ঝাঁ চকচকে রাস্তার নিয়ন আলোর নিচে অন্ধকারে তৃতীয় সড়কের পাশে অবহেলিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে জগন্নাথ ঘাট। মহালয়ার সকালে ওই ঘাটে পিতৃ তর্পণ করতে ভাগীরথীর জলে নেমেই ক্ষোভ উগরে দেন কাদাই এলাকার বাসিন্দা অনন্ত সিংহ। তাঁর কথায়, “ভাগীরথীর পাড় বরাবর যে ঘাটগুলি রয়েছে, সংস্কারের অভাবে তা নষ্ট হতে বসেছে। কিন্তু পুরসভা বা প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। পিতৃতর্পণ করতে এসে পা হড়কে জলে তলিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছিল।”
শুধু জগন্নাথ ঘাট নয়, ফরাসডাঙা থেকে গোরাবাজার শ্মশানঘাট পর্যন্ত ভাগীরথীর পাড় বরাবর প্রায় ১৫-২০টি ছোট-বড় ঘাট রয়েছে। তার মধ্যে রাধারঘাট, গোপাল ঘাট, নিয়াল্লিশপাড়া ঘাট, সৈয়দাবাদ বিশ্রাম ঘাট, জঙ্গলিয়ানাথ বা শিবমন্দিরের স্নানঘাট, কৃষ্ণনাথ কলেজ ঘাটের মত ঘাটগুলিতে পিতৃতর্পণের জন্য মঙ্গলবার সকালে কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করেছিলেন, তাঁদের প্রায় সকলের অভিজ্ঞতায় অত্যন্ত করুণ। |
এদিন যাঁরা ভাগীরথীর বিভিন্ন ঘাটে পিতৃ তর্পণের জন্য জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই আবার বছরের এই একটি দিনই পিতৃ তর্পণ করতে ভাগীরথী জলে স্নানে আসেন। ফলে অনভ্যস্ত হওয়ার কারণে বিভিন্ন ঘাটের এবড়ো-খেবড়ো ভাঙা সিঁড়ি দিয়ে জলে নামতে গিয়ে অসতর্ক মুহূর্তে পা হড়কে পড়ে গিয়ে জখম হওয়ার ঘটনাও ঘটে। কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সোমেশ রায় বলেন, “বিভিন্ন স্নান ঘাটে মাটির সরা থেকে ধুনুচি, নারকেল, পুজোর ফুল পড়ে থাকে। আর স্নান ঘাট লাগোয়া পাড়ের নোংরা পরিবেশের কথা যত কম বলা যায়, ততই ভাল। বছর খানেক আগে পিতৃতর্পণ করতে কলেজ ঘাটে নেমে মাটির সরাতে পা কেটে গিয়ে সেলাই করার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তার পর থেকে পিতৃ তর্পণ করতে ঘাটে যাওয়া বন্ধ করেছি।”
এদিকে জগন্নাথ ঘাটে যেমন বস্তিবাসী ও হাসপাতালের রোগীর বাড়ির সদস্যরা ঘাট লাগোয়া ভাগীরথীর পাড়ে নোংরা-আবর্জনা ফেলায় স্নান করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তেমনি ব্রীজ ঘাটের বিভিন্ন অব্যবস্থায় এলাকাবাসী ভীষণ ক্ষুব্ধ। একই ভাবে মহালয়ার সকালে পিতৃ তর্পণ করতে সৈয়দাবাদ বিশ্রাম ঘাটে ভাগীরথীর জলে নেমেই ক্ষোভ উগরে দেন সৈয়দবাদ এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব রবীন সাহা বলেন, “নিয়মিত ভাগীরথীর ঘাটে স্নান করতে যাওয়ার অভ্যাস আমার নেই। মহালয়ার সকালে পিতৃতর্পণ করতে ভাগীরথীর ঘাটে যাওয়া। কিন্তু ঘাটের যা পরিস্থিতি তাতে একটু অসতর্কতায় যে কোনও সময়ে বড় ধরণের বিপদ ঘটে যেতে পারে। এমনিতেই ঘাটের চারপাশে নোংরা-আবর্জনায় ভরে রয়েছে। ঘাট স্নান করতে নেমে দুর্গন্ধে টেকা যায় না। সেই সঙ্গে ভাঙাচোরা সিঁড়িতে সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে হচ্ছে।”
এমনিতেই ঘাটগুলিতে নিত্য দিনের পুজোর ফুল-বেলপাতা, নারকেল, মাটির সরা থেকে পুজোর যাবতীয় উপকরণ পড়ে থাকে। তার মধ্যে এখন ভাগীরথীর জল নেমে যাওয়ায় ভেঙে যাওয়া সিঁড়িগুলি অনেক ঘাটেই জেগে রয়েছে। স্নান ঘাটের কাছেই জল-কাদায় মাখামাখি অবস্থা। অনেকটা নেমে স্নান করতে জলের গভীরে গেলেই পা পড়বে এলোমেলো বোল্ডারে। সেই সঙ্গে জলের মধ্যে খড়-ফুল পড়ে থাকার পাশাপাশি তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোয় ঘাটগুলি স্নানের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে ঘাটের সৌন্দর্যায়নও নষ্ট হচ্ছে বলেও অভিযোগ। এ ব্যাপারে পুরসভা ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও বহরমপুরবাসীর মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য বলেন, “মহালয়া উপলক্ষে ঘাট পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করার কথা আগে কখনও হয়নি। এখনও হয় না। কেউ কোনও দিন এ নিয়ে প্রশ্নও তোলেনি। তবে বিসর্জনের আগে বিভিন্ন ঘাট পুরসভার তরফে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।” নীলরতনবাবু বলেন, “জলের তলায় কংক্রীটের ঢালাই ও স্নানের ঘাটে বোল্ডার সাজানোর কাজ সেচ দফতরের। এমনকী ভাগীরথীর পাড়ে কোনও ভাঙন হলেও তা দেখার দায়িত্ব সেচ দফতরের। আমরা শুধু পাড়ে আলো রয়েছে কিনা এবং পাড়ের দূষণ রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি।” |