলে ধরবেন। অভিজিৎবাবুর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গও অনেক এগোচ্ছে। এখানে বিশ্বমানের গবেষণাগার হচ্ছে। বিজ্ঞানী- গবেষকদের দিকে এ রাজ্যও যে হাত বাড়িয়ে রয়েছে, সেই বার্তা ছড়ানোর জন্য এমন একটা আন্তর্জাতিক মঞ্চ খুবই জরুরি।” |