ইউরোপের বাইরে প্রথম
রয়্যাল সোসাইটির অনন্য সম্মান
বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্রকে


ন্মের দেড়শো বছরে যিনি প্রায় বিস্মৃতির অতলে, সেই জনদরদী বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়কে কুর্নিশ জানাচ্ছে ব্রিটেনের রয়্যাল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রি (আরএসসি)। ভারতের রসায়ন গবেষণার জনককে তারা ভূষিত করছে এমন এক সম্মানে, যা পাননি ইউরোপের বাইরে আর কোনও রসায়নবিদ।
কী সেই সম্মান?
আরএসসি-র সিইও রবার্ট পার্কার কলকাতায় ঘোষণা করে গেলেন, তাঁরা আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রকে সম্মান জানাবেন ‘কেমিক্যাল ল্যান্ডমার্ক প্লাক’ দিয়ে। প্রাতঃস্মরণীয় বিজ্ঞানীর নামে ওই স্মৃতিফলক আরএসসি-র তরফে বয়ে আনা হবে কলকাতায়। ফলকটি কোথায় বসানো হবে, তা এখনও চূড়ান্ত না-হলেও মোটামুটি ইঙ্গিত মিলেছে যে, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ই হবে তার উপযুক্ত স্থান। কারণ, তদানীন্তন প্রেসিডেন্সির অপরিসর ল্যাবরেটরিতে বসেই অত্যাধুনিক রসায়ন গবেষণা করেছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র।
বুধবার ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স-এ আয়োজিত এক আলোচনাচক্রে রয়্যাল সোসাইটির এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে পার্কার বলেন, “এটা তাঁর অবদানের প্রতি আমাদের ক্ষুদ্র সম্মানজ্ঞাপন। ঘোষণাটি করতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমাদের তরফে ইউরোপের বাইরে কোনও বিজ্ঞানীকে এমন সম্মান এই প্রথম।”
বস্তুতই ‘কেমিক্যাল ল্যান্ডমার্ক প্লাক’ আরএসসি দিয়ে থাকে রসায়ন গবেষণায় ‘অসামান্য অবদানের’ স্বীকৃতি হিসেবে। এর আগে লন্ডনের কিংস কলেজকে তা দেওয়া হয়েছে। কারণ, ওখানেই আবিষ্কৃত হয়েছিল ডিএনএ-র গঠন। আবিষ্কর্তা ছিলেন রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিন। ক্যানসারে মারা যাওয়ার কারণে যিনি নোবেল পুরস্কার পাননি। তা পেয়েছিলেন অন্য তিন বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন, ফ্রান্সিস ক্রিক এবং মরিস উইলকিন্স।
রয়্যাল সোসাইটির তরফে প্রাতঃস্মরণীয় বিজ্ঞানীকে এই অভিনব উপায়ে সম্মানজ্ঞাপনে প্রচণ্ড খুশি কাল্টিভেশনের বিজ্ঞানী অনিমেষ চক্রবর্তী। বৃহস্পতিবার আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, “আচার্যের অবদানকে এত শীর্ষে স্থান দেওয়ায় আরও এক বার প্রমাণিত হল, রসায়ন গবেষণায় তাঁর অবদান কতটা। ভেবে আশ্চর্য হচ্ছি যে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আচার্যকে এ ভাবে সম্মান জানানো হলেও আমাদেরই সতীর্থ কিছু বিজ্ঞানী তাঁর কাজ সংক্রান্ত দাবিকে নস্যাৎ করে নিজেদের পাণ্ডিত্য জাহির করেছেন!”
অনিমেষবাবুর মন্তব্যের লক্ষ্য অবশ্যই মারকিউরাস নাইট্রাইট প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্রফুল্লচন্দ্রের দাবি ঘিরে সৃষ্ট বিতর্ক। প্রফুল্লচন্দ্র তৈরি করতে গিয়েছিলেন মারকিউরাস নাইট্রেট। কিন্তু আচমকা পেয়ে যান মারকিউরাস নাইট্রাইট। মারকিউরাস নাইট্রাইট এমন এক যৌগ, আপাতদৃষ্টিতে যা প্রস্তুত অসম্ভব। অথচ প্রফুল্লচন্দ্র তা করে ফেলায় আন্তর্জাতিক রসায়নবিদ-মহলে প্রবল আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু গত ২৫ বছর ধরে দু’-এক জন গবেষক দাবি করে আসছেন যে, প্রফুল্লচন্দ্র বাস্তবে ওই যৌগটি প্রস্তুত করতে পারেননি। তিনি নিজের সাফল্য সম্পর্কে ভুল ভেবেছিলেন বলে ওঁদের অভিমত।
আর এ হেন বক্তব্যকেই সম্প্রতি নস্যাৎ করেছেন অনিমেষবাবু এবং কাল্টিভেশনের আরও দুই গবেষক সুভাষ সামন্ত ও শ্রীব্রত গোস্বামী। ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ কেমিস্ট্রি-তে সম্প্রতি প্রকাশিত এক নিবন্ধে ওঁরা দেখিয়েছেন, মারকিউরাস নাইট্রাইট প্রস্তুত সম্ভব। অর্থাৎ, প্রফুল্লচন্দ্রের দাবি আদৌ ভ্রান্ত ছিল না।
অনিমেষবাবু জানালেন, এর আগে চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমনের আবিষ্কারকে সম্মান জানাতে আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি-র তরফেও দেওয়া হয়েছিল বিশেষ এক সম্মানফলক। সি ভি রমন যে হেতু কাল্টিভেশন অফ সায়েন্সে তাঁর গবেষণাটি করেন, সে জন্য সম্মানফলকটি সেখানেই বসানো হয়েছে। বুধবার কাল্টিভেশনে আয়োজিত আলোচনাচক্রের উদ্যোক্তা ছিল কলকাতার ব্রিটিশ হাইকমিশন। সেখানকার বিজ্ঞানী সুব্রত ঘোষ জানান, অনুষ্ঠানের লক্ষ্য ছিল, রয়্যাল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রি প্রকাশিত বিভিন্ন জার্নালের আকর্ষণ বৃদ্ধি। এবং প্রফুল্লচন্দ্রকে বিশেষ সম্মানজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার জন্য সেই অনুষ্ঠানকেই বেছে নিয়েছেন পার্কার।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.